

যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ফের ধরা পড়েছে এক ভুয়া চিকিৎসক। নিজেকে ‘এন্টার্ন চিকিৎসক’ পরিচয়ে রোগী সেবায় সম্পৃক্ত হতে গিয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে ধরা পড়েছেন নীলা মল্লিক (২৫) নামের এক তরুণী। তিনি বাগেরহাট জেলার বাগেরহাট সদর উপজেলার কার্ত্তিকদিয়া গ্রামের জাহিদ মল্লিকের মেয়ে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সকালে সাদা অ্যাপ্রন পরিহিত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করছিলেন নীলা। নিজেকে এন্টার্ন চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে তিনি রোগী সেবায় যুক্ত হতে চাইলে উপস্থিত নার্স ও স্টাফদের সন্দেহ হয়। পরে তাকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি একবার নিজেকে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স এবং কিছুক্ষণ পর এন্টার্ন চিকিৎসক বলে দাবি করেন। তার বক্তব্যের অসঙ্গতি এবং বিভ্রান্তিকর উত্তর দেখে হাসপাতালের কর্মীরা তাকে আটক করে প্রশাসনকে অবহিত করেন।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার কোনো বৈধ চিকিৎসা শিক্ষা বা চাকরির রেকর্ড পাওয়া যায়নি। ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান যশোর জেলা পুলিশের হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য কনস্টেবল সোহেল রানা। তিনি উপস্থিত বুদ্ধি ও দক্ষতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে নীলা মল্লিককে হেফাজতে নেন এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান।
কনস্টেবল সোহেল রানা বলেন, দায়িত্বে থাকাকালীন অবস্থায় একজন নারী চিকিৎসকের পোশাক পরে সন্দেহজনকভাবে চলাফেরা করতে দেখি। জিজ্ঞাসাবাদে অসঙ্গতি ধরা পড়লে তাকে আটক করি। পরে নিশ্চিত হই, তিনি আসল চিকিৎসক নন। নিরাপত্তা বজায় রাখা আমাদের কর্তব্য, তাই দ্রুত ব্যবস্থা নিই।
এই ধারাবাহিক সাফল্যের বিষয়ে যশোর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) রওনক জাহান বলেন, জেলা পুলিশের সদস্যরা সবসময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সতর্ক ও দায়িত্বশীল। হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দায়িত্ব পালনের সময় তারা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখাচ্ছেন। কনস্টেবল সোহেল রানা তার সতর্কতা ও উপস্থিত বুদ্ধির মাধ্যমে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। এমন সদস্যদের আমরা উৎসাহিত করছি এবং বিভাগীয়ভাবে প্রশংসিত করা হবে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত বলেন, এ ধরনের ঘটনা হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও রোগী সেবায় প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা নিরাপত্তা আরও জোরদার করছি এবং কর্মীদের সচেতন করছি যাতে ভবিষ্যতে কেউ চিকিৎসকের ছদ্মবেশে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।
এর আগেও এই হাসপাতালে একাধিক প্রতারক ও অপরাধীকে আটক করেছেন কনস্টেবল সোহেল রানা। কয়েক মাস আগে একই হাসপাতালে নিজেকে ‘ডা. রিয়াজ’ পরিচয়ে রোগী দেখার সময় এক ভুয়া চিকিৎসককে হাতে-নাতে আটক করেন তিনি। এছাড়া হাসপাতাল এলাকায় দালাল ও চুরি চক্রের সদস্যদেরও একাধিকবার গ্রেফতার করেন এই পুলিশ সদস্য। তার সতর্কতায় হাসপাতালের নিরাপত্তা আগের চেয়ে অনেক বেশি সুরক্ষিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মচারীরা।
আটক নীলা মল্লিককে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও সরকারি পরিচয়ে ছদ্মবেশ ধারণের অভিযোগে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
জেলা পুলিশ জানিয়েছে, এ ধরনের প্রতারণা ও অনিয়ম রোধে হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে।