শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত

বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • খবর আপডেট সময় : বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১৭৯ এই পর্যন্ত দেখেছেন

করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিমানবন্দরগুলোতে পরীক্ষা করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ করে চীনসহ যেসব দেশে সংক্রমণ বেড়েছে, সেসব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের অবশ্যই পরীক্ষা করতে হবে। মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এরআগে নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে গত সোমবার প্রথম সচিব কমিটির সভায় অংশ নেন কবির বিন আনোয়ার। ওই সভায়ও এবিষয়টি আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মঙ্গলবার মন্ত্রিসভায় বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হলে তিনি সম্মতি দিয়েছেন। এছাড়াও গতকাল মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য শূন্য পদগুলো পূরণ করতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। পাশাপাশি কোভিড পরিস্থিতি ছাড়াও আজ বুধবার উদ্বোধন হওয়া স্বপ্নের মেট্রোরেল, এমআরটি পুলিশ গঠন, কর্মসংস্থান, লিবিয়ার শ্রম বাজার, প্রবাসী দিবস ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি গঠনের বিষয়টি গতকাল মন্ত্রিসভায় আলোচনা ও চূড়ান্ত হয়েছে।

পরে বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার সাংবাদিকদের জানান, করোনার নতুন সংক্রমণ ছড়িয়েছে এখন পর্যন্ত চীনসহ চারটি দেশে। এসব দেশ থেকে যারা বাংলাদেশে আসবেন তাদের অবশ্যই বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে। ইতিমধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চারটি বুথে এই পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

চারজনকে পাওয়াও গেছে, তাদের আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে যাতে এটা ছড়াতে না পারে সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মানুষকে মাস্ক পরানোসহ সামাজিক দূরত্ব যাতে মেনে চলে সেজন্য স্থানীয় প্রশাসনকে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আবারও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এবার ছড়াচ্ছে ওমিক্রনের নতুন উপধরন ‘বিএফ.৭’। এটি অতি সংক্রামক এবং শনাক্ত করা কঠিন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, চীনে নতুন করে ২৫ কোটিরও বেশি মানুষের দেহে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। ফলে ভারতসহ বাংলাদেশেও সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউ মোকাবিলায় সরকারের কোভিড বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটি ৪ দফা সুপারিশ জানিয়েছে।

জানতে চাইলে বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ ভোরের কাগজকে বলেন, সন্দেহজনক যাত্রী হলেই আমরা র‌্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষা করছি। চীন, জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে বিশেষ নজরদারির নির্দেশনা রয়েছে।

নতুন করে দুটি পল্লী উন্নয়ন একাডেমি হচ্ছে: দেশে আরও দুটি পল্লী উন্নয়ন একাডেমি হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হবে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায়। আরেকটি রংপুরে। জামালপুরের একাডেমির নাম হবে শেখ হাসিনা পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, জামালপুর। আর রংপুরেরটির নাম হবে শেখ রাসেল পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, রংপুর। মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই দুটি একাডেমি করার জন্য আইনের খসড়া চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে গত এপ্রিলে এই দুটি আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। নতুন দুটি একাডেমি হলে দেশে মোট চারটি পল্লী উন্নয়ন একাডেমি হবে। বর্তমানে কুমিল্লায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) এবং বগুড়ায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) রয়েছে। এ ছাড়া যশোরের আরেকটি পল্লী উন্নয়ন একাডেমি করার পরিকল্পনা আছে সরকারের। আইনের খসড়া অনুযায়ী একাডেমি পরিচালনায় একটি বোর্ড থাকবে। ২১ সদস্যবিশিষ্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকবেন পদাধিকারবলে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী। আর একাডেমির মহাপরিচালক হবেন যুগ্ম সচিব বা তার ওপরের পর্যায়ের কেউ। গবেষণা ছাড়াও পল্লী উন্নয়ন বা সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ে ডিপ্লোমাও করা যাবে এখানে। পোস্টগ্র্যাজুয়েশন, সার্টিফিকেট কোর্সেরও সুযোগ থাকবে। এ ক্ষেত্রে এসব কোর্সের সনদগুলো বিদ্যমান নিয়মে অর্থাৎ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন দেয়া হবে।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া অনুমোদন মন্ত্রিসভায়: একাদশ জাতীয় সংসদের ২০২৩ সালের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, নতুন বছরের জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখে সংসদ অধিদবেশন শুরু হবে। সেখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি একটি বক্তৃতা করবেন। বক্তৃতা করে তিনি উদ্বোধন করবেন। এটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। সাংবিধানিক বাধ্যবধকতার অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি যে বক্তব্যটি রাখবেন সেটি মন্ত্রিসভা কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়। সেটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

