নবীগঞ্জে যে কোন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে গোষ্টিগত দ্বন্দ্ব ও হতাহতের ঘটনা থামছে না। নবীগঞ্জে এর আগে খুনাখুনি ও ধাঙ্গা হয়েছে কয়েক দফা । বিগত ২৫ বছরের এনিয়ে ৪ বার গোষ্টিগত বড় ধরনের দ্বন্দ্ব হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন কয়েক শতাধিক মানুষ। ২৫ বছরে খুন হয়েছেন দুই জন আহত ও পঙ্গু হয়েছেন অনেকে।
এদিকে সোমবার (৯ জুলাই) সংঘাতটির সূচনা হয় স্থানীয় দুজন গণমাধ্যমকর্মীর বিরোধ থেকে। পরে তা এলাকাভিত্তিক দুই সম্প্রদায়ের গোষ্টিগত দ্বন্দ্বের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে জড়ানো এ সংঘাতে প্রাণ হারান ১জন, আহত হয় শতাধিক ব্যক্তি। সংঘর্ষকালে শহরে বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এখন পর্যন্ত এঘটনায় ৭জনকে আটক করা হয়েছে। এখনও কোন পক্ষ নবীগঞ্জ থানায় মামলা দেয়নি। ঘটনার পর শহরে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকাল ৫ টা ৪০ মিনিটে নিহত ফারুক মিয়া তালুকদারের জানাজার নামাজ তিমিরপুর প্রাইম্রাী স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায় প্রথম খুনের ঘটনা ঘটে ২০০১ সালে, নবীগঞ্জ শহরে সাম্প্রদায়িক ধাঙ্গায় তছকির নামে একজন হত্যা করা হয় আহত হন অনেকে। এর পর দ্বিতীয় ঘটনা ২০১৪ সালে শহরের সিএনজি ষ্টেশন নিয়ে আবার বড় ধাঙ্গা হয়। তৃতীয় ঘটনা হয় ২০২৪ সালে নবীগঞ্জ শহরে রাজা কমপ্লেক্সে ভাংচুর নিয়ে এতে শতাধিক লোক আহত হয়। সর্বশেষটি ২০২৫ সালের ৭জুলাই সোমবার ঘটনায় শতাধিক আহত ও ২জন নিহত হয়েছে। ২৫ বছরে ব্যবধানে ঘটা এসব খুন হতাহতের নেপথ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তার ও গোষ্টিগত দ্বন্দ্ব এর জের। এর পাশাপাশি জমিজমা নিয়ে বিরোধ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, পারিবারিক কলহসহ নানা তুচ্ছ কারণেও ঘটছে খুনোখুনি।
পুলিশের হিসাবে, গত ২৫ বছরে এ জেলায় খুন হয়েছেন তিনজন ও আহত হয়েছে কয়েকশত মানুষ।
অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, নবীগঞ্জে এসব গোষ্টিগত দ্বন্দ্বে ২ জনই খুন হয়েছেন অমৎস্যজীবি পরিবারের সদস্য একজন হলেন তছকির আলী চরগাঁও গ্রামের বাসিন্ধা ও গতকাল যিনি নিহত হয়েছেন তিনি হলেন ফারুক মিয়া তালুকদার পুর্ব তিমিরপুর গ্রামের বাসিন্ধা। তাঁরা বলেন, রাজনৈতিক কোন্দল ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায় এই দুই গোষ্টির মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। কয়েক বছর পরেই দ্বন্দ্ব বড় আকার ধারন করে।
এসব খুনের নেপথ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারের জের। এর পাশাপাশি জমিজমা নিয়ে বিরোধ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, পারিবারিক কলহসহ নানা তুচ্ছ কারণেও ঘটছে খুনোখুনি ও সংঘর্ষ হরহামেশাই হচ্ছে।।
গত ৬ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, হবিগঞ্জ জেলায় নবীগঞ্জ প্রতিবছর বড় ধরনে সংঘর্ষ হয়। একজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করে বলেন, এসব খুনের নেপথ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারের জের। এর পাশাপাশি জমিজমা নিয়ে বিরোধ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, পারিবারিক কলহসহ নানা তুচ্ছ কারণেও ঘটছে খুনোখুনি ও সংঘর্ষ হরহামেশাই হচ্ছে।।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা সদরের মানুষের কাছে গতকাল সকালটা ছিল নতুন অভিজ্ঞতার দিন। শহরের প্রধান সড়কজুড়ে ছিল ধ্বংসের স্তূপ। দেখে মনে হয়, শহরটির ওপর দিয়ে বয়ে গেছে বড় ধরনের এক ঝড়। উপজেলা সদরের দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনার পর এমন দৃশ্য দেখা গেছে শহরটিতে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কিছু দিন ধরে দৈনিক আলোকিত সকাল পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি আশাইদ আলী আশা ও হবিগঞ্জের সময় পত্রিকার প্রকাশক ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সেলিম তালুকদারের মধ্যে পেশাগত ও প্রেসক্লাব নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। এ নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করছিলেন আশাইদ আলী আশা ও সেলিম তালুকদার তার পত্রিকায় নিউজ করেন। আশাইদ আলী আশাকে ৪ জুলাই নবীগঞ্জ উপজেলা সদরের মধ্যবাজারে একটি বিপণিবিতানের সামনে পেয়ে তিমিরপুর গ্রামের বাসিন্দা ও গণমাধ্যমকর্মী সেলিম তালুকদারের শ্যালক ফারছু তালুকদার পকথা কাটাকাটি করে এক পর্যায়ে তার লোকজন আশাইদ আলীকে মারধর করেন বলে অভিযোগ।
