রফিকুল হায়দারঃ বাংলাদেশের খবর জানার জন্য অনলাইন টিভি, খবরের কাগজ, অনলাইন পত্রিকা ইত্যাদি খুললেই চোখে পড়ে বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোর নেতাদের গ্রাম- গঞ্জের সহজ সরল মানুষগুলোকে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মনগড়া উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে কাছে টানার আপ্রাণ চেষ্টা। শুধু বিএনপি’ই নয় তাদের দোসর গণফোরাম, জামায়াত সহ তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোও।
আমার মনে হয়, তাদের একটা জিনিস বুঝতে অসুবিধা হয় অথবা বুঝেও না বোঝার ভান করে যে, তারা ভালো করেই জানেন, বাংলাদেশ সরকার দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য এখন যা কিছু করছে তা কিছুই লোকচক্ষুর আড়ালে নয়। বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম, ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা এমন কি রাজধানী শহরেও কোথায় কি হচ্ছে, তার খবর প্রতি মুহুর্তে প্রকাশিত হচ্ছে। তারা কি এ কথা জানেন না যে, তারা বক্তব্য যেখানেই দেন না কেন তা মুহুর্তের মধ্যেই সারা বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সকল দেশেই তা প্রচারিত হয়ে যায়? বাংলাদেশের মানুষ শিক্ষা দীক্ষায়ও এখন অনেক এগিয়ে গেছে, কাজেই কেউ কিছু বললে সাথে সাথেই তার উত্তর তারা দিয়ে দেয় এবং সারা বিশ্বে তা প্রচারিত হয়ে যায়। তাই বিশেষ করে “কোমর ভাঙ্গা” বিএনপি’র একটু বুঝেশুনে বক্তব্য দেয়াটা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
বিএনপি’কে কেন আমি কোমর ভাঙ্গা’ রাজনৈতিক দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছি তার কারণ হচ্ছে, বিএনপি আগে ছিলো সম্পূর্ণ স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামী দলের মুখপাত্র। কিছুদিন আগে জামায়াতের এক নেতা বলেছেন, আগামী নির্বাচনে আমরা ৩০০ আসনেই প্রতিদ্বন্দিতা করবো। তাই সহজেই অনুমান করা যায়, নেতৃত্বহীন বিএনপি’র সাথে তারা এখন আর নেই। তাদের সাথে কয়েক বছর রাজনীতি করে বিএনপি’র গোমর তারা জেনে ফেলেছে। তাই তারা সরে গেছে, সুতরাং বিএনপি’র ভালো বুদ্ধি দেয়ার আর কেউ নেই। গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনও তাদের শরীক দল হিসেবে সাথে থাকলেও কার্য্যত: নেই। তাহলে আমার পাঠকরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন বর্তমানে বিএনপি’র কোমরের শক্তি কতটুকু আছে? সুতরাং নেতৃত্বহীন বিএনপি’কে ’কোমর ভাঙ্গা’ দল হিসেবে আখ্যায়িত করলে আমার মনে হয় ভুল হবে না। বর্তমানে বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনীতির একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে প্রোপাগান্ডা”! এই প্রোপাগান্ডাগুলোর কিছু চিত্র আমি তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
গত ১৩ই মে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর নির্বাচনী এলাকায় এক জনসভায় বলেছেন, বাংলাদেশও শ্রীলংকার মত পরিস্থিতি হতে বাধ্য হবে। কারণ হচ্ছে একই ভাবে এখানকার অর্থনীতি ধ্বংস করা হয়েছে, এখানে ঋণ এত বেশী গ্রহণ করা হয়েছে যে, ইতিমধ্যে ঋণের বোঝা জনপ্রতি ৪৭২ ডলার করে পরেছে। ওখানকার মতো পরিস্থিতি এখানেও দেখা দিবে, মুদ্রাস্ফিতি এত বাড়বে যে, অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। এই প্রোপাগান্ডার উত্তর দিয়েছেন বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা ব্যারিষ্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমন। জনাব সুমনের লেখাটির একটি অংশ আমি এখানে তুলে ধরলাম আমার পাঠকদের বিষয়টি বোঝার জন্য।