জাতীয় প্রবাসী দিবস ৩০ ডিসেম্বর: এখন থেকে প্রতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় প্রবাসী দিবস (ন্যাশনাল এক্সপ্যাট্রিয়েটস ডে) উদযাপন করা হবে। এই সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে দিবসটি উদযাপনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা এ বিষয়ক পরিপত্রের ‘খ’ ক্রমিকে তা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, প্রবাসী দিবস উদযাপনে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। প্রতি বছর ৩০ ডিসেম্বর সরকারিভাবে এটি পালনে পদক্ষেপ নেয়া হলো। মন্ত্রিসভা জাতীয় প্রবাসী দিবস ঘোষণা করেছে। অভিবাসী দিবসের পাশাপাশি ৩০ দিবস প্রবাসী দিবস সারাদেশে এমনকি সারা পৃথিবীতে যেখানে প্রবাসী ভাই-বোনেরা রয়েছেন তাদের নিয়ে এ দিবসটি পালন করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ দিবসে প্রবাসীদের জন্য আমরা কী কী কার্যক্রম গ্রহণ করছি, সেই বিষয়গুলো প্রচার-প্রচারণা হবে। আমরা ইতোমধ্যে ২১টি অনলাইন সেবা চিহ্নিত করেছি। এই ২১টি সেবা প্রবাসীরা দূতাবাস বা মিশন থেকে নিতে পারবে। সেই সঙ্গে যদি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সুবিধাটা যদি থাকে। বিভিন্ন দেশের শ্রমিক হাবগুলোতে ডিজিটাল সার্ভিস করবো, সেখানে এজিন্ট ব্যাংকিংয়ের সুবিধা থাকবে। যে ২১টি অনলাইন সেবা রয়েছে, সেগুলো কীভাবে প্রদান করা যায়, সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করব। কিছু নির্দেশনাও এসেছে।

লিবিয়ায় সরকারিভাবে শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ: রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা জটিলতার মধ্যে চলছিল লিবিয়ার শ্রমবাজার। এখন সরকারিভাবে শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ ও লিবিয়ার মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। খুব তাড়াতাড়ি এই সমঝোতা স্মারক সই হবে বলেন জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, সমঝোতা স্মারকে কর্মীদের অধিকার ও মর্যাদার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। গতবছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যারা দেশে ফিরে এসেছেন তাদের প্রাধান্য দেয়া হবে।

অনুমোদনের অপেক্ষায় ‘এমআরটি পুলিশ’: দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে রাজধানীবাসীর। আজ বুধবারই স্বপ্ন সত্যি হতে দেখবেন তারা। মেট্রোরেলের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্টরা যেমন শেষ মুহূর্তের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন, তেমনি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পুলিশেরও চলছে বিশেষ প্রস্তুতি। পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেলের উড়াল পথ, স্টেশন ও স্থাপনা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গঠিত হচ্ছে পুলিশের বিশেষায়িত আলাদা ইউনিট। এই বিশেষ ইউনিটটির নাম হতে যাচ্ছে ‘ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট পুলিশ’ বা ‘এমআরটি পুলিশ’। ‘এমআরটি পুলিশ’ মেট্রোরেল ও যাত্রীদের নিরাপত্তাসহ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করবে। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, গত সোমবার সচিবদের সঙ্গে যে সভা হয়েছে তাতে বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে। ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা যায়, মেট্রোরেল উদ্বোধনের আগে এমআরটি পুলিশের অনুমোদন হচ্ছে না বলে প্রাথকিভাবে জানা গেছে। এ অবস্থায় আপাতত নিজস্ব লোকবল দিয়ে মেট্রোরেলের স্থাপনা ও যাত্রীদের নিরাপত্তাসহ শৃঙ্খলার কাজ করবে ডিএমটিসিএল। ক্ষেত্রবিশেষে নিরাপত্তার জন্য সহায়তা নেওয়া হবে পুলিশের। পরে এমআরটি পুলিশের অনুমোদন হলে তাদের হাতে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব তুলে দেবে কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, অনেক আগেই এমআরটি পুলিশের অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। তবে আপতত মনে হচ্ছে উদ্বোধনের আগে এমআরটি পুলিশের অনুমোদন পাওয়া যাবে না। তবে দ্রুত অনুমোদন হয়ে যাবে বলে আশা করছি। এমআরটি পুলিশের অনুমোদনের আগ পর্যন্ত আমাদের নিজস্ব লোকবলের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজ /এমএসএম

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102