রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৫ পূর্বাহ্ন

মৌলভীবাজারে গোলটেবিল বৈঠকে দাবী

হাওরের পরিবর্তে অন্য ভূমিতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন

মোঃ কাওছার ইকবাল, শ্রীমঙ্গল(মৌলভীবাজার)
  • খবর আপডেট সময় : রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১৬ এই পর্যন্ত দেখেছেন

হাওরে বাঁচাতে বিকল্প ভূমিতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের দাবিতে মৌলভীবাজারে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলার কাউয়াদীঘি হাওর, হাইল হাওর ও আথানগিরি পূবের হাওরে অপরিকল্পিত সোলার প্যানেল প্রকল্প স্থাপন উদ্যোগ বন্ধ এবং হাওর-প্রতিবেশ রক্ষার দাবিতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন নবাগত জেলা প্রশাসক তৌহিদুজ্জামান পাভেল।

শনিবার (২২ নভেম্বর) ‘হাওর রক্ষা আন্দোলন, মৌলভীবাজার’-এর আয়োজনে গোল টেবিল বৈঠকের প্রতিপাদ্য ছিল- “মাছে-ভাতে বাঙালি, তাই মাছ-ভাতের চাহিদা পুরণ ও কৃষিপ্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার সংগ্রামে সামিল হোন”।

হাওর রক্ষা আন্দোলন, মৌলভীবাজারের আহ্বায়ক আসম সালেহ সোহেলের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী সদস্য নাট্যশিল্পী শাহীন ইকবালের সঞ্চালনায়  গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সদস্য সচিব এম. খছরু চৌধুরী।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সেন্টার ফর ইনভারয়নমেন্ট এন্ড জিওগ্রাফিখ ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস)এর উপ নির্বাহী পরিচালক এ. এম. এম মোস্তফা আলী, জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী, সিইজিআইএসের পরিচালক(প্রশাসন ও অর্থায়ন) লে. কর্নেল সৈয়দ আফজালুল আবেদীন (অব.), সিলেট কৃষি বিদ্যালয়ের ওয়াটার এন্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এর অধ্যাপক ড. নিতন কুন্ড ও সয়েল সাইন্স এর অধ্যাপক ড. এম এ কাশেম।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা মৎস্য অফিসার ড. আরিফ হোসেন, পাউবি নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ বিন অলিদ, সাবরেজিস্টার শংকর কুমার দেব, হাইল হাওরের কৃষক নেতা মোঃ খায়রুল ইসলাম, মৎস্যজীবী নেতা মিন্নত আলী, কাউয়াদিঘী হাওরের সামছুদ্দিন মাস্টারসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের সাবেক জন-প্রতিনিধি, জেলার রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং হাওর রক্ষা আন্দোলনের বিভিন্ন উপজেলা নেতৃবৃন্দ।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, মৌলভীবাজারের চা-বাগান, পাহাড়-টিলা, নদী-ছড়া ও হাওর মিলিয়ে গঠিত এই ভূপ্রকৃতি জেলার পরিবেশগত ভারসাম্যের মূল স্তম্ভ। কিন্তু সম্প্রতি ফিজিবিলিটি স্টাডি ছাড়াই কাউয়াদীঘি, হাইল হাওর ও পূবের হাওরে কৃষিজমি ক্রয়-বিক্রয় এবং সেখানে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগের কারণে মৌলভীবাজারব উদ্বেগ বাড়িয়েছে। পূবের হাওরে ১০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আরো ২৫ মেগাওয়াট  সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। সরকার মৌলভীবাজার জেলা হতে ৫০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, অবশ্যই জীববৈচিত্র্য, কৃষি ও মৎস্যসম্পদ রক্ষা করেই উন্নয়ন হতে হবে, হাওর-ভূপ্রকৃতি ধ্বংস করে নয়।

বৈঠকে উপস্থিত কৃষক ও মৎস্যজীবীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, হাওরের জমি বেসরকারি কোম্পানির কাছে গেলে তাদের জীবিকা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

পূবের হাওরের কৃষক বলেন, আমরা বছরের পর বছর ধানের চাষ করি, কিন্তু শুনছি এই জমি নাকি সোলার কোম্পানির হাতে যাবে।

মৎস্যজীবী নেতা ফজলুল হক নীরু বলেন, হাওরের পানি যদি বাধাগ্রস্ত হয়, আমাদের মাছধরা বন্ধ হয়ে যাবে। তাঁদের দাবি, বেরীবাঁধ ও ক্যানেলের আশপাশে খোলা জমি থাকা সত্ত্বেও হাওরের ভেতর সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন অযৌক্তিক।

হাওর রক্ষা আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মাঠপর্যায়ের গবেষণা বলছে, হাওর নষ্ট না করেও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। মনুসেচ প্রকল্পের বেরীবাঁধের প্রায় ৬৪ কিলোমিটার উন্মুক্ত ভূমি, টেংরা ইউনিয়নের মনুর আনগাঙ এলাকার ২.৫ কিলোমিটার এলাকা এবং মনুসেচ প্রকল্পের প্রধান ও সাব-ক্যানেলের ১০৫ কিলোমিটার জায়গা। এসব স্থানে ৫০০ থেকে ৭০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু এসব সরকারি জমিতে প্রকল্প নিলে ব্যাংক ঋণ পাওয়া যায় না। এমন যুক্তি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর পক্ষ থেকে তোলা হলেও সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, চা-বাগান মালিকরা রাষ্ট্রীয় লিজ জমিতেই নিয়মিত ঋণ পান, ফলে এ যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়।

বক্তারা অভিযোগ করেন, জমি ও জলাধার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকার ফলে ব্যক্তিস্বার্থ হাওরের সুরক্ষাকে বিপন্ন করছে। ভূমি সংস্কার আইনে ব্যক্তিমালিকানার সর্বোচ্চ সীমা ৬০ বিঘা নির্ধারিত থাকা সত্ত্বেও কীভাবে শত শত একর হাওরের জমি ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর হলো। এ প্রশ্নও বৈঠকে তোলা হয়।

বক্তারা বলেন, আইন লঙ্ঘন করে কোনো উন্নয়নই মানবিক বা টেকসই হতে পারে না। এছাড়াও দেশীয় ও অতিথি পাখির সুরক্ষার বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকের শেষে বক্তারা বলেন, দেশের সম্পদ সীমিত, জনসংখ্যা বেশি। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পরিবেশ রেখে যেতে হলে হাওর রক্ষা, সঠিক পরিকল্পনা, আইনের প্রয়োগ এবং রাষ্ট্রীয় ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি। তাঁরা আরও বলেন, আমরা সৌরবিদ্যুৎ চাই, কিন্তু হাওর ধ্বংস করে নয়। এই দাবীতে প্রয়োজনে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102