তিনি লিখেছেন- ”এ দেশের অবস্থা শ্রীলংকার চেয়ে খারাপ সেদিনই হয়েছিল, যে দিন জাতির জনক ও তাঁর পরিবারকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। এ দেশের বারোটা সেদিনই বেজেছিল যে দিন জেলের ভেতর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিলো। যে দিন স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতায় আনা হয়েছিল, সেদিনই বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। তারপর মহান রাব্বুল আ’লামীনের অশেষ রহমতে বহু চড়াই উৎরাই পার হয়ে আমরা এগিয়েছি অনেক, যাবো বহুদূর। জনাব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ”বাংলাদেশের অর্থনীতি শ্রীলংকার চেয়ে খারাপ হবে” এই বক্তব্যের উত্তরে জনাব ব্যারিষ্টার সুমন লিখেছেন- একজন দায়িত্বশীল পলিটিশিয়ানের এমন বক্তব্য জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তারা বিএনপি যখন ক্ষমতা ছাড়েন তখন বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৬ বিলিয়ন ডলারের কম আজ তা ৪৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
শ্রীলংকার জাতীয় ঋণ জিডিপি’র ১২০%, বাংলাদেশের ১৮%। করোনার সময় সারা বিশ্বে সবার রিজার্ভ যখন নিম্নমুখী তখন বাংলাদেশের রিজার্ভ প্রায় ডাবল। বাংলাদেশের জাতীয় ঋণ ১৪২ বিলিয়ন ডলারের সমান, মাথাপিছু ৮৩৩ ডলার যেখানে ভারতের জাতীয় ঋণ ৩,০১৯ বিলিয়ন ডলার, মাথাপিছু ২,২৩৬ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ ২৮,২০০ বিলিয়ন ডলার, মাথাপিছু ৬৮০০০ ডলার। ঋণ খারাপ না, যদি আয় থাকে। আয় থাকলে ঋণ অগ্রগতিকে বিশাল বাড়িয়ে তোলে। ”
তিনি আরও লিখেছেন, ”প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ইতিহাসের সর্বোচ্চ। কৃষি উৎপাদন অভাবনীয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে তা সংকটে পড়লেও তা কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা কৃষকদের ও সরকারের আছে। নিজস্ব প্রয়োজনীয় শিল্প পণ্যের উৎপাদন অনেক।” জনাব সাইদুল হক সুমন বিএনপি নেতাকে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থান আঙ্গুল দিয়ে যে দেখিয়ে দিলেন, তা কি তাঁর বোধগম্য হবে?
এছাড়াও প্রবাসীদের দেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের দিকে যদি চোখ বুলাই তা হলে দেখা যায়, প্রতি বছরই কোটি কোটি ডলার প্রবাসীরা দেশে পাঠান। যেমন প্রতি বছরই বিশেষ করে রমজান এবং ঈদ এর সময় সবচেয়ে বেশি অর্থ পাঠান প্রবাসী বাংলাদেশীরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জানা গেছে, এপ্রিল মাসের প্রথম ১৩ দিনে প্রবাসীরা ব্যঙ্কিং চ্যানেলে পাঠিয়েছেন প্রায় ৯৩ কোটি ডলার। এতে দৈনিক গড়ে রেমিট্যান্স দেশে গেছে ৭ কোটি ১৩ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থ বছরের এপ্রিল মাসে মোট ২০৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স গিয়েছে বাংলাদেশে। ঐ মাসে দৈনিক গড় রেমিট্যান্স এর পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। শুধু মাত্র যে ঈদ উপলক্ষে রেমিট্যান্স যায় তা নয়, প্রবাসীদের পাঠানো কোটি কোটি ডলার প্রতি মাসেই বাংলাদেশে যায়, যা বাংলাদেশের ইনকামের একটি বিরাট অংশ।
এবার আসি পদ্মা সেতু নিয়ে তাদের মিথ্যচারের কিছু নমুনা নিয়ে :
পদ্মা সেতু নির্মানের জন্য যখন প্রথম পরিকল্পনা করা হয়, তখন বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ঋণের জন্য আবেদন করা হয়। এ সময় এই ঋণ যাতে বাংলাদেশ সরকার না পায় তার জন্য বিএনপি’র গুরুদেব ড. ইউনুস সাহেব যুক্তরাষ্ট্রের হিলারী ক্লিনটন এবং ড. কামাল হোসেনের মেয়ের জামাই মি: বার্গম্যানকে দিয়ে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিশ্ব ব্যাংককে বোঝালো যে, বাংলাদেশ এই ঋণ নিয়ে পদ্মা সেতু করবেনা বরং শেখ হাসিনা সরকার সে টাকা দিয়ে তাদের পকেটে ভারী করবে। এ ধরণের বিভিন্ন অভিযোগ একটার পর একটা বিশ্ব ব্যাংকে