সাংবাদিক পরিচয় দিতেই যেন কিছুটা দূরত্ব কমে গেছে। তখন এগিয়ে এসে নিজেকে পরিচয় দিলেন ক্রিকেট কোচ হিসেবে। লেভেল ওয়ান কোচ পুলিকার দায়িত্ব স্কুল ক্রিকেটে। স্বভাবতই ক্রিকেট সম্পর্কিত বিষয় এলে বাড়তি উন্মাদনা দেখানোর কথা। পুলিকারও তাই হলো।
নাশতা অর্ডার দিয়ে রেস্টুরেন্টের বাইরে ক্রিকেট নিয়ে কথাও হয়ে গেলো এক পাক। বিষয় বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার বৈরিতা কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতা; যেভাবে বলা যায়। দুই দলের খেলা হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা গ্যালারিতে যে উন্মাদনা, যে উত্তাপ ছড়ায়, যে লড়াইয়ের আমেজ তৈরি হয় সেটি নিয়ে প্রশ্ন করতেই পুলিকা বলেন, ‘খেলার সময় এরকম হয়, কিন্তু আমার জানামতে দুই দলের সম্পর্ক ভালো। ব্যক্তিগত কোনো কিছু তো নেই। আমার কথা বললে, আমার এরকম কখনো মনেই হয়নি।
এই প্রসঙ্গ উঠে আসে দুই দলের ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনেও। হাইব্রিড মডেলের এশিয়া কাপে ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে আগামীকাল বৃহস্পতিবার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় খেলাটি শুরু হবে।
পাল্লেকেলের ইনডোরের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে দুই দলের অধিনায়কই বৈরিতা নিয়ে ছিলেন এক মেরুতে। অর্থ্যৎ দুজনের ভাবনাই এক। সাকিব আল হাসান জানান তারা বৈরিতা নিয়ে কোনো চিন্তা করেন না। লঙ্কানদের বিপক্ষে খেলা হলে তারা ভালো খেলেন।
‘আবেগের ক্ষেত্রে আসলে ম্যাচ খেলে বোঝা যাবে আমরা কোন অবস্থায় আছি। ড্রেসিংরুম এখন অনেক বেশি শান্ত। আসলে আমি বৈরিতা হিসেবে চিন্তা করতে চাই না। এই দলের খেলা হলে আমরা বেশ ভালো ক্রিকেট খেলে থাকি।’ পেশাদার সাকিব বরং আর্থিক দিকটিও সামনে নিয়ে আসলেন, ‘এই ব্যাপারটি দর্শক এবং ব্রডকাস্টারদের জন্য বেশ ভালো। একটি ভালো ম্যাচ দেখা যায়।
স্বাগতিক দলের অধিনায়ক দাসুন শানাকাও যেন সাকিবের সুরে তাল মেলালেন, ‘এটা আসলে বাইরের ব্যাপার বলেই মনে হয়। আমাদের দুই দলের খেলোয়াড়দের মাঝে সম্পর্ক ভালো। বাইরের ব্যাপার তো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমাদের ভাতৃত্ব ভালো।
নিদাহাস ট্রফি, গত এশিয়া কাপসহ দুই দলের খেলার আগে-পরে কিংবা খেলার মাঝে বেশি কিছু ঘটনার কারণে দুই দলের বৈরিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। কিন্তু মাঠে নামার ২৪ ঘণ্টা আগে দুই দলের অধিনায়ক যেভাবে সাদা পতাকা তুলে ধরলেন তাতে বৈরিতা ছাপিয়ে ভাতৃত্বের সন্ধির দেখা মিলছে।
মাঠের লড়াইয়ের ঝাঁজ কেমন হবে তা টের না পাওয়া গেলেও শানাকা বাংলাদেশকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ঠিকই, ‘আমরা জানি আমরা ভালো দল। বাংলাদেশও ভালো দল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা এশিয়া কাপ বা কোনো বিশ্বকাপ জেতেনি। তাদের সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় আছে। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে এটি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কোথাও না কোথাও শুরু করতে হবে। আগে আমরা ভারতের বিপক্ষেই বেশি খেলতাম। এখন ব্যাপারটি নতুন। বাংলাদেশ ভালো করতে চায়। আমি ‘‘রাইভালরি’’ দেখি না। তবে ক্রিকেটের ধরনই এমন।
মাঠের বাইরে যতই উত্তাপ, উন্মাদনা ছড়াক না কেন সেগুলো ক্রিকেটারদেরও কিছুটা স্পর্শ করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু অধিনায়কদের হিসেব তো আলাদা। তাইতো ভাতৃত্বের সন্ধি হৃদয়ে এঁকে হাজির হয়েছিলেন গণমাধ্যমের সামনে। কিন্তু ২২ গজে তারা হয়ে উঠবেন যোদ্ধা তা বলতে দ্বিধা নেই। যেমনটা পাওয়া যাবে গ্যালারিতে, দুই দেশের সমর্থকদের ভেতরেও।
নিউজ /এমএসএম