বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন অভিযোগ করে বলেছেন, সড়ক পরিবহন খাতে দিনে ১১ কোটি টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে শ্রমিক লীগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে হানিফ খোকন বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন মালিকদের সঙ্গে আঁতাত করে দিনে ১১ লাখ গাড়ি থেকে ১১ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে। সে হিসাবে বছরে সড়কে ৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা চাঁদা আদায় হয়।
শ্রমিক লীগ সভাপতি জানান, এ সব বিষয়ে আমাদের ১২ দফা দাবি রয়েছে। সেগুলো আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে মেনে নেওয়া না হলে, ওই দিন পরবর্তী কর্মসূচি জানানো হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন নামে শ্রমিকদের ফেডারেশন হলেও তা মূলত মালিকদের সমিতি। ওই ফেডারেশন ১০টি দাবি করলে ৮টি দাবিই থাকে মালিকদের। ফেডারেশনের নেতারা মালিক সমিতির সঙ্গে আঁতাত করে শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজির নির্দেশিকা তৈরি করে।
পরিবহন সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকরা একটি মাফিয়া চাঁদাবাজ চক্রের হাতে নির্যাতিত। শ্রমিকদের শোষণ করে চাঁদাবাজরা শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। রাজধানীর চারটি বড় টার্মিনালসহ দেশের প্রতিটি টার্মিনালের শ্রমিকরা এ মাফিয়া চক্রের হাতে জিম্মি। এরা সড়ক মহাসড়কে চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে নিজেদের প্রাসাদ-প্রতিপত্তি গড়ে তুলছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের বলতে চাই, পরিবহন শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নে ব্যর্থতার দায় নিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন থেকে বিদায় নিন। অথবা সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়ন ও শ্রম আইন অনুযায়ী নিয়োগপত্র প্রদানসহ পরিবহন শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে প্রকৃত অর্থে ট্রেড ইউনিয়নে ফিরে আসুন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রমিক বান্ধব সরকার যে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা, শ্রম আইন অনুযায়ী নিয়োগপত্র প্রদান ও পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধসহ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের ঘোষিত ১২ দফা দাবি বাস্তবায়নে পরিবহন সেক্টরের সব শ্রমিক ও মালিক সংগঠনগুলোর সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি।
দাবিগুলো হচ্ছে— সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের স্ব স্ব মালিক কর্তৃক বাস, ট্রাক চালকদের নিয়োগপত্র প্রদান করা, প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মাসিক বেতন প্রদান ও ৮ কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করা, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ও কর্মচারীদের মালিক কর্তৃক খোরাকি, চিকিৎসা ভাতা এবং ২ ঈদ ও পূজায় উৎসব বোনাস প্রদান করা, পরিবহন সেক্টরে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রের বেআইনিভাবে চাঁদা আদায়ের নির্দেশিকা তৈরি করে পরিবহন সেক্টরে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যানজট নিরসন ও সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে মেয়াদোত্তীর্ণ সব প্রকার ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করা, শরীয়তপুর-হরিনাঘাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, মাওয়া-কেওড়াকান্দীসহ বিভিন্ন ফেরিঘাটে বাস, ট্রাক, কভার্ডভ্যান সিরিয়ালের নামে অবৈধ চাঁদা আদায় বন্ধ করা।
দাবিগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে, ফেরিঘাটে যানজট নিরসনে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা, বিআরটিএতে পরিবহন চালকদের লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে রি-টেস্ট প্রথা বাতিল ও পরিবহন শ্রমিকদের সহজ পদ্ধতিতে লাইসেন্স প্রদান করা, হাইওয়ে সড়কে ট্রাক-ট্যাংকলরি ও কভার্ড ভ্যানের উপর অহেতুক পুলিশের হয়রানি বন্ধ এবং মানিকগঞ্জ, সীতাকুণ্ড, কুমিল্লা ময়নামতি, দাউদকান্দিসহ বিভিন্ন মহাসড়কে ওয়ে স্কেল (ওভার লোডিং) এর নামে বিনা রশিদে টাকা আদায় বন্ধ করা।
ইউকেবিডিটিভি/ বিডি / এমএসএম