দাখিল করার পর শেষ পর্য্যন্ত বিশ্ব ব্যাঙ্ক বাংলাদেশে পদ্মা সেতু নির্মাণের টাকা দিকে অস্বীকৃতি জানালো। অবশেষে বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করলেন, পদ্মা সেতু আমাদের নিজের টাকা দিয়েই করবো, কারো কাছে হাত পাতবো না। আমরা কারো কাছে মাথা নত করবোনা। যে ভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্থানী শাসকদের কাছে মাথা নত করেননি, দেশ স্বাধীন করেই ছেড়েছেন, ঠিক তেমনি ভাবে তার কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই পদ্মা সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে তাঁর জনগণকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন সব চড়াই উৎরাই অতিক্রম করে শেষ পর্য্যন্ত পদ্মা সেতু তিনি নির্মাণ করেই ছেড়েছেন, জনগণের কাছে তার ওয়াদা তিনি রক্ষা করেছেন। আল্লাহ পাকের হাজারো শুকরিয়া। পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হওয়ার পর স্বাধীনতা বিরোধী চক্র সেতুর কাজ বন্ধ করার লক্ষ্যে শুরু বিভিন্ন ধরণের অপপ্রচার। তারা প্রচার করলো, মানুষের মাথা না দিলে নাকি সেতু তৈরা সম্ভব হবে না। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো , তা প্রচার করলে জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে সেতুর নির্মাণের কাজ বন্ধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করবে। জনগণ বুঝে নিয়েছিলো যে, এটা তাদের অপপ্রচার, কাজেই জনগণ এতে সায় দেয়নি।
এছাড়াও রামপালে যখন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হল তখন তারা অপপ্রচার চালালো যে, এটি করা হলে সুন্দর বনের সব বাঘ হরিণ এবং অন্যান্য প্রাণী মারা যাবে, দেশের সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধণের পর তারা নীরব।
করোনা মহামারীর সময় বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, ভারত থেকে টিকা এনে মানুষকে দিলেও দেশে হাজার হাজার মানুষ মরে রাস্তায় পড়ে থাকবে, টিকায় কোন কাজ হবেনা। অথচ ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ডা: জাফর উল্লাহ টিকা নিয়ে বললেন ভাল লাগছে. মনে শান্তি পাচ্ছি। রুহুল আলম রিজভী তো গোপনে টিকা নিয়ে তা প্রকাশ করেন নি। তাদের প্লান ছিলো, ভারত থেকে টিকে এনে এই টিকা জনগণকে দিলে কাজ হবেনা বললে জনগণ সেই টিকা প্রত্যাখান করবে। ফলে করোনায় হাজার হাজার মানুষ মরবে, তখন জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে। কিন্তু দেখা যায় সব চালেই তারা শেখ হাসিনার কাছে ব্যর্থ।
কিলিং টার্গেট হতে পারেন প্রধানমন্ত্রী
এখন তাদের অপপ্রচারের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হওয়ার পর এখন কোমর বেঁধে নেমেছে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বানচাল করা। সে লক্ষ্যে তারা ”শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন নয়” এই এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সম্প্রতি শুরু করেছেন তাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী বিভিন্ন দলের সাথে আলাপ আলোচনা। এ খবর এখন দেশ বিদেশে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, অনলাইন টিভি এসব প্রচার মাধ্যমগুলোতে ফলাও করে প্রচারিত হচ্ছে। জনাব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিজেদের তো কোমর ভাঙ্গা সুতরাং ছোট ছোট এসব দলকে একত্রিত করে তাদের সঙ্গে নিয়ে যদি একটি বৃহত্তর ”ঐক্য” গড়ে তোলা যায় সেই চেষ্টা করা। তার মতে, এই ঐক্য গড়ে তুলতে পারলেই যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এক দিকে যেমন আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বানচাল করা এবং একই সাথে এই সরকারকে হঠানোও সম্ভব হবে। কি অবাক চিন্তাধারা জনাব ফখরুল ইসলামের!
