প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পাস হলে নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্যের দাম আরেক দফা সস্তা হবে। সেই সঙ্গে তামাক ব্যবহারজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যু বাড়বে এবং তামাক কোম্পানিগুলো আরো লাভবান হবে। সরকারের অতিরিক্ত রাজস্ব আয়ের সুযোগ হাতছাড়া হবে। তাই চূড়ান্ত বাজেটে সবধরনের তামাকপণ্যের দাম কার্যকরভাবে বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদসহ তামাকবিরোধী নেতৃবৃন্দ।
আজ সোমবার (১২ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সভাকক্ষে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা আয়োজিত তামাক কর বিষয়ক বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব আলোচনা উঠে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রজ্ঞা ও আত্মা’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্তরভেদে দশ শলাকা সিগারেটের খুচরামূল্য ১ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অথচ একবছরের ব্যবধানে আটা, ব্রয়লার মুরগি, চিনি, ডিম, গুঁড়ো দুধ এবং মসুর ডালের মত নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৭১ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য আরো সস্তা হয়ে পড়বে, মানুষ তামাক ব্যবহারে উৎসাহিত হবে এবং জনস্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বক্তারা জানান, বিড়ির দাম বাড়ানো হয়নি। এ নিয়ে টানা ৪র্থ বারের মতো পণ্যটির দাম এবং ৭ম বারের মতো করহার অপরিবর্তিত রাখা হলো। প্রতি গ্রাম জর্দার দাম ৫০ পয়সা এবং গুলের দাম ৩০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে এবং সম্পূরক শুল্ক অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, তামাক করকাঠামো সংস্কারের যে প্রস্তাব আমরা দিয়েছিলাম তার বিন্দুমাত্র প্রতিফলন নেই। তামাক কোম্পানির হাত অনেক লম্বা। নীতি নির্ধারনীতে তাদের লোক বসে আছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় চূড়ান্ত বাজেটে আমাদের প্রস্তাবসমূহ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, নিম্নস্তরের সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৬৫ শতাংশ করে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।
পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যে আড ভ্যালোরেম এর পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তামাকপণ্যেও একই কর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্য উভয়ই উপকৃত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, করহার না বাড়িয়ে কেবল খুচরামূল্য বাড়ানোর কারণে তামাক কোম্পানিগুলো লাভবান হবে এবং সরকার অতিরিক্ত রাজস্ব আয়ের সুযোগ হাতছাড়া করবে। তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব অনুযায়ী নিম্নস্তরের সিগারেটে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক সুনির্দিষ্ট আকারে আরোপ করা হলে সরকার কমপক্ষে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় আহরণ করতে পারতো। সম্পূরক শুল্ক ৫৮ শতাংশ নির্ধারণ করায় কোম্পানিগুলো শুধু নিম্নস্তরের সিগারেট থেকেই ৪৮৬ কোটি টাকা বাড়তি আয় করবে।
বক্তারা আরো জানান, তামাকবিরোধীদের কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ৪ লক্ষ ৮৮ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ লক্ষ ৯২ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠির অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং ৯,৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত, কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
নিউজ /এমএসএম