চা শিল্পের উন্নয়নে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুগান্তকারী সব উদ্যোগের ধারাবাহিকতা ও বর্তমান সরকারের নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে দেশের চা শিল্প টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের চা শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে চা উৎপাদনকারী ও বিপণনকারীদের পাশাপাশি বড় ভূমিকা পালন করছে এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট অদম্য শ্রমিকগণ।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি আরও বলেন, চা শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। শ্রমঘন এ শিল্পে শ্রমবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বাগান মালিকগণ কাজ করে চলেছেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চা শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে হবে।
রোববার (৪ জুন) দুপুরে শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ৩য় জাতীয় চা দিবস উদযাপন ও জাতীয় পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য, চা শিল্পের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন চা শ্রমিকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এবার চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলে বর্নাঢ্য আয়োজনে ৩য় জাতীয় চা দিবস-২০২৩ উদযাপিত হলো।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসিবে উপস্থিত ছিলেন অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইফ উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ এমপি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো: আশরাফুল ইসলাম এনডিসি, পিএসসি।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিসবাহুর রহমান, এফবিসিসিআই এর সভাপতি মো: জসিম উদ্দিন, টি ট্রেডার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ এর সভাপতি শাহ মঈনুদ্দিন হাসান, বাংলাদেশীয় চা সংসদের সভাপতি কামরান টি রহমান এবং সাধারণ চা শ্রমিকদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নৃপেন পাল।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইফ উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন। চা শিল্পের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সবাই শ্রমিকবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বারুপ করেছেন। কাজেই চা শিল্পের উন্নয়ন ও দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে চা বাগান মালিক ও বিপণনকারীসহ সবাইকে শ্রমিকবান্ধব চা শিল্প গড়ে তুলতে হবে।
চা শ্রমিক নৃপেণ পাল চা শ্রমিকদের ভূমি অধিকার এবং মজুরী বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন।
আলোচনা সভা শেষে বেলা ১২টায় দেশের চা শিল্পে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবছরই প্রথম আট ক্যাটাগরি নির্ধারণ করে ‘জাতীয় চা পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সীসহ অতিথিরা বিজয়ীদের মাঝে এই পুরস্কার তুলে দেন।
বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন, একর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী চা বাগান ভাড়াউড়া (ফিনলে টি কম্পানি), সর্বোচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন চা উৎপাদনকারী বাগান মধুপুর(কেদারপুর টি কোম্পানি), শ্রেষ্ঠ চা রপ্তানিকারক আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লি., শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্রায়তন চা উৎপাদনকারী মোঃ আনোয়ার সাদাত সম্রাট(পঞ্চগড়), শ্রমিক কল্যাণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা বাগান জেরিন (ইস্পাহানি টি কোম্পানি), বৈচিত্র্যময় চা পণ্য বাজারজাতকরণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ কোম্পানি কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট লি., দৃষ্টিনন্দন ও মানসম্পন্ন চা মোড়কের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা কোম্পানি গ্রিন ফিল্ড টি ইন্ডাস্ট্রিজ লি., শ্রেষ্ঠ চা পাতা চয়নকারী(চা শ্রমিক) উপলক্ষী ত্রিপুরা, নেপচুন চা বাগান,(ইস্পাহানি টি কোম্পানি)। পুরস্কার প্রদান শেষে চা দিবস উপলক্ষ্যে বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত দিনব্যাপী চা মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে দেখেন প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি।
চা মেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চা প্রদর্শন ও বিক্রি করা হয়। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু পাডেলিয়নে শ্রীমলস্থ টি মিউজিয়ামে রক্ষিত চা শিল্পের দুর্লভ জিনিসপত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থাও ছিল।
প্রসঙ্গত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৪ জুন চা বোর্ডের প্রথম বাঙালি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যেদিন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন সে দিনটিকে (৪ জুন) স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর দিনটি উদযাপিত হচ্ছে ‘জাতীয় চা দিবস’ হিসেবে। অনুষ্ঠানে দেশের চা-বাগান মালিক, শ্রমিক ও চা-শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
সিলেটের মালনিছড়া চা বাগানে ১৮৫৪ সালে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু করা হয়। ধীরে ধীরে এ অঞ্চলের অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে চা শিল্প বিকশিত হতে থাকে। উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে ব্রিটিশ শাসনাধীন উপমহাদেশের এ অঞ্চলে চা শিল্পের অগ্রগতি মূলত ব্রিটিশদের মাধ্যমেই হয়েছে।
নিউজ/এম.এস.এম