মানুষের জীবনে প্রাথমিক শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। শিশুকালের সেই নিষ্পাপ দিনগুলোতে শিক্ষা কেবল পুঁথিগত জ্ঞানে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং গড়ে তুলেছে মূল্যবোধ, চরিত্র, এবং মানবিকতা। আমার জীবনের সেই ভিত্তি গঠনের পেছনে যে মহান মানুষের নিঃস্বার্থ শ্রম আজও আমার মনে চিরকাল গেঁথে আছে, তিনি হলেন মরহুম মনির উদ্দিন চৌধুরী স্যার।
মনির উদ্দিন স্যারের গ্রামের বাড়ি ছিল আগনসী। কিন্তু তাঁর হৃদয়ের বিশালতা ছড়িয়ে ছিল আমাদের সীতাশ্রী গ্রাম জুড়ে। তিনি ছিলেন আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে তিনি কেবল পাঠ্যবই পড়িয়ে দায় শেষ করেননি—তিনি আমাদের মানুষ করে তোলার ব্রত নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন।
আমি নিজে স্যারের রাগ, শাসন, ভালোবাসা সবকিছুরই প্রত্যক্ষ সাক্ষী। ছোট্ট আমি হয়তো বুঝতাম না, কেন তিনি আমাদের ওপর এত রাগ করতেন, কেন শাসন করতেন। আজ উপলব্ধি করি, সেই রাগ ছিল স্নেহের রূপান্তর, আর সেই শাসন ছিল শৃঙ্খলার পাঠ। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিকড় যত গভীর হবে, গাছ তত দৃঢ় হবে। তাই আমাদের শিক্ষা শুধু শ্রেণিকক্ষে সীমাবদ্ধ ছিল না—তিনি চরিত্র গঠনের দিকেও সমান গুরুত্ব দিতেন।
স্যার আমাদের পিছনে যে শ্রম দিয়েছেন, তা ছিল নিঃস্বার্থ এবং নিঃশর্ত। একমাত্র একজন প্রকৃত শিক্ষকই পারেন এমন আত্মত্যাগ করতে। জীবনের বহু বাঁকে তিনি আমার মনের ভিতর জেগে উঠেছেন—একটি কঠিন মুহূর্তে যেন তাঁর কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, “রুমেল, চেষ্টা করো, তুমি পারবে।”
আজ আমি যে অবস্থানে আছি, তার পেছনে স্যারের অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তিনি শিখিয়েছেন কিভাবে হতে হয় একজন সৎ, পরিশ্রমী ও নীতিবান মানুষ। তাঁর পরিশ্রমের প্রতিদান আমি কোনো দিন শোধ করতে পারবো না—এটাই জীবনের এক অপূর্ণ ঋণ, যা কেবল কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করা যায়।
শিক্ষকদের সম্মান জানানো মানে নিজের শিকড়কে শ্রদ্ধা জানানো। তাই আজ এই লেখার মাধ্যমে আমি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি সেই মহান শিক্ষককে—মরহুম মনির উদ্দিন চৌধুরী স্যার, যিনি শুধু শিক্ষক নন, ছিলেন একজন সত্যিকারের মানুষ গড়ার কারিগর।
শেষ কথা:
যতদিন বেঁচে থাকি, ততদিন এই মানুষটির স্মৃতি আমার হৃদয়ে অম্লান থাকবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যদি এমন একজন শিক্ষক পায়, তবে তাদের জীবনের ভিত্তিও হবে সুনির্মিত ও দৃঢ়।
পরিশেষে, মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি—আল্লাহ যেন মরহুম মনির উদ্দিন চৌধুরী স্যারের রুহকে মাগফিরাত দান করেন এবং জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করেন। আমিন।