ঊনপঞ্চাশ বাতাস এবং আশেপাশের ঝড়
________________________________
ক )
এ্যাতটা ঝুঁকে দেখছো ;
ও লজ্জা পাবেই পাবে ! কেউ নয় , মেয়ে মানুষটা অমুক কালের ধর্ষিত দু’পাতার দীর্ঘ কবিতা ! বহুকালের অসম ধাক্কায় অসহায় লাগে অতলের প্রতীক্ষিত পঞ্চশ
নারী জঠরের ভেতর শরীর লুকানো আদীম বিস্ফোরণ আমার নীলকালির কলম এবং দুধ সাদা পৃষ্ঠায় প্রতিরাতের স্পর্শকাতরতা —-
তুমি কী অক্ষরপ্রাণ শব্দ যুবক ; ডাকপুরুষের পদশব্দে মলাট ছিঁড়ে বেরিয়ে আসো লিটল ম্যাগের গভীর প্রত্যাশায় !
খ )
এই তো ছুঁলাম কৃষ্ণকলীর কাম – কামীনি ঠোঁট ….. সমস্ত রাতের নির্ঘুম বিচ্ছিরি অসুখ
এবং অতোঃপর অতলান্ত রোগে ভেতর – বাহির মননের প্রশস্ত দেশ ; ঠিক এইখানে একান্তে পাহাড় আঁকি , নদী – সমুদ্র – জলা – জঙ্গল আঁকা থাকে
এইখানে নিশ্চিন্তে মাতাল হই প্রহরে – প্রহরে !
আবার হয়তো কখনো – সখনো অদ্ভূত উচ্চারণে ভাসে নিজস্ব শূন্যতা !
যা কবিতা চলে যা ,
বুক পারিয়ে চলে যা !
গ )
এ্যাতটা আবেগ
গভীরে অফুরান নগ্ন পড়াশোনা !
শরীর নিয়ে কথা বলা
তবু চোখ বুজে মহাঃজ্ঞান নাদে হৃৎপিন্ড ছিড়ে ততটাই অমোঘ ঈশ্বরীও ; এ জন্য কবিতার সাথে ঘুম ভাঙে সঠিক পাঁচটায় !
চাইবার মত পুণ্যবান হতে পারতো এ্যাতকালের অসুখ
গালমন্দে ভাসমান দু’পাশের প্রচ্ছদ বীথি ……
প্রতিদিনের কবিতাগুলো সবকটা দরজায় এসে দাঁড়ালে
দারুণ দুর্দিনেও দর্পণে একা – একা হাসি —–
ঘ )
প্রত্যেকটা অক্ষর অশ্রুস্নানে ভদ্র – হীম
কিছুটা হাওয়ায় গদ্য প্রহরে ; আমি অবিরল পাথর হয়ে যেতে – যেতে ভেতর থেকে রৌদ্র পায়ে বেরিয়ে আসি সাজানো মঞ্চে ! চারপাশটা কবিতার যৌন গন্ধে জ্যোৎস্নাময় ,
কেউ একজন সর্বনাশের শেষ মাথায় উঠে অতি প্রাচীন অবিশ্বাসে নগ্ন হয়ে লাকিয়ে পড়েছিল পৌরুষ গরিমায় ——
অথচ এ্যাতটা উত্তাপ ছিল কী সাদাপৃষ্ঠার ভেসে ওঠা শব্দগুলোতে ?
বেশ বিষজ্বালায় অনন্ত গভীর অতল , সেও মৃত্যুর ছদ্মবেশ নিয়ে অন্তহীন নির্বোধ
অবস্থানগত পরিবর্তনে চোখ ভরা বহতা নীরবতা ; সেটাও অনুধাবনে চিনে ফেলে ছুঁয়ে বোবা হয়ে যায় !
ঙ )
গত বছর দোল ফাল্গুনের ঠিক আগে
সহবৎ ভিক্ষা চেয়ে বিপরীতে অহঙ্কারের ধুলো ঘেঁটে সমবেত স্মৃতিগুলো দাঁত খুলে হাসতে দেখেছি ,
সেই কারণে সাম্প্রতিক সময়ের কবিতারা প্রত্যন্তে ইয়ার্কী করছিল !
বহুদিন এইভাবে কাটাই এক বুক হাহাকারের নীরবতা নিয়ে ;
বহুদিন বন্য কবিতার কোঠোরে জানু পেতে বসে আছি একক এভাবেই —–
এই হাত পেতে চেয়ে নেই সমস্ত জগতের আগোপন শোক
শিরা – উপশিরায় আমি আমাকে নিয়ে চলি ; চলতে হয় ভ্রমণে – স্বপনে – অহর্নিশ শয়নে
আমার সমস্ত স্বপ্নের উপহাস সহস্র রুমালে গিঁট বিঁধে নির্নিমেশ এখন মৃত
তাই এবারকার মত কবিতার জন্য মনের
অতলে ডুবি অতলান্ত দুর্ভোগে !
চ )
এ্যাতোদিনের পৃথিবী আমারও ব্যক্তিগত হতে পারতো
ঊনপঞ্চশ বাতাস এবং আশেপাশের ঝড় ; তারাও পকেট ভর্তি কবিতাগুলো উড়িয়েছে প্রত্যেকদিন !
আমি ভাসছি দীর্ঘশ্বাসে ——
সাত জন্মের চোখ খুলে মাথায় তুলেছি দেওয়ালবিহীন সর্বনাশ
এই বয়স আমাকে নিভৃতে রেখেছে আগোপন
এই মন নতুন মুকুলে লাবণ্যময়
এই শরীরের অচেনা আকাশ ছায়াময় মেঘেও ভীষণ নিভৃত !
সেইভাবে দেখিনি তোমার নগ্নতা ; অসহবাসের মধ্যে কাছাকাছি দিন – রাত্রির নিঃসঙ্গ অদল – বদল ,—–
এ্যাত বাতাস অথচ চোখ ঢাকা ছায়া একটা ; পুরোটাই অসুখ – বিসুখের অতল গোপনতা !
ছ )
সত্যি কী মনের ভেতর এ্যাতকাল দাঁড়িয়ে ছিল যাবতীও অশরীর স্মৃতি
যোগভ্রষ্ট ধ্যানি প্রণয়ের তৃষ্ণা পাবে বলে স্বরবৃত্তে ঘুরছে বেশ কিছু কাল …..
স্বপ্নে – স্বপ্নে কতশত অতীত হয়ে যাওয়া দেহ অমাইক ভাব জমায় ;
মনের কিনারে এসে ভুলে যায় পৃথিবীর সমস্ত পুরুষের গোপনতা —–
এই আমি একদিন গুপ্ত লজ্জায় হেসেছিলাম ; তোমার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে স্তব্ধতা ভরা নগ্নতায় ডুবে ছিলাম
সমস্তক্ষণ কবিতার কাছে উষ্ণতা ভিক্ষা ; এসব যেন মর্মান্তিক
তবুও বদলে যায় ভেতরের চারপাশ , বদলে যায় কথা না রাখার কথা
এই পথেই একদিন গাছবৃষ্টি চোখের পাতা ভিজিয়েছিল !!
___________________________________
বেদ-ঈশ্বরীও ইতিকথা
জল রঙের আকাশ
প্রাচীন মিশরের পিরামিড ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় , স্বপ্ন ছেঁড়া পেট কাটা রুগ্ন ঘুড়িটা ; বেমালুম পলাতক বর্ণ সৌরভের মোহে !
তবুও নিয়েছি চিনে গোটা বিশ্বের অন্তিম রেখা ,….. দূরে অন্য কোথাও আবিস্কারের গন্ধ স্বপ্নের ভিতর অহনিশ নির্ঘূম ৷
জল রঙের চোখ ; জীবন দেখেছে মৃত্যুর পর ! সেই এক দিন নিজের নামে শয়তান পুষেছে হাতের রেখায় ,….. কথা নষ্ট করে বেদ-ঈশ্বর ভাবুক আগুনে আঁকে সর্বনাশী এক নারীর শরীর ! তবু ঠিকানাহীন বেপাত্তা সেই ঘুড়িটা বেদ- ঈশ্বরীও’র সন্ধানে !!
___________________________________
আমি যেন অতলান্তের আমি
চোখের ভেতর সেই নদীটা লুকিয়ে ছিল
মনের মধ্যে না বলা কথার ঝড় থেমেছে
হঠাৎ কেন স্বপ্নঘুমে সেই পাখিটা ,
ভিন্ন সুরে আকাশ দেখে গান গেয়েছে !
কী লিখব , কি লিখছি , থাক এখনি
ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো নানান কথা ,
ভাসছি আমি সেই নদীতে বহতা স্রোতে —
বুকের মাঝে থাকছে না আর নীরবতা !
