পরিসংখ্যানটা এক দলের জন্য গর্বের। আরেক দলের জন্য বিব্রতকর। কিন্তু দুই দলের অধিনায়ক কেউ-ই সেই অতীতের পরিসংখ্যান সম্পর্কে অবগত নন। অবগত নন বলেই তারা কেউ-ই মাথা ঘামালেন না পূর্বের কীর্তি নিয়ে। হাসিমুখে ট্রফি হাতে ফটোসেশন করলেন। যে ট্রফির জন্য বিশ্বকাপের ঠিক আগে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে মাঠে নামবে বাংলাদেশ ও নিউ জিল্যান্ড।
২০০৮ সালের পর বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে কখনো ওয়ানডেতে হারাতে পারেনি নিউ জিল্যান্ড। এরপর সাত ওয়ানডে খেলে প্রতিটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। নিজেদের এই অর্জন সম্পর্কে একেবারেই অবগত নন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লিটন দাস। আর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে পা রাখা নিউ জিল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লোকি ফার্গুসনও জানতেন না এমন কিছু।
অতলে হারিয়ে যাওয়া সেই বিস্মৃতি মনে করতে চাইলেন না ফার্গুসন, ‘আমি জানি না (পরিসংখ্যান)। তবে সেটা মনে রাখার মতো বিষয় নয়। আমরা এখানে সিরিজ খেলতে এসেছি এবং ভালো খেলে সিরিজ জিততে চাই।
আর নিজেদের গর্বের রেকর্ড সম্পর্কে জেনে লিটনের অবাক চাহনি থেকে বেরিয়ে আসে, ‘২০০৮ সালের পর আর খেলেনি! ২০০৮ সালে কি হয়েছে না হয়েছে ওইটা…।’
লিটন নিজের কথা শেষ করতে না পারলেও এবারও একই ফল পেতে আত্মবিশ্বাসী, ‘শেষ তিন চার বছর ধরে যেগুলো ম্যাচ খেলেছি বিশেষ করে আমাদের হোমে, আমাদের ফল খুবই ভালো। আমাদের ওই আত্মবিশ্বাস আছে, ভালো ক্রিকেট খেললে জেতার সুযোগ থাকবে।’
বিশ্বকাপের আগে এই সিরিজ দুই দলের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলে দুই দল যাবে বিশ্বকাপ মঞ্চে। তবে এই সিরিজে মূল দলের একাধিক ক্রিকেটারকে বিশ্রামে রেখেছে দুই দল। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পেতে যারা লড়াই করছেন কিংবা যাদেরকে বিবেচনা করা হচ্ছে তাদেরকে রাখা হয়েছে। মিরপুরের ২২ গজে ব্যাটিং কিংবা বোলিং দুই বিভাগের একটিতে ভালো করলেই মিলবে বিশ্বকাপের টিকিট।
অধিনায়কদের ভাবনাতেও কাজ করছে সেসব। তাইতো সবাইকে সুযোগ লুফে নেওয়ার বার্তাও দিলেন তারা। লিটন বলেছেন, ‘সামনে ওয়ার্ল্ডকাপ। সবারই দেখার একটা সুযোগ। সবার জন্য সুযোগটি আছে। যারা সুযোগ পাবে নিজেদের মেলে ধরার তারা যেন সুযোগটি কাজে লাগাতে পারে।’
এছাড়া এই সিরিজ থেকে সর্বোচ্চ ফল পাওয়ার ইচ্ছা বাংলাদেশের অধিনায়কের, ‘অর্জনের তো অনেক কিছু আছে। আমরা যখন মাঠে নামব, তখন প্রথম জিনিস হলো জেতার জন্যই মাঠে নামবো। আপনি দেশের হয়ে ম্যাচ জিতবেন এটাই সবচেয়ে বড় জিনিস।’
ফার্গুসনের ভাবনাও প্রায় একই, ‘আমাদের সামনে বড় সিরিজ আসছে। সেজন্য ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে। যারা এখানে নেই তাদেরকে সতেজ রাখতেই বিশ্রাম দেয়া হয়েছে। বাকিদের জন্য বড় সুযোগ নিজেদেরকে মেলে ধরার। আমার নিজেরও প্রথম সফর। আমিও চাই এখানে ভালো খেলে নিজেকে প্রস্তুত করার। বাকিরাও এখানে খেলার দিকে মনোযোগী। বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে ঘরের মাঠে শক্তিশালী দল। তাদেরকে হারাতে হলে আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে।
সাকিব, মুশফিকদের বিশ্রামে এই সিরিজে দেখা যাবে তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের। শুধু তারাই নয়, সৌম্য সরকারকেও ফেরানো হয়েছে। অবসর নাটকের পর তামিমকে আবার দেখা যাবে ২২ গজে। এছাড়া মাহমুদউল্লাহ দলে ফিরছেন তিন সিরিজের পর। লোয়ার অর্ডারে বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। মাহমুদউল্লাহ বরাবরই এই পজিশনে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে আরেকবার মাহমুদউল্লাহকে প্রমাণ করতে হবে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। তাহলে খুলে যাবে বিশ্বকাপের দরজা। নয়তো হাথুরুসিংহের বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে কাটা পড়বে তার নাম।
তামিম ও মাহমুদউল্লাহ অভিজ্ঞতা এই সিরিজে বেশ কাজে আসবে বলেই বিশ্বাস করেন লিটন, ‘দুইজন সিনিয়র খেলোয়াড় থাকলে তো অবশ্যই সব দিক থেকে ভালো হয়। অনেক দিন পর তারা খেলতে এসেছেন। আমি চাই না কোনো কিছু নিয়ে তাদের চাপ দিতে। তারা ম্যাচটা উপভোগ করুক। বাংলাদেশের প্রতিটি ম্যাচেই উপভোগ করতে পারলে সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি থাকে।’
বাংলাদেশের একাদশ কেমন হতে পারে সেটা নিয়ে চলছে জল্পনা। স্কোয়াডে আছে ছয় ওপেনার, তামিম, তানজিদ, এনামুল, লিটন, জাকির ও সৌম্য। তামিম ওপেনিংয়ে খেলবেন তা মোটামুটি নিশ্চিত। সঙ্গী কে হবে সেটাই দেখার। সঙ্গে আবহাওয়া গুমোট হয়ে আছে। কন্ডিশন স্পিন নির্ভর হবে বলতে দ্বিধা নেই। স্কোয়াডে নাসুমের সঙ্গে রয়েছেন রিশাদ। তারও খেলার সম্ভবনা বেশি।
বাংলাদেশের ১৫ জনের বিশ্বকাপ স্কোয়াডের দুই তিনটি জায়গা নিয়েই সংশয়। নিউ জিল্যান্ড সিরিজে কারা দ্যুতি ছড়িয়ে বিশ্বমঞ্চে খেলার সুযোগ করে নেয় সেটাই এখন দেখার।
নিউজ /এমএসএম