১৯৯১ বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞ আইনজীবি যিনি বাংলাদেশের সংবিধান রচয়িতা গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকটি দল নিয়ে ”জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট” নাম দিয়ে বিএনপি নির্বাচন করে হেরে গিয়ে বাংলাদেশের জনগণের কাছে যে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছিলো তা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি জনাব ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ড. কামাল হোসেনের মতো ব্যক্তিকে অভিভাবক বানিয়েও তারা কোন ফায়দা হাসিল করতে পারেন নি। এক সময়ে তাদের ম্যাডাম বেগম খালেদা জিয়া যখন পুরোপুরি বিএনপি’র নেতৃত্বে ছিলেন তখন তিনি কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছিলেন যে জনগণই ক্ষমতার উৎস। আর সে কারণেই তিনি গ্রামে গঞ্জে গিয়ে মানুষের সহানুভুতি আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার ফলশ্রুতিতে তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার দুর্ভাগ্য হলো, তাঁর শেষবারের মতো প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে অভিশাপ হয়ে উঠেছিলেন তার স্বনামধন্য পুত্র তারেক রহমান। সে সময় তারেক রহমানের হাতে ছিলো হাওয়া ভবনের কর্তৃত্ব, আর মা ছিলেন তার তাবেদারের মতো। পুত্রের কথা মায়ের শুনতেই হতো। তখন রাজনীতির দিকে মন না দিয়ে বরং বিভিন্ন ভাবে কালো টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছিলেন তারেক রহমান। এর ফলে জনগণ থেকে তারা ধীরে ধীরে সরে যেতে থাকেন। এখন বিএনপি জনগণের সাথে ’সম্পর্কহীন’ একটি দলে পরিণত হয়েছেন। বর্তমানে নেতৃত্বহীন বিএনপি’র বাংলাদেশে যে দু’জন নাম মাত্র নেতা আছেন জনাব ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জনাব রুহুল আলম রিজভী সাহেব তাদের পক্ষে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতাই লন্ডনে অবস্থানরত জনাব তারেক রহমানের হাতে। তাঁর নির্দেশেই বর্তমান নেতাদের ওঠাবসা করতে হয়। সুতরাং ’কোমর ভাঙ্গা’ বিএনপি যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা দলগুলোকে নিয়ে ঐক্য গড়ে তোলে তাদের আন্দোলন যে গতিশীল করতে পারবেনা তা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবি সমাজ সহ সাধারণ জনগণও ভালো করেই বুঝে।
জানা গেছে, বিএনপি এখন যে দলগুলোর সাথে আলাপ আলোচনা করছে, সে সব দলগুলো একত্রিত হওয়ার আগেই জানতে চেয়েছে সম্মিলিত জোট গঠন করা হলে, জোটের নেতা কে হবেন? এ নিয়ে ভীষণ বিপাকে আছেন ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উপায়ান্তর না দেখে জনাব আলমগীর নাকি বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াই হবেন নেতা! অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, বেচারীর শারীরিক যে অবস্থা কখন কি হয় এ নিয়ে সবাই যখন শঙ্কিত তখন আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে জোট গঠন করে বেগম খালেদা জিয়াকে জোটের নেতা বানানো হলে তা হবে বেগম খালেদার জন্য চরম অবমাননা। তা ছাড়া জিয়া অরফেঞ্জ ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় দুই বছর জেল খেটে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষ মুক্ত রয়েছেন। সেই শর্ত অনুযায়ী তিনি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত হতে পারবেন না। দুর্নীতি মামলা সাজা হওয়ায় তিনি নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবেন না। অবশ্য বিএনপি’র মহাসচিব বলেছেন, ঐক্যের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব নিয়ে কোন জটিলতা হবেনা। তার বক্তব্য হচ্ছে, ”অন্য দলগুলোর সাথে যেহেতু আমরা আছি, তাদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে ঐক্যের নেতা ঠিক হবে।”