গায়ে গায়ে মাখি বৃষ্টির ভিজে ফুল
সুগন্ধিতে লাজুক শোভনতা ,
চোখের মধ্যে অন্য চোখের কথা
বাতাসে উড়ছে হৃদয়ের ব্যাকুলতা !
প্রথম ছোঁয়ায় গোপন যত মনে
এক সমুদ্র তেরো নদীর ঢেট
প্রথম দেখায় আকাশ রাখি চোখে ,—-
আমি জানি আর জানেনা কেউ !
আপাতত আমি হৃদয়ের কাছাকাছি
দু’হাতে মাখি গোপন অন্ধকার ,
সবটুকু মন জন্মের দেবালয়ে
সমর্পণে একই ভাবে একাকার !
এই কটা দিন একান্তে একা – একা …
গদ্যে পদ্যে শূন্যতা ভরা আলো ,
মনের আকাশে ভাসমান স্মৃতিগুলো
প্রতিতুলনায় বলছে আগুন জ্বালো !
আমার স্বপ্ন আমাকে করেছে ঋণী ,—-
দাম দিয়ে কেনা আমাকে নিজের থেকে ;
আমার কথা আমাতেই থাকে একা
কত কবিতার পথ গিয়েছে বেঁকে !
আমি যেন অন্য কোনো আমি
দর্পণে দেখি দীর্ঘ সর্বনাশ ,
আমার কথায় কবিতার দশ পাতা —-
বায়ুভূত হয়ে করে যায় উপহাস !
আমি হঠাৎ নতুন আকাশ নিয়ে
মনের সূর্য দু’চোখে সাজিয়ে রাখি ,
আমি যেন আঁধার রাতের আলো ….
সব স্মৃতি সুখ নিজের অতলে মাখি !!
___________________________________
আকাশলীনা তোর জন্য
যতোই আমায় বৃষ্টি বাদল স্বপ্নে এসে দেখা ; তোর মত মিথ্যা বলতে পারবো না ,—- তিন সত্যি ! দিব্বি কাটছি !
এই ভাবে ঠিক মনের মধ্যে প্রতি মূহুর্ত আঁকতে আঁকতে গভীরে তোর লাবণ্যরেখা ; এরপরেতে মেঘের দেহে হঠাৎ করে আচম্বিতে আগুন জ্বলে ওঠে , নতুন কেনা আয়না দিয়ে অঝর ধারায় শ্রাবণ নামে ছন্দ না মেনে ! ঠিক এভাবেই সে–ই আগের মতই দলবেঁধে বৃষ্টিরা সব একই সাথে নেমে আসে ভুবনডাঙায় ভরদুপুরে ! কি ; বিশ্বাস হ’চ্ছে না আকাশলীনা ?
শেষ সন্ধ্যায় চাঁদের আলো কী ভাসমান অসাবধানী ; তবুও যেন ভালো লাগা , মন্দ লাগা যাইনি ভোলা ! তোকে ছুঁয়ে বলছি ……
দুই হাতেতে হঠাৎ পাওয়া বৃষ্টি আদোর ; হৃদয়পাড়ে যত্ন করে রাখাই ছিল সাতটা বছর ! এটা আমার সর্বকালিন সত্যি কথা ; তবুও আমি বুক বাজিয়ে বলতে পারি ,— তোর মত একটাও মিথ্যা বলতে পারবো না !
অন্ধকারকে বনের পথে খুঁজতে গিয়ে আকাশ আমায় হাত বারিয়ে দু চার মুঠো হীরের মতন জ্বল জ্বলে কত তারা দিল , বিনে পয়সায় !
এই যে আমার মনের মধ্যে সমুদ্র এসে সতত ঢেউ তোলে ; তবুও যেন তুমিশূন্য তুমিশূন্য এই বিছানা ,—- অবিবেচক প্রতিটা রাতে !
যদিও আমার স্বপ্ন থেকে নতুন একটা আকাশ ডাকে ; রূপকথারা সেই হরিণীর পেছন ছোটে মৃগনাভীর ব্যাকুলতায় !
হঠাৎ করেই অন্য একটা সময় এসে হাজির হলো ! এই তো আমার ঠোটের মধ্যে তোর আঁকা সেই প্রথম চুমু ; অটুট তবু স্মৃতিনির্জন ,—– তবু কেন এই এতক্ষণ তোরই জন্য অতল জুড়ে বৃষ্টি ভেজা সকাল – দুপুর – সারারাত্রি !
অন্য একটা দিনের মধ্যে সে–ই তোকে তাই গুছিয়ে রাখি ; স্বভাবদোষে !
বাতাসপরীর ডানার ঝাপট স্বপ্নে স্বপ্নে স্মৃতিনির্ভর ; অথচ কেন ভেতর থেকে ভুলতে চেয়েও যায়না ভোলা তোর দেওয়া সেই সর্তগুলো ! বহু দিনের কষ্টরা সব মিথ্যা মিথ্যা দগ্ধে মারে অতলান্ত ,—- শেষ পর্যন্ত এ’মন থেকে এতকালের বৃষ্টিগুলো বের করে দেই ; অথচ আমি অনেক চেষ্টায় না পারি যে তোকে ভুলতে , সত্যি বলছি আকাশলীনা !! তিন সত্যি , দিব্বি কাটলাম ……. !
___________________________________
শুধু প্রিয়ংবদার জন্য
সঙ্গোপনে অফুরান চেয়ে থাকা ; অনেকটা অভিমান সমস্ত নিঃশ্বাস ! তবু তুমি থাকতে প্রিয়ংবদা কেন হাওয়া নির্জন ?
এই তো সে-ই কবিতা থেকে উদাস হেঁটে আসা দ্বিতীয় জগত ; স্বপ্ন থেকে নীরবতার ক্ষমাহীন অসহীষ্ণু সময় ,— এভাবেই ছুঁই দেহভর্তি তোর তপস্যায় প্রিয়ংবদা !
কিছু কিছু মিথ্যা ভীষণ ছান্দিক ; তবু কেন এই ধুলো রাস্তায় নানাবিধ সর্তগুলো পোডায় আমাকে ,—– এভাবেই চাঁদ ওঠে বেমালুম পাতাপতঙ্গেরা ঘুনিয়ে যেতে যেতে ! সে-ই লম্বা একটা ছায়া ; সেখানে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির সুচারু বর্ষণ , এটাও তোমার অভিমানের কথা চিন্তা করে এনেছি কবিতায় প্রিয় নারী !
স্বাভাবিক এখান থেকে খোলা জানলার এপাড় – ওপাড় ; সেখানে তুমি এক গদ্যময় স্মৃতি , মনের ভিতর অন্য এক মনের অন্তর্গত কথা বলা বলি ; এটাও কিন্তু অবুঝ পাগলামি ! এটাও তোমার জন্য মনেতে অসুখ নিয়ে একলা যাপন !
সত্যি দয়াপ্রার্থীর রূপ নিয়ে অনেকটা নিচু গলায় কতবার বলেছি ; প্রিয়ংবদা তুমি আমার !
স্নান ঘরে আমি জ্যোৎস্নার মত নিঃসঙ্গ ; চোখের ভেতর নানা কারণের দুঃস্বপ্ন আঁছড়ে পড়ে , তবু মধ্যরাতে বারান্দায় একলা এসে দাঁড়াই ব-হু ক্ষণ !
আমার কোনভাবে নিষ্কৃতি নেই ; তবুও উচ্চারণ করি সহজ নির্লজ্জে ,— আমি একমাত্রই তোমায় ভা-লো-বা- সি !
এই সময় পোড়ায় এভাবেই ; চোখের সমস্ত অশ্রুপাত ভিজিয়েছে কথাহীন পথ , তবু এই পথে এধার ওধারের ধাক্কা লাগে ! ভীষণ উষ্ণতায় বিছানায় এভাবে একা একা নির্ঘুমে রাত কাটে ,—– ওদিকের আকাশটায় এভাবেই জ্বলে ওঠে জ্যোৎস্নালোকের অন্য এক নক্ষত্র ; সেও আমারই মত প্রেমহীন !
শেষ একবার প্রতিদিনের অস্থিরতা জমে জমে বুকের মধ্যে জ্বলে শ্মশান ! ব্যক্তিগত মৃত্যু নিয়ে প্রতিদিন এভাবেই অনেকটা বেলা করে ঘুম ছেড়ে উঠে দাঁড়াই ; একমাত্র ভালোবাসার কাছে !
স্বভাবতই কবিতার প্রতিটা স্তবক ; অন্য এক অন্ধকারে নির্বাসন নিয়েছে ,—– সেখানে একক নীরবতায় প্রাচীন ক্যালেন্ডার খুলে দেখি ; তোমার সাথে কবে কোথায় দেখা হয়েছে , সেই স্মৃতিছবি !
সততই এভাবে ফিরিয়ে দিয়েছি প্রতিজন্মের মৃত্যু ; চেনা সময় , চেনা পথ , চেনা ফুলের গন্ধ , সব স-ব-ই ভাসিয়েছি চোখের জলে ! অথচ প্রিয়ংবদা এই বুকের একেবারে গভীরে তোমার তুমিকে সরিয়ে দিতে সাহস হয়নি ; যদি কোন দিন ফিরে এসে বল , কই কবি তোমার বুকের মধ্যে আমি কোথায় ??
___________________________________
এক নামহীন স্টেশনে আমি
একমাত্র ঈর্ষণীয় কিছুর জন্য ভেতরে ভেতরে মন নিয়ে পুড়ছিলাম ; অথচ সেই এক রাস্তায় বহুবার মৃত্যু এসে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গেছে অপ্রমেয় এক নামহীন স্টেশনে ! তখন ঠিক স্বপ্ন ছিল .ঘুমহীন রাতগুলোর কাছে , …. যদিও আমি যতটা যেভাবে এতকাল ধরে ক্ষয়েছি ;
তবু মৃত্যুর খবর টুকু অনুধাবনে মনকে সক্ষম করে নি একবারও ! শেষ পর্যন্ত ঐ যে চেনা মুখ , চেনা শরীর , ঘর-বাড়ি , হৃদয় ছড়ানো রাস্তা , কিছু কিছু সুখ ; এদের মধ্যে বহু পুরুষের জন্মের দাগ নিয়ে আমি একজন ! এই আমি হাওয়াময় একক এভাবেই , ….. নজর ছড়ানো পাপ , তাপ , দুঃখ এবং বিরহ ; বেশ কিছু নতুন নতুন অসুখ পোড়া প্রহরের স্মৃতি বিজড়িত ! এই আমিটার মধ্যে আদ্যোপান্ত জন্মগত , ……
অন্তঃস্থলে নির্ঘুমের আঠা লেগে আছে ! রক্তের ভেতর ঘুরছে গত জন্মের স্মৃতি হয়ে যাওয়া চেনা মুখ গুলো ,
এই পাঁচকোনা ঘরে আমি দরজার পাল্লা ধরে দাঁড়িয়ে বহুদিন বান্ধবহীন একা ; তবুও তাকিয়ে থাকা খোলা চোখে বেশ কিছু ভালোবাসার শূন্যে ওড়াউড়িতে তালিয়ে যাই , ……
আমি এভাবেই মৃত্যুর কাছে ঋণী ! মধ্যরাতে নিঃশব্দে এভাবে চুপিসারে মনের ক্যানভাসে আঁকি নদীর তরঙ্গ ; জলের দর্পণে ভাসে রমণীর জটিল লাস্য ৷ এভাবে কত রাতের অন্ধকারের মধ্যে মৃত্যুর সম্মুখে শোকশীর্ণ হয়ে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার ইহকালের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি ! এটাই আমি ; আমার দীর্ঘশ্বাসের গন্ধ সমর্পণ করতে তারা খসা আকাশটাকে ! অথচ নবনীতা নাম্নী নারীটি খারাপ ইঙ্গিতে নিরস্ত্র করেছে অলৌকিক ক্ষমতায় ম্যাজিক ফিগারের কল ঘরের স্নানের দৃশ্য দেখিয়ে !
শেষটুকু ভীষণ কষ্ট করে লিখেতে হয়েছে ! রাতের ভেতর আমার পশ্চাৎদেশের ছায়া বালি-সিমেন্ট খসা দেওয়ালে অমাইক সভ্যতা নিয়ে স্থির হয়ে জেগে আছে ,……
এই মৃত্যু কতবার সিঁড়িভেঙে অসাবধানে নিচে নেমে গেছে ; আমিও ডুবেছি বহুবার প্রায়ই ৷ হৃদয় যেখানে নিছক এঁকেছে কল্পনায় আমার অতীতের নারী মুখ গুলো ; সেই সব দিনগুলো মৃত্যুর ভেতর ফিরে আসে হঠাৎ করেই অজান্তে ! শেষে কারা যেন ঐ শ্মশানের কাছে এসে ফুল চন্দনের সোহাগ মিশিয়ে আমার শ্বাস-প্রশ্বাস হীন শরীরে আগুন এঁকে দিতে দিতে বলে ওঠে ; এবার তুমি সোজা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে স্মৃতি হয়ে ওঠো ! এবার তোমার কায়াহীন আজন্মের বিশ্রাম ! ভালো থেকো ; ওঁ শান্তি ! ওঁ শান্তি ! ওঁ শান্তি সর্ব ভূতেষু নমঃ !!
