সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:১৬ অপরাহ্ন

ই-পাসপোর্টের অর্জন ম্লান করছে দালালচক্র

সংবাদদাতার নাম :
  • খবর আপডেট সময় : বুধবার, ১৬ মার্চ, ২০২২
  • ১৭৬ এই পর্যন্ত দেখেছেন

মো. জাওয়াদুল করিম: সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। উন্নত দেশগুলোর মতো আমাদের দেশেও সবকিছুতে আধুনিকায়নের ছোঁয়া লেগেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলছে আমার দেশ-উদ্দেশ্য তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার সংকল্পে বিশ্বের ১১৯তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম কোনো দেশ হিসাবে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশ করেছিল ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি। এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করবে।

ই-পাসপোর্টের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি পাসপোর্ট প্রত্যাশী মানুষের ভোগান্তি হ্রাস করবে, এমনটাই আশা ছিল। কিন্তু ই-পাসপোর্টের কারিগরি মান বাড়লেও কর্মীদের দক্ষতার অভাব রয়েছে। রয়েছে স্বচ্ছতার অভাব। সেইসঙ্গে নানাবিধ জটিলতা এখানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। এমন সংকট নিরসনে কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

এমআরপি পাসপোর্টের বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখন ই-পাসপোর্টের সেবা গ্রহণ করছে। ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এর মাধ্যমে ই-গেট ব্যবহার করে খুব দ্রুত ও সহজে ভ্রমণকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন। ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এর মাধ্যমেই ইমিগ্রেশন দ্রুত হয়ে যাবে। বর্তমানে এমআরপি বা যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের মতো ই-পাসপোর্টের বইও একই রকমের থাকে। তবে ই-পাসপোর্টে বরং পলিমানের তৈরি একটি কার্ড ও অ্যান্টেনা থাকবে। সেই কার্ডের ভেতরে চিপ থাকবে, যেখানে পাসপোর্ট বাহকের সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ডাটাবেজ সংবলিত থাকবে পাসপোর্টধারীর তিন ধরনের ছবি, ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ। এটি যে পাসপোর্ট ব্যবস্থার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। সঙ্গে সঙ্গে এটি অত্যন্ত নিরাপত্তা সংবলিত একটি ব্যবস্থা, যার ওপর আস্থা রাখা যায়।

ই-পাসপোর্টের এমন আধুনিক ব্যবস্থার পরও মানুষ ভোগান্তির শিকার হবে, এটা অকল্পনীয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, সে কল্পনা যেন বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সরকারের মহতি উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়; কিন্তু দালালচক্রের কারণে এটি ম্লান হচ্ছে। এ দায় কার? পাসপোর্ট অফিসে কর্মকর্তাদের ঘাটতি-গাফিলতি চোখে পড়ার মতো। তাদের জন্যই জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের কারণে মানুষ ক্রমাগত নানাবিধ বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। কর্মকর্তাদের সেবাদানের মনোভাব নেই বললে চলে।

বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রতিপাদ্য দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে পাসপোর্ট অফিস দুর্নীতিমুক্ত করার প্রত্যয়ের কথা আমরা শুনেছিলাম; সাধুবাদ জানিয়েছিলাম এই মহতি উদ্যোগকে। কিন্তু সবকিছু আধুনিক করার পরও এখানে দালালচক্রের অদৃশ্য হাত নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব হয়নি। উঁচু শ্রেণির কর্মকর্তারা যথেষ্ট সেবাদানে কর্মব্যস্ত। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসের নিম্নস্তরের লোকজন বিনা কারণে সেবা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের গড়িমসি, ঢিলেমি, অবৈধ কিছুর দিকে ইঙ্গিত বহন করে; যার ফলে জনগণ বিব্রত হওয়ার পাশাপাশি কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না।

বেশ কিছুদিন আগে সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট করাতে গিয়ে সাধারণ পাসপোর্ট সেবাপ্রত্যাশী মানুষের ওপর নিম্নস্তরের কর্মকর্তাদের অহেতুক প্রশ্ন করার প্রবণতা, রেজিস্ট্রেশন ফরম নিয়ে অহেতুক জটিলতা সৃষ্টির প্রবণতা নিজ চোখে অবলোকন করেছি, যা দালালচক্রের অদৃশ্য হাতের কথাও মনে করিয়ে দেয়। কর্মকর্তাদের এমন ব্যবহারে বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষ দালালের দ্বারস্থ হচ্ছে, যা তাদেরকে বিপর্যস্ত, ক্লান্ত ও নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন করছে।

এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা থেকে পাসপোর্ট অফিসকে মুক্ত করা অতি জরুরি। অন্যথায় সমৃদ্ধির পথে আমাদের অগ্রযাত্রা অনেকটাই থমকে যাবে। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ সেক্টরে ই-পাসপোর্টের সুবিধা চালুর মাধ্যমে সরকার তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর দেশ গড়ার সংকল্পকে দৃঢ় করেছে। সে সংকল্প আরও সুদৃঢ় হবে, যদি পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সেবাহীন মনোভাব ও দালালচক্রের সংশ্লিষ্টতা নির্মূল করা যায়। নীতিনির্ধারক মহল এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে গুরুত্বপূর্ণ এ সেক্টরকে দুর্নীতিমুক্ত করবেন, এটাই প্রত্যাশা।

শিক্ষার্থী: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102