নবীগঞ্জের এক নতুন পরিবেশের সাথে দুইদিন ধরে বসবাস যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক ১০। গ্রেফতার আতঙ্কে জন শুন্য নবীগঞ্জ শহর। সকাল থেকে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের যৌথ টহল চলছে। শহরে সুনশান নীরবতা। সব দোকান পাট বন্ধ, কেনা বেচা নেই শহরে। জন শুন্য নবীগঞ্জ শহরসহ ৭টি গ্রামের মানুষ। পুর্ব তিমিরপুর,পশ্চিম তিমির পুর, চরগাও, আনমনু, রাজাবাদ, নোয়াপাড়া ও পিরিজপুর এসব গ্রামে যৌথবাহিনী অভিযান দিয়ে এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে আটক করেছে। এঘটনায় এখনও মামলা হয়নি।
সংঘর্ষের সময় নবীগঞ্জ শহরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে অগ্নিকান্ডে অন্তত ২০ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ১৪৪ ধারা বর্ধিত করা হয়েছে। ঘটনা নিস্পত্তির জন্য্য বুধবার দুপুরে শহরের বাহিরে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সুত্র জানায়, নবীগঞ্জে ১৪৪ ধারা ভেঙে চার গ্রামের হাজারো মানুষের সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে অন্তত ৫০টি দোকান এবং একটি বেসরকারি হাসপাতাল ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দাবি, এ ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে সোমবার (৭ জুলাই) বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার মধ্যে। এতে অংশ নেন উপজেলার পুর্ব তিমিরপুর,পশ্চিম তিমির পুর, চরগাও, আনমনু, রাজাবাদ, নোয়াপাড়া ও পিরিজপুরের মানুষ।
নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জের মনসুর পুর গ্রামের সাংবাদিক আশাহিদ আলী আশার সঙ্গে পূর্ব তিমিরপুরের সাংবাদিক সেলিম তালুকদারের দীর্ঘদিনের বিরোধ থেকেই এ উত্তেজনার সুত্রপাত হয়।এর জেরে পুর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, দুপুরের পর গাজীরটেক পয়েন্টে মুখোমুখি হয় দুপক্ষ। পরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে গাজীরটেক, মৎস্যজীবী পাড়া, চরগাঁও ও পশ্চিম বাজার এলাকাসহ সারা নবীগঞ্জ শহরে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সোমবার বিকেল ৪টার দিকে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমীন ১৪৪ ধারা জারি করেন মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত। পরে আবার সময় বর্ধিত করা হয়। বুধবার রাত ১২ টা পর্যন্ত করা হয়। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা মোতায়েনের পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সংঘর্ষে নিহত হন তিমিরপুর গ্রামের ফারুক মিয়ার (৪৫) জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার দুপুরে ঘটনা নিস্পতির জন্য নবীগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ও রাজনৈতিক নেতারা শহরে ১৪৪ ধারা জারি থাকায় আউশকান্দি বাজার হাফিজিয়া মাদ্রাসায় এক সালিশ সভায় বসেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজীরটেক, মধ্যবাজার, মাছবাজার, হাসপাতালসংলগ্ন এলাকা এবং হবিগঞ্জ নবীগঞ্জ রোডের সিএনজি স্ট্যান্ড। হামলায় অন্তত ৫০টির বেশি দোকানে ভাঙচুর, ১০টির বেশি দোকানে অগ্নিসংযোগ এবং ইউনাইটেড হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে লুটপাট চালানো হয়।
ইউনাইটেড হাসপাতালের মালিক মাহবুবুল আলম সুমন বলেন, তিমিরপুরের কিছু লোক সংঘর্ষের সময় হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিল। প্রতিপক্ষ এসে সেখানেও হামলা চালায়, মারধর করে। অপারেশন থিয়েটারে আগুন দেয়, এক্সরে, আল্ট্রাসাউন্ড, হরমোন এনালাইজারসহ উন্নত যন্ত্রপাতি লুট করে। তিনি জানান, শুধু হাসপাতালেই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ কোটি টাকা। মধ্যবাজারে আগুনে পুড়ে যায় হাসেমবাগ হোটেল।
হাসেমবাগ হোটেল মালিক মোশাহিদ আলম মুরাদ ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এখনও হিসাব করেননি কবে অপুরনীয় ক্ষতি হয়েছে ঐতিহ্যবাহী হোটেলে। আল নোহা হোটেলের মালিক সাজু আহমেদ জানান, কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার সময় হঠাৎ হামলা হয়। দোকান ভাঙচুর ও লুটে আমি নিঃস্ব,—এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ব্যবসায়ী নেতা সুমন বলেন, এ হামলা পরিকল্পিতভাবে চালানো হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটির কম হবে না। দ্রæত জড়িতদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
তবে নবীগঞ্জ ইউএনও মো: রুহুল আমীন জানান, প্রাথমিক হিসেবে ২৫টির বেশি দোকান ভাঙচুর ও অন্তত ১০টি দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অধিকাংশ দোকান ছিল মুদি ও নিত্যপণ্যের। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।ইউএনও বলেন, সেনা মোতায়েন ও অতিরিক্ত পুলিশ দায়িত্বে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।
হবিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ঘটনার সময় আমাদের তিনটি ইউনিট কাজ করেছে। কর্মীরা জীবন ঝুঁকি নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালান। কিছু দোকান রক্ষা পেলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নবীগঞ্জ শহর পরিদর্শনে মনে হয়েছে, ‘যেন কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত ধ্বংসস্তূপ দেখছি।