___________________________________
স্মৃতিঘর ও পরিচিত উপহাস
যদি ওভাবে উচ্চারণ হত অফুরান স্বপ্নগুলো ; তাহলে আর একবার মৃত্যু নিয়ে ঘুমিয়ে পরবো এই ঘরে , এই বিছানায় !
মহাবনস্পতি থেকে শূন্যের অদূরের আকাশ ; এধারে – ওধারে মাখামাখি নীলের বৃষ্টি ….. ভেতরে নিরাময় স্তব ; চোখের পিঞ্জরে নির্জন নিঃশব্দ কথা , আরও কত প্রাঞ্চল অসুখ ; এ আমারই !
নতুন কেনা চশমায় চোখ বাসা বাঁধে ; হাওয়ায় বাতাসে ভাসে এ বাড়ির প্রতিটা স্তবক ৷ চার ধারের চোখগুলো ছায়া ছায়া ভাসমান ; অদ্ভুত হেঁয়ালী নিয়ে নির্বাক এভাবেই স্বপ্নে ঘুরে গেছে ব-হু বার ,—- অথচ প্রত্যন্ত অস্থিরতায় কেউ যেন শরীরের সমস্ত নগ্নতা আদিখ্যেতায় দেখাতে চেয়েছে এই আমিটাকে ! এই বাড়ি , ঘর – দোর , চেনা সিঁড়ির প্রতিটা অবয়ব কবে থেকে অন্য এক সময় থেকে নির্বাসন নিয়েছে ! অথচ এখন …..
সেই দেরাজে লুকিয়ে রাখা মৃত প্রজাপতির ডানা ; সেটাও মনকে পোড়ায় !
এই গভীরের অসুখ স্মৃতিভিক্ষা করে সময়ের কাছে কতবার , কতভাবে ,—- তবু যতবার আমার শরীর ছেড়ে চলে যাওয়া ; আজীবনের কবিতাদের ফেলে , সেগুলো এখন বাহিরের দরজায় দাঁড়িয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে !
কাউকে এভাবে মন খুলে ডাকিনি এভাবে ; সেই আকাশ পাড়ের চাঁদ , সেও বৃষ্টির ভেতর আমার ডাক শুনতে পায়নি একবারও !
স্নানঘরের ভেতর বারোমাসের স্বপ্নদোষ ; তারাও মধ্যরাতের দুঃস্বপ্নে এসে আমি কেমন আছি খোঁজ নিয়ে গেছে !
কাল সারারাত এই মেঘ-বৃষ্টির ভেতর ঘরের জানলা খোলাই ছিল !
মনের মধ্যে দিয়ে কত রাতের নির্ঘুম যাপন ; সেও পাখির বাসার মত নীরবতায় একক একাকার ,—— সবটাই এই স্মৃতিঘরে জীবন পেতে বসে আছে !
কেউ একজন মৃত্যুর পরেও নিমন্ত্রণ পাঠিয়েছে আমাকে ; উষ্ণ আলতো উচ্চারণে ,—– ভেতরের যাবতীয় প্রাপ্য দুঃখ ; তারাও আমার পায়ের নীচের রাস্তায় নির্দ্বিধায় অশ্রু ঝরিয়েছে !
এই রাস্তায় আমার নাম ধরে কবেকার আধপোড়া স্মৃতি ডেকেছে ; সেটাও নির্ঘুম ঘুমন্তে শুনতে পেয়েছি ,—– এই অন্তহীন সময় শ্মশান থেকে আমিও অশরীর বৃষ্টি ভিজে ফিরে আসা ;
অন্য কোন জন্মঘরে ! মৃত্যুর অনেক পরে …..
স-মা-প্ত
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক”- তাঁর কলম ধরেন একেবারে নিজস্ব সৃজন কারদায় ৷ কবিতা লেখাটা তাঁর দীর্ঘ দিনের সাধনা , এই সাধনাই তাঁকে বিশ্বের পাঠকদের কাছে সম্মানের সাথে পৌঁছে দিয়েছে ৷ কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক”- এর কবিতা নির্মাণ একেবারেই অন্যদের থেকে আলাদা ৷ তিনি তাঁর কবিতার মধ্যে ব্যক্তিগত অতীত কিম্বা বহতা সময়ের দাগ রাখতে ভালো বাসেন ৷