বিবিসি ডট কম এর খবরে বলা হয়েছে, ”বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় না হলেও বিএনপি এখন কৌশল হিসেবে তার নেতৃত্বকেই সামনে রেখে এগুতে চাইছে। এর ফলে খালেদা জিয়ার মামলার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক একটা অবস্থান তৈরী করা সম্ভব হতে পারে এবং একই সাথে তাদের আন্দোলনে মানুষের সহানুভুতি পাওয়া যেতে পারে বলে দলটির নেতাদের অনেকেই মনে করেন।” অর্থাৎ তাদের চিন্তাধারা হচ্ছে, ”এক ঢিলে দুই পাখি মারা।”
বিএনপি’র অন্য একাধিক সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, তারা আসলে খালেদা জিয়ার নামেই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে চাইছেন। সেখানে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নীতি নিয়ে তৎপর থাকবেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঐক্যবদ্ধ বা যুগপৎ আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করবেন। ”
এখন দেখা যাচ্ছে, সম্মিলিত জোট গঠন করার আগেই বিএনপি সারা দেশে মিছিল, মিটিং করে দেশে একটা অরাজকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এই অরাজকতা সৃষ্টি করার আরেকটা কারণ হচ্ছে, আগামী ২৫শে জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের স্দ্ধিান্ত নেয়া হয়েছে এবং আশা করা হয়েছে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রায় ১০ লাখের মতো মানুষ উপস্থিত থেকে তাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে এপার থেকে ওপারে যাবে। মূলত: পদ্মার উভয় পাড়ের মানুষ আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেছে। সুতরাং এতো মানুষ যাতে উদ্বোধনী দিনে ওখানে না যায়, সে লক্ষ্যে তারা মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে অরাজকতা ও সহিংসতা সৃষ্টি করা। আমার ভয় হচ্ছে, ২৫ জুন পদ্মা পাড়ের সমাবেশে স্বাধীনতা বিরোধীরা একটা মরণ কামর দেয়ার চেষ্টা করবে। যদি তারা তা করতে পারে তাহলে অগনিত লোক আক্রান্ত এবং মারা যেতে পারে। সুতরাং সরকারের উচিৎ এখন থেকেই সেখানে লোক চলাচল এবং সন্দেহ জনক ব্যক্তিদের প্রতি কড়া নজর রাখার জন্য পুলিশ, সেনা বাহিনী, র্যাব সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন রাখা, যাতে ঐদিন কোন অঘটন না ঘটে। একটা কিছু ঘটলে সকল দায় দায়িত্ব পড়বে সরকারের উপর। এছাড়াও আমার ভয় হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও হতে পারেন তাদের ”কিলিং টার্গেট”। সুতরাং সময় থাকতে সাবধান হতে হবে।
বিএনপি’র উচিৎ ছিলো পদ্মা সেতু যখন হয়েই গেছে, এখন জনগণের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠনটি কি ভাবে সুন্দর করে সফল করা যায় তার জন্য সহযোগিতা করা। তারা তা না করে উল্টো পথে হাঁটছে! কথায় আছে ”ইল্লত যায়না মইলে, খাসলত যায়না ধুইলে” অর্থাৎ যার যে অভ্যেস তা কখনো যায়না। বিএনপি গঠনের পর থেকেই তাদের যে পুরনো অভ্যেস তা কখনো ছাড়তে পারবে না, এ কথা বাংলাদেশের মানুষ ভালো করেই জানে।
অন্য এক খবরে দেখলাম, ছাত্রলীগ বিএনপি’র মিছিল মিটিংয়ের প্রতিবাদ করে তারাও মিছিল মিটিং শুরু করেছে। এই খবর দেখে আমার কাছে কিছুটা বেমানান লাগছে। কারণ ছাত্রলীগের কর্মীরা যদি তার প্রতিবাদ বিএনপি’র মতোই করে তাহলে তার অর্থ হলো তাদের প্রতিবাদকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেয়া। ছাত্রলীগের কর্মীরা বা আওয়ামী লীগ কি বুঝতে পারেনা যে, বিএনপি’র এসব মিছিল মিটিং শুধু মাত্র ’শহর কেন্দ্রীক’। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর প্রয়োজনটা কি? চুপ থাকলেই তো হয়, দেখা যাক না কোথাকার পানি, কোথায় গড়ায়?
লেখকঃ দেওয়ান রফিকুল হায়দার (দেওয়ান ফয়সল), লেখক, সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিষ্ট, কমিউনিটি সংঘঠক, সদস্য লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব