

টপকে দেয়াল একটা শেয়াল
ঢুকলো আমার বাড়িতে,
ইতিউতি তাকাচ্ছিলো
লেজ নাড়িতে নাড়িতে।
আমায় দেখে ঘাবড়ে গিয়ে
চাইলো ছুটে পালাতে,
হুমড়ি খেয়ে পড়লো গিয়ে
কল পাড়ের অই নালাতে।
আমি বললাম, জ্বালাসনে।
ভয় নেই তোর, পালাসনে।
শেয়াল আমার খুবই প্রিয়
দেখতে দারুণ রূপসী,
শেয়াল বললো, খাওয়াও কিছু
আজ সারাদিন উপোসী।
মুর্গি-টুর্গি পাইনি কিছুই
ক্লান্ত শরীর, ক্ষুধার্ত।
বন্ধু তোমার অনেক দয়া
তুমি অনেক উদার তো!
হাতের কাছে পেয়েও আমায়
মারতে তুমি আসোনি।
আমায় দেখে অনাবশ্যক
হিংস্র হাসি হাসোনি।
লোকালয়ে এলেই মানুষ
পা ভেঙে দেয় পিটিয়ে,
মারতে মারতে মেরেই ফেলে
মনের খায়েশ মিটিয়ে!
আমি বললাম, নেই জুড়ি তোর
মুরগি চুরির বেলাতে,
লোকসাহিত্যে কীর্তি তোদের
সবাই পারে মেলাতে।
পশুর রাজ্যে তুই নাকি ভাই
সবচে জ্ঞানী, জঙ্গলে?
‘শেয়াল পণ্ডিত’ উপাধী তোর
বনের পশুর দঙ্গলে?
বুঝে পাই না তুই সকলের
ক্যাম্নে হলি মামা রে!?
দেশ-বিদেশের গল্পে গল্পে
তোদের আমলনামা রে…
বললো শেয়াল, বন্ধু তোমরা
নিষ্ঠুরতার নমুনা।
সাক্ষী আকাশ মৃত্তিকা ঘাস
পদ্মা মেঘনা যমুনা।
মুরগি চুরির অভিযোগে
বেদম পেটাও শেয়ালকে,
ভাঙতে হবে মধ্যযুগের
শত্রুতার এই দেয়ালকে।
মানুষেরা রোজ প্রতিদিন
নিমজ্জিত চুরিতে,
নমুনা তার বাড়ি গাড়ি
নমুনা তার ভুঁড়িতে।
আমি বললাম, তোর অভিযোগ
মানছি, আমি লজ্জিত।
মারতে তোদের অনেক মানুষ
লাঠি নিয়ে সজ্জিত!
বললো শেয়াল, তোমরা এতো
অবুঝ কেনো! আহারে…
অমানবিক খেলায় মাতো
নালিশ জানাই কাহারে!
আমরা শেয়াল মুরগি খাবো
সেটাই নিয়ম প্রকৃতির,
তোমরা মানুষ নাম দিয়েছো
‘ফুড চেইন’ এই নিয়মটির।
মুরগি তো ভাই তোমরাও খাও!
(যদিও আমরা রাঁধি না),
তাহলে কি আমরা তোমরা
সমান অপরাধী না?
বাজার থেকে যদিও শেয়াল
মুরগি কিনতে পারে না,
শিকার করে। তবুও মানুষ
চোর বলতে ছাড়ে না।
টাকা চুরির টার্গেটে ভাই
লোকালয়ে ঘুরি না।
মানুষ কবে বুঝতে শিখবে
‘শিকার’ মানে ‘চুরি’ না…
আমি বললাম, শেয়াল রে তুই
বক্তৃতাটা থামা তো!
মানুষ যদি তোদের মতো
সত্যি মাথা ঘামাতো–
তাহলে তো পাল্টে যেতো
হানাহানির দুনিয়া!
লেজ দুলিয়ে শেয়াল হাসে
আমার কথা শুনিয়া…