আমরা জানি হিজরি রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে অর্থাৎ ২৭শে রজব পালিত হয়ে থাকে। শবে মেরাজকে মেরাজ-উন-নবীও বলা হয়ে থাকে। এছাড়া, এই রজনীকে লাইলাতুল মেরাজও বলা হয়ে থাকে। এই রজনীতে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা তার প্রিয় বান্দা ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স)-তে সপ্তম আসমানে নিয়ে গেলে সেখানে তিনি মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার সাক্ষাৎপ্রাপ্ত হন। সেই রজনীতে সংঘটিত উক্ত ঘটনার স্মরণে মুসলিম উম্মাহ লাইলাতুল মেরাজ বা শবে মেরাজ পালন করে থাকে।
শব বা লাইল শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো রাত বা রজনী আর মেরাজ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো সাক্ষাৎ বা দর্শন। অর্থাৎ এই রজনীতে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা তার প্রিয় বান্দা ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স)-তে সপ্তম আসমানে নিয়ে যান।
মেরাজের রাতে সংঘটিত ঘটনা ও ইতিহাস
নবুয়তের প্রথমদিকে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স)-কে সান্ত্বনা স্বরূপ মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা তাঁর সান্নিধ্যে নিয়ে দুনিয়া পরবর্তী জীবনের অনেক বিষয়াবলী অবহিত করতঃ তাঁর উম্মত হিসেবে আমাদের জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের নির্দেশনা জারি করেন। ঘটনাটি ইসলামের দৃষ্টিতে মিরাজ বা মেরাজ নামে অবিহিত।
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর সব থেকে বড় মোজেজা এটি। প্রিয় নবী (স) থেকে বর্ণনায় ২৬ রজব দিবাগত রজনী তাঁকে মহামহিমান্বিত সত্তা পবিত্রতম একটি শহর মক্কা হতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র নগরী জেরুজালেমে ভ্রমন করান। পরবর্তীতে জেরুজালেমে অবস্থিত বায়তুল মোকাদ্দাস (আকসা) হতে প্রথম আসমানে নিয়ে যান। সেখান থেকে দ্বিতীয়, তৃতীয় এমনি করে সপ্তম আসমান নিয়ে আসেন যেখানে আরশে আজিম অবস্থিত। সেখানে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার তাঁর প্রিয় এই বান্দাকে তাঁর অনেক মহিমান্বিত নিদর্শন দেখান। দেখান বেহেত, দোযখসহ শেষ বিচারের দিন কি হবে ভুলে থাকা বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষগুলোর।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা এত বড় এই ঘটনা দ্বারা বুঝাতে যা তাঁর বান্দাদেরকে বুঝাতে চেয়েছেন তার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।
আমাদের প্রিয় নবীজি বায়তুল্লাহ হতে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা প্রেরিত বিশেষ যান ‘বোরাক’ যোগে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার প্রেরিত ফেরেশতা ‘জিবরাইল’ ধাপে ধাপে ‘বায়তুল মোকাদ্দাস’ বা ‘মসজিদুল আল আকসা’ হয়ে ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ গমণ করেন। বায়তুল্লাহ হতে আল আকসা পর্যন্ত চলতি পথে হযরত মুহাম্মদ (স) জিবরাইল এর নির্দেশে বিভিন্ন যায়গায় বিরতিতে বেশ কয়েক রাকাত নামাজ আদায় করেন। এই বিরতিতে তিনি বিভিন্ন নবী ও রাসুলগণদের সহিত মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার সাক্ষাৎ ও কথোপকথনের স্থানগুলোর দর্শন লাভ করেন।
যখন তাঁরা উভয়ই মসজিদুল আল আকসায় পৌঁছান সেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার নির্দেশে হযরত আদম (আ) হতে সকল নবী ও রাসুলগণদের আত্মার আগমন ঘটে এবং প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর ইমামতিতে দু’রাকাত নামাজ আদায় করেন।
শবে মেরাজ মুসলমানদের বড় ও পবিত্র পালনীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলোর একটি। লাইলাতুল মিরাজ বা পবিত্র এই রজনীর ঘটনা হাজারো সহীহ হাদিসের পাশাপাশি আসমানী কিতাব আল কোরআন-এ উল্লেখ রয়েছে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা তা’আলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘অতঃপর তিনি নিকটে এসেছেন এবং অতীব নিকটবর্তী হয়েছেন। এমনকি দুই ধনুকের মত নিকটবর্তী হয়েছেন, এমনকি আরও অধিকতর নিকটবর্তী হয়েছেন। -(সুরা নজম : আয়াত ৮ ও ৯)।
পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদিসের বর্ণনায় মেরাজের ঘটনাটি বিশ্বাস করা প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য এবং এই রজনী আল্লাহর ইবাদত (নফল নামাজ, তসবিহ ও কুরআন পাঠ) ও দিনে রোজা পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ সম্ভব।