গত ৭দিনের যানজট দৃশ্য ও কারণ দেখতে বুধবার (৮। অক্টোবরে) ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক পরিদর্শনে এসে সড়ক ও পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান নিজেই যানজটের কবলে পড়েন।
উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষে এই সড়কে তোড়জোড় করে সংস্কারকাজ করা হয়। কিন্তু তবুও যান জটের কবল থেকে রক্ষা করা যায়নি সড়ক ও পরিবহন উপদেষ্ট কে। উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দীর্ঘ তিন ঘণ্টা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ অংশে যানজটে আটকা পড়ে আসতে পারেননি সিলেট বিভাগের নবীগঞ্জ অংশে।
তিনি যানজটে আটকা পড়ে অবশেষে মোটরসাইকেলে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড মোড়ে এসে নাজুক মহাসড়কটি পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য গত ৪ অক্টোবর দৈনিক সমকাল, ইউকে বিডি টিভি.কম ও ৫ অক্টোবর বিডি২৪লাইভ.ডটকম পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রনালয়। এরই জেরে সড়ক পরিদর্শনের আসেন উপদেষ্টা।
তিনি বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুর ১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড মোড়ে নাজুক মহাসড়কটি পরিদর্শন করেন। এসময় তার সঙ্গে সড়ক সেতু মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক পরিদর্শনের অংশ হিসেবে তিনি বুধবার সকালে ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতি এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ভৈরবে পৌঁছান। পরে সেখান থেকে সড়কপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে পৌঁছান। সকাল সোয়া ১০টায় তিনি আশুগঞ্জ হোটেল উজান ভাটি থেকে গাড়ি বহর নিয়ে মহাসড়ক পরিদর্শনে বাহির হন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অংশে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তীব্র যানজটের কবলে পড়েন। পরে তিন ঘণ্টা আটকে থাকার পর বাধ্য হয়ে মোটরসাইকেলে করে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোডের মোড়ে পৌঁছান।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন ১২ জন কর্মকর্তাকে ঢাকায় অফিসে না বসে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোডের অস্থায়ী কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ বিষয়ে অবহেলা করলে বা অফিসে না পাওয়া গেলে তাদের সাসপেন্ড করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগের গাফিলিত কারণে। এ বিষয়ে তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে এ সমস্যা সমাধান করার কথা জানান।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্র জানায়, গত শনিবার থেকে অস্থায়ী সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। বিশ্বরোড গোলচত্বরে কয়েক স্তরে ইট ও বালু বিছানো হয়েছে। দীর্ঘ ৭দিন যাবৎ ঐ এলাকায় তীব্র যানজটের কবলে পড়েছেন যাত্রীরা। সমকাল, ইউকে বিডি টিভি.কম ও বিডি২৪লাইভ.ডটকম পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশের পরপরই রাস্তায় দ্রুত সংস্কার কাজ চলছে। বুধবার মহসড়কের কাজে কেন ধীরগতি কারন জানতে ও দেখতে উপদেষ্টা সরাসরি পরিদর্শন করেছেন। তিনি যানজটের কবরে পড়ার সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ ও নবীগঞ্জ অংশ পরিদর্শন করতে পারেননি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো স্বাভাবিক হয়নি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যানজট পরিস্থিতি। তীব্র যানজট সৃষ্টির ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও যানবাহন চালকরা। বুধবার উপদেষ্টা আসবেন তাই যানজট কিছুটা কম থাকার কথা ছিল টাফিক পুলিশ সক্রিয় থাকায়, কিন্তু হঠাৎ দুপুর ১২ টা থেকে যানজটের সুত্রপাত ঘটে।
এদিকে যানবাহনের দীর্ঘ সারিতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের। শত শত যাত্রীকে গত কয়েকদিন হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। এতে জেলার অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লার যানবাহনের হাজারো মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
মহসড়কের নির্মান কাজে বড় আকারের গর্ত ও কোন ডাইব্রেশন না থাকায় এ যানজটের প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে গত দুই দিন দেখা গেছে, মহাসড়কের নির্মান কাজের বিভিন্ন অংশে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের কয়েকটি স্থান বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ^রোড গোল চত্বর ও শায়েস্থাগঞ্জ নতুর ব্রীজ এলাকা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জায়গাটি অতিক্রম করার জন্য চালকদের অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। ঢাকা থেকে সিলেটগামী পণ্যবাহী একটি ট্রাককে আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি টোল প্লাজা, শায়েস্থাগঞ্জ গোল চত্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ^রোড গোলচত্বর এলাকায় বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
নবীগঞ্জ উপজেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহ শামীম আলম বলেন, শত শত নারী-পুরুষকে হেঁটে গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে। গতকাল দিনভর মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কম চলাচল করতে দেখা গেছে। হবিগঞ্জসহ নবীগঞ্জ, বাহুবল,সহ সিলেট বিভাগের দূরপাল্লার যানবাহনের হাজারো মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
শায়েস্থাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি শূভ রঞ্জন চাকমা বলেন, আজকে আমাদের এলাকায় কোন যানজট নেই লেখতে পারেন, উপদেষ্টা আসার কথা থাকলেও আসা হয়নি।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের সিলেট অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন বলেন, সড়ক ও পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান আসবেন বলে আমরা দ্রুত কিছু কাজ করছি। সেতু ও কালভার্টগুলো পরিকল্পনা করেই তৈরি করা হচ্ছে। আমরা কাজের গতি বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রনালয়ে নির্দেশনা পেয়েছি। কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।