ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েশি দ্বীপে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ৩৪ হয়েছে। আহত কয়েক শ মানুষ। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার মামুজু শহরের হাসপাতালসহ অনেক ভবন-স্থাপনা। বাস্তুচ্যুত হয়েছে হাজারো মানুষ।
উদ্ধারকর্মীরা এখন উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন। দেশটির কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আজ শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপি এই তথ্য জানায়।
বিবিসি বলছে, ভূমিকম্পটি প্রায় সাত সেকেন্ডের মতো স্থায়ী ছিল। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল দ্বীপের মাজেনি শহর থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে। কেন্দ্রস্থলের গভীরতা ১০ কিলোমিটার।আরও পড়ুনইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪, আহত কয়েক শ
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানায়, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল দ্বীপের মামুজু শহর থেকে ৩৬ কিলোমিটার দক্ষিণে। কেন্দ্রস্থলের গভীরতা ১৮ কিলোমিটার।
স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ২ মাত্রার এই ভূমিকম্প সুলাওয়েশি দ্বীপে আঘাত হানে।
ভূমিকম্পে দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। তারা প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ স্থানের দিকে ছোটে।
স্থানীয় দুর্যোগ প্রশমন সংস্থার প্রধান আলি রহমান বলেন, সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, শুধু মামুজু শহরেই ২৬ জন নিহত হয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
আলি রহমান বলেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন।
পৃথকভাবে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ সংস্থা জানিয়েছে, দক্ষিণ মামুজু শহরে অন্তত আটজন নিহত হয়েছে।
ভূমিকম্পে মামুজু হাসপাতাল গুঁড়িয়ে গেছে। হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপের নিচে বেশ কিছুসংখ্যক রোগী ও হাসপাতালের কর্মী আটকা পড়েছেন। তাঁদের উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। মামুজু শহরের উদ্ধারকারী সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, হাসপাতালটি একেবারে ধসে গেছে। হাসপাতালটি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে রোগী ও হাসপাতালের কর্মীরা আটকে আছেন। তাঁদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন উদ্ধারকর্মীরা। তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে ঠিক কতজন রোগী ও হাসপাতালকর্মী আটকা পড়েছেন, তা সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি তিনি।
দেশটির অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পে একটি হোটেলের অংশ বিশেষে ধসে পড়েছে। এ ছাড়া আঞ্চলিক গভর্নরের অফিসও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মামুজুর বিমানবন্দরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মামুজুর এক অধিবাসী বলেন, ভূমিকম্পে পুরো শহরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতির মাত্রা ব্যাপক।
হেন্দ্রা নামের ২৮ বছর বয়সী এক যুবক বলেন, শহরের অনেক সড়কে ফাটল ধরেছে। অনেক ভবন ধসে পড়েছে। ভূমিকম্পটি খুবই শক্তিশালী ছিল। ভূমিকম্পে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। এ সময় স্ত্রীর সঙ্গে এক দৌড়ে ঘরের বাইরে চলে যান তিনি।
ভূমিকম্পের সময়ের যেসব ছবি ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা যায়, লোকজন দৌড়াদৌড়ি করছেন। তাঁদের চেহারায় আতঙ্ক।
ভূমিকম্পের পর দেশটির আবহাওয়া সংস্থা স্থানীয় অধিবাসীদের পরাঘাতের ব্যাপারে সতর্ক করে। সুনামির আশঙ্কায় সৈকত এলাকা এড়িয়ে চলতে বলে।
আবহাওয়া সংস্থার প্রধান দ্বিকোরিটা কর্ণবতী (Dwikorita Karnawati) বলেন, ভূমিকম্পের মতোই পরাঘাত শক্তিশালী হতে পারে। এমনকি পরাঘাতের মাত্রা ভূমিকম্পের চেয়েও বেশি হতে পারে। পরাঘাতের জেরে সুনামি হতে পারে। সুনামি দ্রুত আঘাত হানে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।
২০১৮ সালে সুলাওয়েশি দ্বীপের পালু শহরে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর সুনামি হয়। এতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়।