বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে ফের সিন্ডিকেটের ধান্দা!

প্রবাস ডেস্ক
  • খবর আপডেট সময় : শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৪
  • ২৮ এই পর্যন্ত দেখেছেন

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দেশের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার মালয়েশিয়ার বাজার বন্ধ রয়েছে তিন মাস ধরে। সরকারের পটপরির্তনে নতুন করে বাজারটি চালু হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিলে ফের সিন্ডিকেটের তৎপরতা শুরু হয়েছে। দুই দেশের সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর না হলেও ‘সিন্ডিকেট করার’ চেষ্টা শুরু হয়েছে। এই চক্রের সাবেক মন্ত্রী, এমপিসহ কয়েকজন দৌঁড়ের উপরে থাকলেও সক্রিয় আছেন অন্যরা।

তাদের মধ্যে রুহুল আমীন স্বপনসহ কয়েকজন দুবাইয়ে বসে নতুন রিক্রুটিং এজেন্সীর নাম দিয়ে ১০০ জনের একটি সিন্ডিকেট করার চেষ্টা শুরু করেছেন বলে একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সী মালিক দাবি করেছেন। এর ফলে সেপ্টেম্বরের শুরুতে বাজারটি নতুন করে খোলার কথা শোনা গেলেও সিন্ডিকেটের দৌরাত্নের কারণে এ নিয়ে ফের অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) মহাসচিব মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী জানান, নতুন সরকার আসার পর মালয়েশিয়ার বাজার নিয়ে ফের সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। তারা ২৫ হাজার কর্মী নিতে চাচ্ছে। এ নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, এই বাজারে নতুন করে আর সিন্ডিকেট হওয়ার সম্ভবনা নেই। বাজারটি চালু হলে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলেও মনে করেন তিনি। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে রুহুল আমীন স্বপনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সৌদী আরবের রিয়াদে অবস্থান করছেন জানিয়ে বলেন, নতুন করে কোনো সিন্ডিকেট হচ্ছে না। এমন কোনো খবর তার জানা নেই।

শ্রমবাজারের সঙ্গে ঘনিষ্ট একাধিক সূত্র বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সম্পর্ক পুরানো। গত ১৩ আগস্ট (মঙ্গলবার) রাতে তিনি ড. ইউনূসকে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পরের দিন ১৪ আগস্ট (বুধবার) ফেসবুকে এক পোস্টে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘মঙ্গলবার রাতে আমি আমার পুরনো বন্ধু অধ্যাপক ইউনূসকে ফোন করেছিলাম। ফোনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তার নিয়োগের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছি এবং তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। আনোয়ার ইব্রাহিম জানান, ‘মালয়েশিয়ার সঙ্গে ড. ইউনূসের সুসম্পর্কের ইতিহাস রয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক পুনঃউন্নয়নে এবং বাংলাদেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফেরাতে মালয়েশিয়ার সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। এ সময় ড. ইউনূস আনোয়ার ইব্রাহিমকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানান। ধারণা করা যায় খুব শিগগিরই তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন। এর পর ২৮ আগস্ট (বুধবার) বিকেলে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ হাশিম সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।

জানা গেছে, ড. ইউনুস মালয়েশিয়া সরকারের কাছে শ্রমবাজার পুনরায় চালু করার আহ্বান জানালে তারা সন্তোষজনক সাড়া দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এই শ্রমবাজার ফের চালু হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। আর এই সুযোগে পুরানো সিন্ডিকেট নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ দেশের সেই রুহুল আমীন স্বপন ও মালয়েশিয়ার দাতু আমীন মিলে নতুন নামে ১০০ জনের সিন্ডিকেট করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। সিন্ডিকেটের আলোচিত ব্যক্তিদের নামে-বেনামে একাধিক লাইসেন্স থাকায় তারা নতুন এজেন্সীর নামে গড়তে চাচ্ছেন পুরানো কায়দার সিন্ডিকেট। এতে মালয়েশিয়া সরকারের একাধিক মন্ত্রীর যোগসূত্রের খবরও পাওয়া গেছে। সিন্ডিকেট চালু করতে শুক্রবার (৩০ আগস্ট) ৩ হাজার মিলিয়ন রিংগিত লেনদেনের খবর এসেছে বায়রা সদস্যদের কাছে।

মালয়েশিয়য়াতে বাংলাদেশ ছাড়াও আরো ১৩টি দেশ জনশক্তি রপ্তানী করে আসছে। কোনো দেশে এজন্য সিন্ডিকেট না থাকলে সিন্ডিকেটের কারণে বারবার বাংলাদেশের হাতছাড়া হচ্ছে সম্ভবনার এই বাজারটি। ২০১৬ সালে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সী নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে উঠে। পরে তা বেড়ে ২৫টি থেকে ১০০টিতে পৌঁছায়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ৭৯ হাজার টাকায় কর্মী পাঠানোর কথা বললেও একজনকে মালয়েশিয়া যেতে সাড়ে চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়। সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্সী কর্মী প্রতি হাতিয়ে নেয় এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। এরপরও সেখানে গিয়ে কাজ পাওয়ার অনিশ্চয়তা তৈরী হয়। এ অবস্থায় হট্টগোল পরিস্থিতিতে সেখানে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে সে দেশের সরকার। পটপরিবর্তনের পর নতুন করে সম্ভবনা দেখা দিলেও সিন্ডিকেটের তৎপরতার কারণে ফের অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বাজারটি।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে বন্ধ হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার, আট বছর পর তা চালু হয়েছিল ২০১৬ সালে। এরপর দুর্নীতির অভিযোগে ফের ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর নতুন সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে সেই বাজার খুলতে সময় লেগেছিল তিন বছর। ২০২২ সালের আগস্টে দেশটিতে আবারো বাংলাদেশি কর্মী যাওয়া শুরু হয়। মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ১ জুন থেকে বাংলাদেশসহ বিদেশি কর্মীদের দেশটিতে প্রবেশ বন্ধ রয়েছে।

গত জানুয়ারি মাসে মালয়েশিয়ার মন্ত্রিপরিষদ ১৫টি দেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি আবার রিভিউ করার অনুমোদন দিয়েছে। দেশটি বর্তমানে থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, নেপাল, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে শ্রমিক নেয়। গত ২০ মে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলন করেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল ও মানবসম্পদমন্ত্রী স্টিভেন সিম চি কিয়ং।

তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইসমাইল জানান, মালয়েশিয়া সরকার আবারো বিদেশি কর্মীদের আবেদন গ্রহণ বন্ধ রাখার সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদেশি কর্মীদের আবেদন বর্তমানে স্থগিত থাকছে। অর্থাৎ নতুন কোনো শ্রমিক সে দেশে কাজে যেতে পারবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইলের মতে, তাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ১৫ শতাংশ বিদেশি কর্মীর কোটা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পূরণ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে ধারণা করা হয়, চলতি বছরে মালয়েশিয়ায় আর নতুন কর্মী যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, মালয়েশিয়ায় সক্রিয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্রের কারণে বিদেশি কর্মীরা প্রতারণার শিকার হয়ে আসছেন। নিয়োগকর্তা চুক্তি করেও সেই শর্ত মানেন না। সিন্ডিকেটের কারণেই দেশটির শ্রমবাজারে বারবার অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। বাংলাদেশেও তৎপর রয়েছে সিন্ডিকেট চক্র। অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুনরায় চুক্তি করতে গেলে যদি শ্রমবাজার সেই সিন্ডিকেটের কাছে চলে যায়, তাহলে চুক্তি করা আর না করা একই কথা।

নিউজ /এমএসএম

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102