শিপন আহমদ, ওসমানীনগর: সিলেটের ওসমানীনগরে বৃহস্পতিবার সকালে বন্যার পানি ধীর গতিতে কমলেও বিকালে বেড়েছে। গত এক সপ্তাহ পানিবন্দি থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ধীর গতিতে পানি কমায় আশ্রয়কেন্দ্র থাকা ও বানবাসী লোকজন স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললেও বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরামহীন বৃষ্টিপাতে আবারো ২-৩ ইঞ্চি পানি বৃদ্ধি পয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৩১ সেঃমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী সাদিপুর এলাকায় ২ থেকে ৩ ইঞ্চি বন্যার পানি কমেছিলো। বিকালে পানিবৃদ্ধির পর আবারো বন্যা আক্রান্তদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়ানো হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যাও।
জানা গেছে, অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার প্রায় দেড় শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত রয়েছে। এতে উপজেলার আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ডাইকের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের সবকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।বন্যার পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র্রে উঠছেন পানিবন্দি মানুষ। তবে বেশির ভাগ আশ্রয়কেন্দ্রগুলো রয়েছে পানিবন্দি। তলিয়ে গেছে আশ্রয়কেন্দ্রের টিউবওয়েল।দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। বন্যার পানিতে টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট কাটিয়ে উঠতে ইতিমধ্যে বন্যা আক্রান্তদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে পানি বিশুদ্ধকরণ ১০ হাজার ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। বন্যার পানিতে ২ হাজার ৯৫ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ফলে গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে রয়েছেন অনেকেই।
গত মঙ্গলবার পর্যন্ত এক হাজার ৩১ পরিবারের ৮৪ হাজার ৯শ ৮০ জন মানুষ বন্যাক্রান্তদের তালিকা করে উপজেলা প্রশাসন। আশ্রয় কেন্দ্রের তালিকা ছিল ৪১টি। সরকারি বরাদ্দ ২৪ মেট্রিক চাল ও নগদ সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। ওই দিন উপজেলায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি বলে স্থানীয় সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন উপজেলা ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং প্যানেল চেয়ারম্যানরা। এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসনের তালিকায় বৃদ্ধি পেয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রেসহ বন্যা আক্রান্তদের সংখ্যা। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৫শ৯৯টি পরিবারের ১লক্ষ ২০ হাজার মানুষ বন্যাক্রান্ত রয়েছে।৬৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।এ পর্যন্ত ৮৬ মেঃটন চাল ও নগদ ১০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা সরকারি বরাদ্ধ পাওয়া গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিলন কান্তি রায় বলেন,পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যাক্রান্তদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা বন্যাক্রান্তদের সঠিত তথ্য তুলে আনার চেষ্টা করছি। সর্বমোট ৯৮ মেট্রিকটন চাল আমরা পেয়েছি। প্রাপ্ত বরাদ্ধগুলো জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ৮টি ইউনিয়নে বন্যাক্রান্তদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।