নওগাঁর বদলগাছীর আধাইপুর ইউনিয়নে ভিজিডি ২০২৩-২৪ইং অর্থবছরে ভালনারেবল উইমেন বেনেফিট (ভিডব্লিউবি) কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ভিজিডি কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সদ্য প্রকাশিত অত্র ইউনিয়নের ২৪১ টি ভিজিডির চুড়ান্ত তালিকা তৈরীতে একাধিক নামের তালিকায় অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চুড়ান্ত তালিকায় নাম যোজন করেন।
অনলাইনে আবেদন করেও লটারীর নামে তালিকা তৈরী করে গরীব ও প্রকৃত দুস্থদের বঞ্চিত করে বিত্তবান লোকজনেরা তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন এবং অসচ্ছল, অসহায়দের পরিবর্তে কয়েক বিঘা জমিজায়গা, পাঁকা দালান বাড়ি, মোটরসাইকেলসহ ব্যবসা করে এমন ব্যক্তিরাই ভিজিডি কার্ডের নামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
জানাযায়, ভিজিডি কার্ডের নির্দেশনামূলক বিধিমালায় বলা হয়েছে তালিকায় ১ম অগ্রাধিকার পাবেন স্বামীহারা দুস্থ নারী, ২য় পরিবারের প্রধান নারী, যার অন্য কোন আয়ের উৎস নেই, ৩য় ১৫ শতকের কম জমির মালিক, ৪র্থ বসত বাড়ির অবস্থান খারাপ বা দিন দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে এমন পরিবার। উল্লেখ্য কোন অবস্থাতেই স্বচ্ছল পাকা বাড়ির মালিকের স্ত্রীর নাম অন্তর্ভূক্ত করা যাবেনা। সরকারি ওই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থ, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চুড়ান্ত তালিকায় স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
সরেজমিনে বদলগাছীর আধাইপুর ইউপির ভিজিডির তালিকার যাচাইবাছাই করে ভিজিডি পাওয়া ২জন নারীর তথ্য সংগ্রহে উঠে আসে চমকপ্রদ তথ্য। মোসাঃ ফাইমা স্বামী মোঃ একরামুল গ্রাম চক গোপাল ও মোসা ফেরেজা স্বামী রেজাউল ইসলাম,গ্রাম চক আলম গ্রামে ফাইমার বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় প্রায় ১০ কাঠার উপর বাড়ি, বাড়িতে গরু,ছাগল, সম্পন্ন ইটের তৈরী বাড়ি। মাঠেও ফাইমার নামে জমি আছে। ফাইমার স্বামী একরামুল ঘর জামাই থাকে। ফাইমার পিতার কোন ছেলে না থাকায় একরামুলকে ঘর জামাই করে রেখেছেন।এবং রোজিনার বাড়ী প্রায় এক বিঘা জমির উপরে এবং বাড়ির সামনেই রয়েছে কয়েক বিঘা জমিজমা।
স্থানীয়রা বলেন, অবস্থাশালী পরিবারের মহিলাদের বাছাই করে ভিজিডির কার্ড দিয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে। এই গ্রামে অনেক দুস্থ পরিবার রয়েছে তারা অন লাইনে আবেদন করার পরও তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান,দলের কর্মি হওয়ায় ধনী লোকদের ভিজিডির লিষ্টে নাম দিয়েছে। স্থানীয়রা আরও বলেন, চক আলম গ্রামে অনেক দরিদ্র পরিবার ও নৃগোষ্ঠির পরিবার রয়েছে। তাদের কে না দিয়ে অবস্থাশালী যাদের সম্পদ আছে তাদের দেওয়া হয়েছে। এসব ভিজিডি কার্ড ধারীর স্বামীরা দলের লোক। আমাদের এই গ্রাম থেকে অনেকেই অনলাইনে আবেদন করেছে। কিন্তু লাভ হয় না। চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং দলের লোক ছাড়া ভিজিডির কার্ড পাওয়া যায় না। একটা কার্ডও সুপারিশ ছাড়া হয় না। আমাদের দাবী প্রকৃত উপকারভোগী, দুস্থ ও অসহায় পরিবারের মধ্যে এসব কার্ড বিতরণ করা হোক।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানাযায়, আধাইপূর ইউনিয়নের প্রত্যেক ইউপির সদস্যরা ৬টি করে কার্ড ভাগে পেয়েছে আর চেয়ারম্যান পেয়েছে ১৮টি। বাকি কার্ড রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও উপজেলা পরিষদের জন্য বরাদ্দ করা হয়। এটা নাকি উপর থেকেই ভাগ করা হয়েছে। কার্ডের নামের লিষ্ট কয়েকবার যাচাইবাছাই করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার ইসলাম বলেন, আমি ৬টি ভিজিডির কার্ড ভাগে পেয়েছি। চক আলম গ্রামে ঐ দুইটি কার্ড আমি দেয়নি। কে দিয়েছে আমি জানিনা। আমি ছাড়াও চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরাও দিতে পারে।
এ ব্যাপারে আধাইপুর চেয়ারম্যান বলেন, আমি ১৮টি ভিজিডির কার্ড ভাগে পেয়েছি। আমার পরিষদে মোট ৯০টি ভিজিডি কার্ড বরাদ্দ হিসাবে পেয়েছি। আমার দেওয়া ভিজিডি কার্ড যাচাইবাছাই করে দেখেন। কে কার্ড দিয়েছে আমি জানিনা। উপর থেকেই কার্ড ভাগাভাগি হয়। উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাগ, এমপির ভাগ, দলের ভাগ। আপনি যদি নাম বলেন আমি নাম কাটার ব্যবস্থা করছি।
এ ব্যাপারে আধাইপুর ইউনিয়নের দ্বায়ীত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার ইবনে সাব্বির বলেন, আধাইপুর ইউনিয়ন পরিষদে একদিন আমি যাচাইবাছায়ের জন্য গিয়েছিলাম। ভিজিডির অনলাইনে যারা আবেদন করেছিল তারা উপস্থিত ছিলো। চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা পরে নাম যাচাইবাছাই করে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে বদলগাছী মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, ভাগ বলতে এমপি সাহেব কিছু নাম দিয়েছেন, উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব দিয়েছেন, না হয় অন্য কেউ দিয়েছে। আপনে লিখিত একটা অভিযোগ দেওয়ান কাউকে দিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আমরা ব্যবস্থা নিবো।
এ ব্যাপারে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও যাচাইবাছাই কমিটির সভাপতি আলপনা ইয়াসমিন বলেন, আপনি আমাকে কয়েকটি নাম দেন আমি যাচাইবাছাই করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।