সংঘাতটির সূচনা হয় স্থানীয় দুজন গণমাধ্যমকর্মীর বিরোধ থেকে। পরে তা এলাকাভিত্তিক দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার সকালে শহরের মধ্য বাজার থেকে উপজেলা সদরে মুখোমুখি হয় দুই পক্ষ। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। শতাধিক মানুষ আহত হন। তিমিরপুর গ্রামের ফারুক তালুকদার নিহত হন সংঘর্ষে। ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দোকানপাট, হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ নানা প্রতিষ্ঠান। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাতেই জারি হয় ১৪৪ ধারা, যা মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছেন নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন।
মঙ্গলবার সকালে নবীগঞ্জ শহরে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। সকাল ১০টার দিকে মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে কয়েকজন ব্যবসায়ী সড়ক থেকে ভাঙা দোকানের ধ্বংসাবশেষ সরাচ্ছিলেন।
এ সময় নবীগঞ্জ হাইস্কুলের সামনে মুদি ব্যবসায়ী রিন্টু দাশ বলেন, ‘আমি গরীব মানুষ,ঐ ঘঠনার সাথে জড়িত নয়। তবু আমার ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে ’
নিহত ফারুকের চাচা সাবেক পৌর কাউন্সিলর আলাউদ্দিন বলেন, ‘এ সংঘর্ষের কারণে আমাদের গ্রামের আমার আত্বীয় ভাতিজা ফারুক প্রাণ হারিয়েছে। এমন মৃত্যু কারও কাম্য নয়। সবাই একটু সংযত থাকলে হয়তো এ সংঘাত এড়ানো যেত।’ তিনি জানান, সংঘাত এখন দুই সম্প্রদায়ে রূপ নিয়েছে য়ে কোন মুহুর্তে ভয়াবহ হতে পারে ।
নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও নবীগঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ছাবির আহমেদ চৌধুরী বলেন, সংঘর্ষে নবীগঞ্জ শহরের দেড় শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। হাসপাতাল-ক্লিনিকও রক্ষা পায়নি। অনুমান ১৫/২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসন সংঘর্ষের প্রায় এক ঘণ্টা পর ১৪৪ ধারা জারি করে। আগে করলে হয়তো এত বড় ক্ষতি হতো না।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে এখনো কেউ অভিযোগ করেননি। তবে আমরা আমাদের মতো করে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি। এ ঘটনায় সাতজনকে আটক করা হয়েছে।’ নবীগঞ্জ থানার পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় মামলা হওয়ার প্রস্তুতি চলছে। সেনাবাহিনী তাদের কাছে ৭জনকে ধরে হস্তান্তর করেছে। এখন ৭জনের নাম বলা যাবে না।
হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার এমএন এস সাজেদুর রহমান বলেন, একজন মারা গেছে আমরা তার লাশ উদ্ধার করেছি। আর কোন লোক মরা যায়নি।
এদিকে নবীগঞ্জের মারামারির ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে এর মধ্যে আনমনু গ্রামের রিমন নামে একজন মারা যাওয়ার খবর ফেসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। রিমন মিয়াকে আশংকাজন অবস্থায় সোমবার বিকালে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন।
সিলেট এমজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক, ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী নিশ্চিত করেছেন রিমন মিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়নি। সে আইসিইউতে আশংকাজনক অবস্থায় রয়েছে। রোগির অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন।