শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
শালবাহান ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত রাণীশংকৈলে বৃষ্টির জন্য ইস্তিকার নামাজ অনুষ্ঠিত প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে আলোচনায় নুর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল হকনগর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির নির্বাচন সম্পন্ন চেয়ারম্যান প্রার্থী আমজাদ আলীর সমর্থনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ছাতকে সরকারী খাল দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদেরকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে—- পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে সময় মতো ব্যবস্থা নেয়া হবে- ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে মরিশাসের প্রতি তথ্য প্রতিমন্ত্রীর আহ্বান

স্মার্ট সিলেট গড়তে বিকল্প নেই আনোয়ারুজ্জামানের

দেওয়ান রফিকুল হায়দার (ফয়সল)
  • খবর আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০২৩
  • ২২৫ এই পর্যন্ত দেখেছেন

২১ জুন (বুধবার) সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধূরীকে নির্বাচনে প্রতিদ্ধন্ধিতা করার জন্য স্বয়ং দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়েছেন। তার এই মনোনয়ন পাওয়ার পূর্বে শুধু মুখে মুখে শোনা যাচ্ছিল যে, সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নির্বাচন করবেন। এ নিয়ে নানা ধরণের গুঞ্জন শুরু হয়েছিলো। সিলেট আওয়ামী লীগের পুরাতন নেতা যারা আছেন তারাও প্রতিবাদ করে বলেছেন, আমরা সারা জীবন আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করছি, দুর্দিনের সময়ে জনগণকে সাখে নিয়ে আন্দোলন করেছিা এখন যুক্তরাজ্য থেকে কেউ এসে ’উড়ে এসে জুড়ে বসা’র মতো’ যদি সিলেট মহানগরীর দায়িত্ব নিতে আসেন তা হলে মেনে নেয়া কিভাবে সম্বব? আমরা তা মেনে নিতে পারি না।

সিলেট আওয়ামী লীগের পুরনো প্রভাবশালী এসব নেতৃবৃন্দের কাছে এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে, যদি আপনারা এতোই জনপ্রিয় হয়ে থাকেন তাহলে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা প্রাক্তন মেয়র বদর উদ্দীন কামরান সাহেব মারা যাওয়ার পর বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধূরী কি ভাবে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পেলেন। আপনাদের জনপ্রিয়তা তখন কোথায় ছিলো? আরিফ চৌধুরী একবার নয়, একনাগারে দুই দুইবার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরও তো বিএনপি’র বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন গড়ে তোলা আপনাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি! এই নীরবতার রহস্য কি, তা সিলেটের জনগণ অবশ্যই জানতে চায়।

গত সপ্তাহে সিলেটের একটি স্থানীয় অনলাইন টিভিতে ’শ্রীহট্ট টক’ নামে সরাসরি আশীষ দে’র পরিচালনায় একটি অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে অংশ গ্রহণ করেন প্রবাসের যে সকল আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, তাদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক, লেখকও। অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করেন সুজাত মনসুর মনসুর, মকিস মনসুর, তওহিদ ফিতরাত হোসেন, রুহুল আমিন রুহেল এবং জুয়েল রাজ। এই অনুষ্ঠান আমি পুরোটাই দেখেছি। তাদের বক্তব্যে তারা আশা প্রকাশ করেছেন যে, যদি আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেটের মেয়র নির্বাচিত হন, তাহলে সিলেটবাসী তথা প্রবাসীদের যেসব অসুবিধা আছে সবই তাঁর জানা আছে। তারা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে তাঁকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবেনা কি কাজ করতে হবে।

আনোয়ারুজ্জামান শুধু যুক্তরাজ্যেরই আওয়ামী লীগের নেতা নন, তিনি একই সাথে সিলেটের জনগণের সাথেও রাজনীতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জুয়েল রাজ একটি জরুরী কথা বলেছেন যে, যদি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেন, তাহলে বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে শুধু সিসিক নির্বাচনেই নয, যে কোন নির্বাচনে আটকানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে তা পরীক্ষিত।

