সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৮ অপরাহ্ন

চরম দুর্ভোগে জনসাধারণ

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট

এম এ আহমদ আজাদ, নবীগন্জ
  • খবর আপডেট সময় : শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৩২ এই পর্যন্ত দেখেছেন

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মধ্যে তীব্র যানজটে আটকে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। ৩ ঘন্টার রাস্তা ১২ ঘন্টায় পার হওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে সিলেট বিভাগের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) নবীগঞ্জ থেকে  ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে ২ ঘন্টায় যাওয়ার রাস্তায় সময় লেগেছে ৮ ঘন্টা। এদিকে মহাসড়কে টানা দুই দিন ধরে দীর্ঘ যানজট চলছে। হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি গোল চত্বর থেকে শায়েস্থাগঞ্জ গোলচত্বর ।শায়েস্থাগঞ্জ আবার থেকে মাধবপুর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় ও শাহবাজপুর সেতু হয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকায় গত বুধবার ভোর ছয়টা থেকে আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত যানজট দেখা গেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ যানজট হচ্ছে শায়েস্থাগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে আশুগঞ্জ পর্যন্ত। এছাড়া ঢাকা যাওযার পথে নরসিংদী মাধবদী,কাচপুর ও নারায়ণগঞ্জ বিশ্ব রোডে যানজট রয়েছে।

শুক্রবার যানজটের বিষয়ে বাংলাদেশের আলোচিত ইসলামি বক্তা মুফতী গিয়াস উদ্দিন তাহেরী বলেন, আমি যানজটের মধ্যে পুরো এক রাত আটক ছিলাম। আমাদের ঢাকা সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ থেকে নবীগঞ্জ আউশকান্দি ও শায়েস্থাগঞ্জ মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৫/৭ ঘন্টা যানজট থাকে, এই বিষয়টি দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি বলেন, পরিকল্পনা ছাড়াই মহাসড়কের নির্মান কাজ চলমান রয়েছে তাই প্রতিদিন যানজট হচ্ছে।

মহসড়কের নির্মান কাজে বড় আকারের গর্ত ও কোন ডাইভারসন না থাকায় এ যানজটের প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে গত দুই দিন দেখা গেছে, মহাসড়কের নির্মান কাজের বিভিন্ন অংশে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের কয়েকটি স্থান বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ব রোড গোল চত্বর ও শায়েস্থাগঞ্জ নতুর ব্রীজ এলাকা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জায়গাটি অতিক্রম করার জন্য চালকদের অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে।  ফলে দূরপাল্লার যানবাহন মহাসড়কের গোলচত্বর এলাকায় এসে থেমে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর সেখানে গর্তে যানবাহন আটকে যাচ্ছে, কোনোটি আবার বিকল হয়ে পড়ছে। ঢাকা থেকে সিলেটগামী পণ্যবাহী একটি ট্রাককে আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি টোল প্লাজা, শায়েস্থাগঞ্জ গোল চত্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ব রোড গোলচত্বর এলাকায় বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

স্থানীয় লোকজন জানায়, বুধবার দিবাগত রাত থেকে মহসড়কের যানজট সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার ভোর ছয়টার পর থেকে যানজট বাড়তে থাকে। বিকেল পর্যন্ত নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি থেকে শায়েস্থাগঞ্জ থেকে মাধবপুর, আশুগঞ্জ গোলচত্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত প্রায় অনুমানিক ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের বিস্তৃতি ঘটে। গত দুই দিনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কে যানজট ছড়িয়ে পড়েতে দেখা গেছে।

নবীগঞ্জ উপজেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহ শামীম আলম বলেন, যানজটের কারণে শত শত নারী-পুরুষকে হেঁটে গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে।  দিনভর মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কম চলাচল করতে দেখা গেছে। হবিগঞ্জ নবীগঞ্জ, বাহুবলসহ সিলেট বিভাগের দূরপাল্লার যানবাহনের হাজারো মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

জামাল উদ্দিন তাহেরী নামে একজন ফেসবুকে লাইভে বলেন,  তিনি ৫ কিলো মিটার পায়ে হেটে যানজট মুক্ত হতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটে নাকাল হয়ে অনেক যাত্রী তাঁর মতো পায়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন ।

সিলেট থেকে ঢাকাগামী পণ্যবাহী ট্রাকচালক আমির হোসেন বলেন, রাত ২টায় ছিলাম চান্দুরা আর এখন বেলা ১১টায় আছি বিশ্বরোড এলাকায়। মনে হচ্ছে আমরা কারও কাছে জিম্মি হয়ে আছি। একটু জায়গা ঠিক করে ডাইভারশন করে দিলে আমরা ভালো করে চলতে পারি, কিন্তু তা হচ্ছে না।

ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা হানিফ বাসের চালক রহিম আলী বলেন,  আমাদের কপাল খারাপ। না হলে মাসের পর মাস ধইরা এইখানে এ দশা কেন অইবে! এইখানে আসলেই আমাদের ঝামেলা অয়।’ আইলাম রাতে অখন দুপুর ১২ টা বাজে যাত্রীদের নিয়া বসে আছি। কত কষ্ট কওয়া যায় না ভাই।

এব্যাপারে শেরপুর হাইওয়ে থানার ওসি দেওয়ান আবু তাহের বলেন, আমরা এসব যানজট রোধে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেই। আমার এলাকা নবীগঞ্জে খুবই কম যানজট হয়।

শায়েস্থাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, আমার এলাকায় যানজট হয় মুল মহাসড়কের ব্রীজ গুলো নির্মানের জন্য কাজ চলছে তাই। আমরা যানজট নিরসনে সব সময় কাজ করছি।

সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন,  ভোর ছয়টা থেকে রোডে আছি। এখন পর্যন্ত কিছু খাই নাই। পা ফুলে গেছে। কিছুক্ষণ পর পর গর্তে যানবাহন আটকে যাচ্ছে। এক একটি যানবাহন ওঠানে ৫ থেকে ১০ মিনিটও সময় লাগে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি মহাসড়কটিকে যানজটমুক্ত রাখতে। কিন্তু পারছি না। কয়েক দিন পরপর ইট দিয়ে গর্ত ভরাট করেছি। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি।

সড়ক ও জনপথ (সওজ), জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে ৬ লেনে উন্নীতকরণ কাজ ধীরগতিতে চলছে ৫ বছর ধরে। ৫ আগস্টের পর কাজের গতি আরও কমে যায়।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের সিলেট অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন বলেন, সেতু ও কালভার্টগুলো পরিকল্পনা করেই তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন হয়তো শ্রমিক সংকটের কারনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কতৃক কাজ ধীরগতিতে হচ্ছে। আমরা দ্রুততম সময়ে ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মান কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। নির্মান কাজ চললে জন দুর্ভোগ সামান্য কিছু হয় এটাই স্বাভাবিক।  আমরা এখনও সর্বোচ্চ ১৫ % ভাগ কাজ করেছি। আমরা কাজের গতি বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রনালয়ে নির্দেশনা পেয়েছি। কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ চলমান রয়েছে।

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102