রাশিয়ার অর্ন্তগত পূর্ব সাইবেরিয়ার ইয়াকুতস্ক হচ্ছে বিশ্বের শীতলতম শহর। বছরের বেশির ভাগ সময়েই যেখানে তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নীচে। সম্প্রতি ইয়াকুতস্ক শহরে প্রবল ঠান্ডা পড়েছে। তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছে হিমাঙ্কের ৫০ ডিগ্রি নীচে। শেষ কবে এমন ঠান্ডা পড়েছে, মনে করতে পারছেন না বাসিন্দাদের অনেকেই।
পৃথিবীর উত্তরমেরু থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে ইয়াকুতস্ক শহরের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরিসংখ্যান বলছে, এখনও পর্যন্ত ইয়াকুতস্ক শহরের সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৬৪ ডিগ্রি। এ বারেও সেই রকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় বাসিন্দারা।
শীতকালে সেখানে প্রায়ই তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি নীচে। তবে এ বছরের শীতের তাপমাত্রা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশ খানিকটা বেশি। প্রবল শীতে জমে গিয়েছে গোটা শহর। নানা কৌশল অবলম্বনের পরেও হাড়কাঁপানো ঠান্ডাকে কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না।
এদিকে হিমাঙ্কের নীচে থাকা তাপমাত্রাতেই কী ভাবে দিব্যি দিন কাটিয়ে দিতে হয়, শীত কী ভাবে সহ্য করতে হয়, জানেন ইয়াকুতস্কের মানুষ। তাপমাত্রা নিয়ে অবশ্য কোনও অভিযোগ, অনুযোগ বা হতাশা নেই ইয়াকুতস্কের মানুষজনের। ঠান্ডায় তারা অভ্যস্ত। কী ভাবে দিন কাটান এই তাপমাত্রায়? জানিয়েছেন নিজেরাই।
রাশিয়ার একেবারে পূর্বে রাজধানী মস্কো থেকে পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইয়াকুতস্ক। পৃথিবীর চিরহিমায়িত অঞ্চলের মধ্যে পড়ে এই শহর।
২০২১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, ইয়াকুতস্ক শহরের লোকসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৫৫ হাজার। বাসিন্দাদের অধিকাংশ খনি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। রাশিয়ার দ্রুত উন্নয়নশীল আঞ্চলিক শহরগুলির মধ্যে অন্যতম ইয়াকুতস্ক।
ইয়াকুতস্কের একজন বাসিন্দা অ্যানাস্তেশিয়া বলেন, এই ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব নয়। হয় সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক পরতে হবে, নয়তো ঠান্ডায় কষ্ট পেতে হবে। অন্তত দু’টি মোটা ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে রেখেছিলেন অ্যানাস্তেশিয়া। হাতে পরেছিলেন দু’টি দস্তানা। সঙ্গে একাধিক টুপি এবং সোয়েটারও ছিল তার পরনে।
কী ভাবে ঠান্ডা সহ্য করার ক্ষমতা জোগান? অ্যানাস্তেশিয়া বলেন, এখানে ঠান্ডার অনুভূতিই হয় না অথবা, আমাদের মস্তিষ্কই ঠান্ডা সহ্য করার জন্য তৈরি হয়ে থাকে।
ইয়াকুতস্কের রাস্তাঘাটে সবসময়ইু বরফ জমে থাকে। তার উপর দিয়েই চলাফেরা করেন সকলে। শহর ঠান্ডায় জমে গেলেও জীবনপ্রবাহ সচল। বরফে ঢাকা রাস্তার উপর বরফে জমে যাওয়া মাছ বিক্রি করতে বসেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। মাছ তাজা রাখতে রেফ্রিজারেটরের প্রয়োজন হয় না। শীতলতম শহরে দিব্যি চলে শীতের বিকিকিনি।
গুচ্ছ গুচ্ছ গরম পোশাক পরাই ইয়াকুতস্ক শহরে জীবন অতিবাহিত করার প্রধান এবং একমাত্র চাবিকাঠি, জানান স্থানীয়রা। তারা সকলেই ‘বাঁধাকপির মতো পোশাক’ পরেন। মূলত বাঁধাকপিতে যেমন পাতার অজস্র স্তর থাকে। একটি একটি করে সেই স্তর খুলে ফেলা যায়। ইয়াকুতস্ক শহরের বাসিন্দারাও রোজ এই বাঁধাকপির মতো পোশাকেই আরাম খুঁজে নেন। পুরু আস্তরণযুক্ত গরম উলের তৈরি একাধিক পোশাক গায়ে চাপান তাঁরা। বরফের মাঝে সে ভাবেই কাটিয়ে দেন দিন।
নিউজ /এমএসএম