আমি যখন লন্ডনের ’নতুন দিন’ পত্রিকায় কাজ করি তখন থেকেই দেখে এসেছি আনোয়ারুজ্জামানের রাজনৈতিক কর্মকান্ড। দিনরাত কোন ভেদাভেদ নেই। সারাদিন – রাত ব্যস্ত শুধু রাজনীতি নিয়েই। কঠোর পরিশ্রমী, সবাইকে আপন করে নেয়ার অভিজ্ঞতা, কমিউনিটির যে কোন কাজে সবার আগে এগিয়ে যাওয়া, মানুষের প্রতি ভালবাসা ইত্যাদি গুণাবলী থাকার কারণেই রাজনীতির জীবনে এতদূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে তাঁর পক্ষে। ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সহ সাধারণ সদস্যদের সাথেও রয়েছে তাঁর আন্তরিকতার বন্ধন। তার মধ্যে নেই কোন অহংকার, লোভ-লালসা। তিনি একজন ইয়াং মানুষ।

দূরদর্শী চিন্তাধারার অধিকারী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তিনি সৎ, কর্মঠ এবং জনগণের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন মনোভাবের ইয়াং জেনারেশনকে ভাবিষ্যতে আওয়ামী লীগের নেতুস্থানীয় পদে বহাল করার যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, আমার মনে হয় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও তাদের মধ্যে একজন। সত্যি কথা বলতে কি, এ ধরণের ইয়াং জেনারেশন থেকে যদি বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার প্রতিটি অঞ্চলে থেকে নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারেন তাহলে বাংলাদেশ থেকে একদিকে যেমন আগের মতো একটি শক্তিশালী আওয়ামী লীগ গড়ে ওঠবে, অন্যদিকে তাদের নেতৃত্বে ক্ষমতালোভী, চোর লুঠেরাদের হঠিয়ে প্রধানমন্ত্রীর একটি ’স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।

একটি পত্রিকার খবরে পড়েছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ’দেশের প্রতিটি আওয়ামী লীগ নেতাদের কার্য্যকলাপের ইতিহাস সব আমার হাতে আছে।’ আমি তখন ভেবেছিলাম, তা কিভাবে সম্ভব? তিনি একজন প্রধানমন্ত্রী, দেশ চালাতেই কি পরিমাণ পরিশ্রম করতে হচ্ছে এর মধ্যে আবার সব নেতাদের কার্য্যকলাপের ইতিহাসও তাঁর হাতে আছে! নিজের মনকে যেন বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। সিসিক নির্বাচনে তিনি যখন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে মনোনয়ন দিলেন তখনই আমি বুঝতে পেরেছি আমাদের প্রথানমন্ত্রীর হাতে সব নেতারই কর্মের ইতিহাস আছে। তা একমাত্র সম্ভব হয় একজন সৎ নিষ্ঠাবান মানুষের পক্ষে।

এবার আসি বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর কথায়। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সিসিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে পারেন বলে যখন সিলেটে নানা গুঞ্জন শুরু হয় তখন আরিফুল হক চৌধুরী বেসামাল হয়ে সম্প্রতি লন্ডন এসেছিলেন তাঁর নেতা তারেক রহমান এর সাথে দেখা করতে। তাকে তিনি বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, বিএনপি থেকে যদি নির্বাচন না করি তাহলে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নমিনেশন পেয়ে গেলে তাঁর সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করার মতো আমি ছাড়া সিলেটে আর কেউ নেই। সুতরাং আমাকে দল থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা করার সুযোগ দেয়া হোক। জানা গেছে, তারেক রহমানের সাথে দেখা করতে তাঁর বেশ বেগ পেতে হয়েছে। প্রথমে নাকি দেখা করতেই চাননি। পরে অবশ্য দেখা করেছেন তবে আরিফের কথা শুনে তারেক রহমান সোজাসুজি কোন উত্তর দেননি। লন্ডন থেকে সিলেট ফিরে সাংবাদিকদের আরিফ নিজেই বলেছেন, নেতা আমাকে নির্বাচন করার ব্যাপারে রেড বা গ্রিন সিগন্যাল কোনটাই দেন নি। আরিফ আরও বলেন, নেতা নাকি বলেছেন শেখ হাসিনার অধীনে তারা কোন নির্বাচনেই অংশ নেবেনা।

