সরকারি আমলাদের জন্য প্রশংসা করা কারো চোখে বেমানান মনে হলেও প্রকৃত অর্থে কাজের ধারাবাহিক গতি যখন অস্বাভাবিকভাবে ভালো হয় সাধারন মানুষের ও অসহায় নিপীড়িত মানুষের পক্ষে হয়, সেবার মান বাড়ে, ভোগান্তি কমে, তখনতো অকপটে বলাই যেতে পারে তিনি জনবান্ধব ও বিপদগ্রস্ত মানুষের আশ্রয়স্থল। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কর্তব্য অবহেলা, জনহয়রানি ও ঘুষ-দুর্নীতিসহ অভিযোগের শেষ নেই জনগণের।
তবে এর ব্যতিক্রম কর্মোদ্যম, সৎ ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাও রয়েছে। যারা লোভ লালসার উর্ধ্বে উঠে নিজ প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তোলেন জনবান্ধব ও বিপদগ্রস্ত মানুষের আশ্রয়স্থল। এদের মধ্যে একজন সুন্দরবন বেষ্টিত দক্ষিণ জনপদ কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মমিনুর রহমান এমনটি বলছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সেবা নিতে আশা একাধিক নারী ও পুরুষ।
সরেজমিনে ঘুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে সেবা নিয়ে ফিরে যাওযার সময় এ প্রতিবেদকের কাছে এমন মন্তব্য সাধারন সেবা প্রার্থীদের।
আমাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জুয়েল বলেন, ইউএনও স্যারের কাজে যোগদানের অর্ধ বছরও পূর্ণ হয়নি এর ভেতর সেবা, সততা আর অদম্য কর্মস্পৃহা দিয়ে জয় করে নিয়েছেন কয়রাবাসীর মনে। ফলে এই এলাকার সাধারণ মানুষের এখন জনদূর্ভোগ ও ভোগান্তি নেই বললেই চলে।
উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার নূরুল ইসলাম কোম্পানী বলেন, উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের সব এলাকায় তার অবাধ বিচরণ। এর মধ্যে জনবান্ধব ও সেবাবান্ধব সাংবাদিক বান্ধব কর্মকর্তা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন ইউএনও মমিনুর রহমান।
দৈনিক আমাদের সময়ের কয়রা প্রতিনিধি শেখ মনিরুজ্জামান মনু বলনে, উপজেলার দরিদ্র, অসহায়, দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে গণমাধ্যম কর্মীও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়ে তিনি সমস্যাটি তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করেন এবং মনোযোগ সহকারে শোনেন অসহায় মানুষের কষ্টের কথা। সমাধান করেন তাদের সমস্যা। এমন দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে উপজেলার সর্বমহলে প্রশংসিত হন এই মানবিক কর্মকর্তা ইউএনও মমিনুর রহমান।
সবুজ আন্দোলন, কয়রা উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোঃ আবুবকর সিদ্দিক বলেন, বর্তমান ইউএনও মহোদয় আসার পর থেকে নির্বাহী আদালতের কার্যক্রম সুষ্ঠ ও সঠিকভাবে চলতেছে। মামলা গ্রহন থেকে শুরু করে মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত করা সহ আইনী সহায়তা দিয়ে বিচারপ্রার্থীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
জানা যায়, গত ২২ নভেম্বর তিনি কয়রায় যোগদানের পুর্বে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। মোঃ মমিনুর রহমান ৩৩ তম বিসিএস প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। কয়রায় যোগ দানের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ কেউ যেন গৃহহীন না থাকে, সেই লক্ষ্যেও দৃঢ় চিত্তে কাজ করছেন এই কর্মকর্তা। যোগ দান করেই মুজিববর্ষের উপহার আশ্রয়ন প্রকল্পের ১৫০ টি ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। নির্মাণে মানসম্মত উপকরণ ক্রয়ের ক্ষেত্রেও কোনো ছাড় দিচ্ছেন না তিনি। তাছাড়া গণমাধ্যম, ফেসবুক, মুঠোফোন ও ই-মেইলের মাধ্যমে পাওয় বিভিন্ন অভিযোগ দ্রুত সমাধান ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। জনগণ সেবা পাচ্ছেন ভোগান্তি ছাড়া।
অধ্যক্ষ আদ্রিশ আদিত্য মন্ডল বলেন, মানুষ বাঁচে তার কর্মে, বয়সে নয়। এ মূলমন্ত্রকে মনে প্রাণে লালন করে নিজ দায়িত্বের বাইরেও অনেক কাজ করে যাচ্ছেন এই কর্মকর্তা। দিন-রাত ধরেই চলছে তার এসব মানবিক কার্যক্রম। দেশের প্রতিটি উপজেলায় এমন একজন করে সৎ, উদ্যমী, আদর্শিক ও মানবিক, জনবান্ধব দেশপ্রেমিক ইউএনও’র উদয় হোক, যার বদান্যতায় বদলে যাবে সেই অঞ্চলের সেবার দৃশ্যপট, ফিরে পাবে মানুষ তার নাগরিক অধিকার। আর এভাবেই এমন মানবিক ও কর্মঠ কর্মকর্তাদের আন্তরিকতায় আগামী দিনগুলোতে গোটা দেশটাই হয়ে উঠুক এক নির্ভেজাল সেবার মঞ্চ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মমিনুর রহমান বলেন, সুন্দরবন বেষ্ঠিত উপকূলীয় এই উপজেলাকে একটি আধুনিক উন্নত উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। এটি আমার নৈতিক দায়িত্ব। স্থানীয় মাননীয় সংসদ সদস্য, মান্যবর জেলা প্রশাসক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং সমাজের বিশিষ্টজনেরা সব সময় আমার কাজে সহযোগিতা করছেন। তিনি আরো বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা জনগণের সেবক। নিজে কি পেলাম সেটা বড় কথা নয়, দেশ ও জাতীর জন্য আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি মাত্র।