রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৪৪ অপরাহ্ন

দেশবাসীকে কী বার্তা দেবে কুমিল্লার ভোট?

সংবাদদাতার নাম :
  • খবর আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০২২
  • ১৮৯ এই পর্যন্ত দেখেছেন

শাহনেওয়াজ বাবলু, কুমিল্লা থেকে: রাত পোহালেই ভোট। শেষ হয়েছে সব ধরনের প্রচার। শেষ মুহূর্তে এসে মেয়র পদে ভোটের মাঠে চলছে নানা সমীকরণ। কে জিতবেন? কে হারবেন? এমন আলোচনা চলছে নগরজুড়ে। ভোটের সঙ্গে আছে রাজনৈতিক সমীকরণের আলোচনা। সব আলোচনা ছাপিয়ে বড় প্রশ্ন জাতীয় নির্বাচনের আগেই নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে কেমন নির্বাচন হয় কুমিল্লায়। দেশবাসীকে কী বার্তা দেবে কুমিল্লার ভোট। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই এক ভোটে অনেক বার্তা অপেক্ষা করছে। এই ভোটের মাধ্যমে নতুন কমিশন নিজেদের সক্ষমতার জানান দেয়ার সুযোগ পাবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অবস্থানও পরিষ্কার হবে।

একইসঙ্গে  ভোটে না থাকলেও বিএনপি’র সমর্থকদের অবস্থান নিয়েও একটি বার্তা মিলবে এই ভোটে। ভোটের আগে নানা আলোচনা ও বিতর্ক থাকলেও অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে প্রচারণা। এখন দেখার পালা ভোটের দিন কী বার্তা দেয় কুমিল্লার ভোট। 

রাজনৈতিক নানা মেরুকরণে ভোটের মাঠে তিন প্রার্থীর (রিফাত-সাক্কু-কায়সার) মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এমন সম্ভাবনার কথা বলছেন ভোটারসহ নাগরিক সমাজের নেতারা। এদিকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার পরও সিটি করপোরেশন এলাকা ছাড়েননি সদর আসনের সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার। এ নিয়ে আছে নগরজুড়ে আলোচনা। সবকিছু ছাপিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের প্রত্যাশা করছেন নগরীর ভোটাররা।  

ফ্যাক্টর দক্ষিণের ৯ ওয়ার্ড: কুসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের নজর দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ডে। নগরীর ১৯ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৬০ হাজার ভোটারের বসবাস। এই ওয়ার্ডগুলোর ভোটেই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে পারে প্রার্থীদের। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাসই পাওয়া গেছে। ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কোটবাড়ি, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, চৌয়ারা বাজার, রঘুপুর, বাখরাবাদ, ইয়াসিন মার্কেটসহ আরও কিছু এলাকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এসব ভোট প্রার্থীদের জয়ের জন্য নিয়ামক শক্তি হয়ে উঠবে। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে যারা এই ভোটগুলো বাগে আনতে পারবেন তারাই কুসিক মেয়র হিসেবে জয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে যাবেন- এমনটাই দাবি সাধারণ ভোটারদের। কুমিল্লা শহরের কেউই এখনো কাউকে মেয়র হিসেবে এগিয়ে রাখতে পারছেন না। তারা বলছেন, শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হবেন তা বলা মুশকিল। তবে সব প্রার্থীরই সুবিধা-অসুবিধা দুটোই রয়েছে। আওয়ামী লীগের ভোট যেমন অন্য বাক্সে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি বিএনপি’র ভোটও দুই প্রার্থীর মধ্যে ভাগাভাগি হবে। ফলে সব প্রার্থীরই টার্গেট ৬০ হাজার ভোটের দিকে।

আলোচনায় সংখ্যালঘু ভোটার: গত বছরই একের পর এক হামলায় প্রাণভয়ে জবুথবু ছিল কুমিল্লা সিটির সংখ্যালঘু সমপ্রদায়। বিচার মেলেনি এখনো। সেই শোক ভোলার আগেই, দরজায় নির্বাচন। তাই কদর বেড়েছে তাদের। অনেকে বলছেন, এবার সংখ্যালঘুদের হাজার পঞ্চাশেক ভোট, তারাই হয়ে উঠতে পারে বড় ফ্যাক্টর। কুমিল্লা সিটিতে এবার ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার। মোট ভোটারের প্রায় ২৫ শতাংশ বা ৫০ হাজারের বেশি ভোটারই হিন্দু সমপ্রদায়ের। প্রাবন্ধিক ও সংস্কৃতিকর্মী আহসানুল করিম বলেন, সময়ের ভাঁজে চাপা পড়ে অনেক কিছুই। কিন্তু, ভোটের মাঠে কখনো তা হয়ে দাঁড়ায় বড় ফ্যাক্টর। প্রার্থীরাও বোঝেন সবই। কিন্তু, ভোটটা তো তাদের চাই। তাই, আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নিয়ে সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের কদর বাড়ানোয় পিছিয়ে নেই কেউ।
 

আলোচনায় এমপি বাহার: নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে কুমিল্লা-৬ আসনের এমপি বাহাউদ্দিন বাহারকে গত বুধবার তার নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের ছয় দিন পরও এলাকা ছাড়েননি ক্ষমতাসীন দলের এই সংসদ সদস্য। জানা গেছে, সরাসরি নির্বাচনে প্রচারণায় অংশ না নিলেও শহরের নিজ বাসায় অবস্থান করছেন বাহার। দিচ্ছেন নানা দিকনির্দেশনা। গতকালের প্রচারণায়ও অভিযোগ তুলেছেন দুই স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী।

টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, রিফাত তো এমপি’র নমিনি। সে তো কিছু না। সব করছেন স্থানীয় এমপি। আমি এমপি বাহারকেই প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছি। ওনি ওনার সবটা দিয়ে চেষ্টা করছেন। ওনার দেয়ার মতো আর কিছু নাই। ওনার ক্ষমতা কতোটুটু আমি তা জানি। যত কৌশল যত বাধা আসুক সবকিছু পেরিয়ে আমি এগিয়ে যাচ্ছি। স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, এখন পর্যন্ত কুমিল্লার নির্বাচনী পরিবেশ শান্ত আছে। পরিস্থিতিও বলা যায় ভোটারদের অনুকূলে। কিন্তু ভোটের দিন নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি। কারণ সদরের এমপি এলাকায় রয়ে গেছেন। নির্বাচন কমিশন তাকে নির্দেশনা দিলেও তিনি সেটা মানেননি। নানাভাবে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় থাকছে না।

প্রচারণার শেষ দিনেও বাহাস: কুমিল্লা সিটিতে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যদিয়েই শেষ হয়েছে মেয়র প্রার্থীদের প্রচারণা। দুর্নীতি আর মাদক ব্যবসায় সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সবখানে। প্রার্থীদের কেউ অসমাপ্ত কাজ শেষ করার সুযোগ চান, কেউ আবার চান ক্ষমতার পালাবদল। নির্বাচনে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কালোটাকার ছড়াছড়ি হচ্ছে অভিযোগ করে  নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বলেন, আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী যার বিরুদ্ধে আমি দুর্নীতির অভিযোগ এনেছি- তিনি কালোটাকা ছড়াচ্ছেন। এমনকি আমার কর্মীদেরকেও টাকা দেয়ার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। ১৫ তারিখ নৌকার জয় হবে।

নির্বাচন কমিশনের কিছুটা সমালোচনা করে সাক্কু বলেন, আমার শুধু একটাই ভয়। এটা হলো, ইসি খালি মুখেই কথা বলে। কিন্তু অভিযোগের তো কোনো সুরাহা করতে পারেনি। মানুষের যাকে ভালো লাগবে, তাকেই ভোট দিবে। এট নিয়ে ভাবার কিছুই নেই। কিন্তু ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য যে পরিবেশ দরকার সেটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মূলত এটাই ভয়।

আরেক মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই মানুষের কাছ থেকে হাজারো অভিযোগ পাচ্ছি লুটেরাদের বিষয়ে। সবাই বলছে আগে যারা দায়িত্বে ছিল তারা কেউই কুমিল্লার উন্নয়নের জন্য কিছু করে নাই। সবাই মিলে খালি উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ পাওয়া টাকা লুট করেছে। আর তাই জনগণ এবার কোনো দানবকে ভোট দেবে না। 

মক ভোটিংয়ে সাড়া নেই: ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ১০৫ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। এ উপলক্ষে মক ভোটিং (নমুনা ভোট)-এর আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে মক ভোটিংয়ে ভোটারদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। কুমিল্লা হাই স্কুল কেন্দ্রে ১০টা ২০ মিনিটে দেখা যায় ভোটারশূন্য কেন্দ্র। এরপর ক্রমান্বয়ে নগরী জিলা স্কুল কেন্দ্র, ভিক্টোরিয়া কলেজ কেন্দ্র সর্বশেষ ১১টা ২০ মিনিটে ফয়জুন্নেসা কেন্দ্রে দুজন ভোটারের উপস্থিতি দেখা যায়। নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ফয়জুন্নেসা কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, ওই কেন্দ্রের ভোটার ১৯৭৭ জন। সবাই মহিলা ভোটার। অনেকে কাজে ব্যস্ত তাই আসে নাই। মক ভোটিং তাই ভোটার কম। তবে সব পরিস্থিতি ঠিক থাকলে ভোটের দিন ভোটারের উপস্থিতি থাকবে।

একই কেন্দ্রের ভোটার বকুল রানী শীল বলেন, আমার মারে নিয়া আইছি। বুড়া মানুষ। ভোট দিতে জানে না। মা’র আঙ্গুলের ছাপ মিলে নাই। তাই ভোট দিতে পারে নাই। তবে এখানকার স্যারেরা সব বুঝাইয়া দিছে। আইজ আইডি কার্ড আনে নাই তাই ভোট দিতে পারে নাই। স্যারেরা বলছে, ভোটের দিন মায় আইডি কার্ড নিয়া আইলে ভোট দিতে পারবো। ভোটার গৌরী মজুমদার বলেন, আগে আসলে সিল মারতে হইতো, ব্যালট ভাঁজ করতে হইতো। এখন আর তা নাই। আবার মারামারিও হইতো। এখন খুব সহজ। আইসা ভোট দিয়ে দিছি এক মিনিট ৩০ সেকেন্ডে।

বহিরাগত রোধে ইসিতে স্মারকলিপি: কুসিক নির্বাচনে বহিরাগতদের তৎপরতা রোধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। সোমবার নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, শেষ মুহূর্তে নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়ছে। অলিগলিতে মহড়া দিচ্ছে ক্যাডাররা। এ ছাড়া বিভিন্ন হত্যা মামলার আসামিরাও প্রকাশ্যে আসছে। এতে করে ভোটারদের মাঝে ভয় ও শঙ্কা বাড়ছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। 

উল্লেখ্য, এবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডে ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন ভোটার। মোট কেন্দ্র ১০৫টি। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীসহ মোট পাঁচজন মেয়র প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন। এর মধ্যে ১০৮ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৩৬ জন মহিলা সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী।

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102