এদিকে গত ১লা মে আরেকটি পোর্টালে ’নির্বাচনে প্রর্থী হচ্ছেন আরিফ’ শিরোনামে খবরের একটি অংশ এখানে তুলে ধরছি ”নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে সকল জল্পনা-কল্পনার অবাসন ঘটিয়েছেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আগামী সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আভাস দিয়েছেন তিনি।
”মে দিবস উপলক্ষে রোববার দুপুরে নগরের রেজিষ্ট্রি মাঠে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের শোভযাত্রা এবং সমাবেশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা এখন অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে আছি। অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমাদের দল (বিএনপি) অংশ গ্রহণ করবেনা। তবে সিলেটের প্রেক্ষাপটে আমরা নির্বাচনে যাব।”

’সিলেটের প্রেক্ষাপটে আমরা নির্বাচনে যাব’ আরিফুল হক চৌধুরীর কথায় বুঝা যাচ্ছে, তিনি তাঁর নেতার কাছ থেকে ’এম্বার’ সিগন্যাল পেয়ে এসেছেন। অর্থাৎ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে পাশ করলে আমরা আবার দলে নেবো আর ফেল করলে আউট। এমতাবস্থায় আমার মনে হয়, আরিফুল হক চৌধুরী তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বিরাট এক ঝুঁকি নিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার কথা চিন্তা ভাবনা করছেন। আরিফুল হক চৌধুরী যদি নির্বাচনে দাঁড়ান তাহলে তাকে চিন্তা করতে হবে তাঁর পক্ষে কতজন লোক আছে? কেননা যারা প্রকৃত বিএনপি’র রাজনীতিতে বিশ্বাসী তারা কোন সময়েই তাদের নেতার কথার অবাধ্য হবেন না আর যারা মধ্যপন্থী তারা সাধারণত; যারা বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা তাদের পক্ষই নেয়।

সুতরাং রাজনৈতিক বিশেজ্ঞদের মতে, আরিফুল হক চৌধূরী মেয়র নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সাথে প্রতিদ্বন্ধিতায় গিয়ে যদি হেরে যান তাহলে তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হলেও বিস্ময়ের কিছু নেই। উল্লেখ্য যে, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন।

গতকাল সিলেটের কয়েকজন সাংবাদিক বন্ধুদের সাথে আলাপকালে তারা বলেছেন, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে বিরাট জনমত গড়ে ওঠেছে। এই নির্বাচন নিয়ে সিলেটের জনগণের মধ্যে প্রাণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য থেকে আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে প্রবাসীদের সাপোর্ট এই নির্বাচনে বিশেষ অবদান রাখবে বলে তাদের বিশ্বাস।

সবশেষে আনোয়ারুজ্জামানকে বলতে চাই, জনগণের সাপোর্ট দেখে খুশীতে ডগমগ হওয়ার কোন কারণ নেই। তাকে মনে রাখতে হবে ”ঘরের শত্রু বিভীষণ’। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের যে ফুল সাপোর্ট সে পাবে তাতে আমার সন্দেহ আছে। তাছাড়াও এবারের নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সিলেট মহানগর শাখার সহসভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। জাতীয় পার্টি সহ একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীও তৎপর। তবে বিএনপি’র মধ্যপন্থী যারা আছে, যারা সব সময়ই জিতের নৌকায় থাকে তাদের ভোটও আওয়ামী লীগের বাক্সে যাবে বলে আমার মনে হচ্ছে।

আ্ওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনোয়ারুজ্জামানের উপর যে বিশ্বাস এবং আস্থা রেখে তাকে সিসিক নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন সেই বিশ্বাস এবং আস্থা রক্ষার্থে দলের নেতৃবৃন্দের উচিৎ তাদের মধ্যে যে অর্ন্তদন্ধ আছে তা ভুলে গিয়ে সবাই এক যোগে কাজ করা যাতে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে সভানেত্রীর আত্মমর্য্যাদা সিলেটবাসী তথা দেশবাসীর কাছে আরও উজ্বল হয়ে ওঠে।

লেখকঃ কলামিষ্ট, সিনিয়র সাংবাদিক ও সদস্য লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব

 

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102