

“জঙ্গি গোষ্ঠী ও স্বাধীনতা বিরোধীদের সহায়তায় অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী অনির্বাচিত অসাংবিধানিক সরকার দ্বারা বেআইনী পন্থায় উপমহাদেশের প্রাচীন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী, গণমানুষের দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও তার সকল অঙ্গসংগঠন সমূহের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, অন্যায়ভাবে করিডোর খুলে দেয়া, দেশব্যাপী অসংখ্য মিথ্যা মামলা ও প্রকাশ্যে জঙ্গিদের পৃষ্টপোষকতা দেশব্যাপী মবকিলিং এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের উদ্যোগে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এর(হাউজ অব কমন্সের) সামনে কয়েক হাজার প্রবাসী বাঙ্গালীর উপস্থিতিতে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৪ মে) লন্ডন সময় দুপুর এক ঘটিকায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জালাল উদ্দিন এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমান, সাবেক মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ার উজ্জামান চৌধুরী, সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হরমুজ আলী, সহ সভাপতি শাহ আজিজুর রহমান, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক নঈম উদ্দিন রিয়াজ, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী, মাসুক ইবনে আনিস, আ.স. ম. মিসবাহ, শাহ শামীম আহমদ, সারব আলী, তারিফ আহমদ, সৈয়দ সুরুক আলি, আনসারুল হক, কাউসার চৌধুরী, আলতাফুর রহমান মোজাহিদ, মাকসুদ রহমান, সহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বিক্ষোভ মিছিল ও উত্তাল স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পার্লামেন্ট স্কয়ার।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা ড. ইউনুস, ও আসিফ নজরুলদের ব্রিটেনে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। বক্তারা বলেন আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করে দিলেই শেষ নয়, আওয়ামীলীগ আর দ্বিগুণ শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবে। অতীত ইতিহাস তাই বলে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন অবৈধ ও অসাংবিধানিক দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের যে ঘোষণা দিয়েছে তাতে বাংলার জনগণের সাথে প্রবাসীরাও হতবাক ও ক্ষুব্ধ। ইউনুসের সময়টা বাংলাদেশের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। যে দলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আজ স্বাধীন দেশে সেই আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে জনগণের ম্যান্ডেটহীন অগণতান্ত্রিক দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকার। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকার বাংলার মাটিকে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও উগ্রবাদী গোষ্ঠীর উর্বর ভূমিতে পরিণত করতে চায়।
বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ মানে হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আদর্শ ও মূলবোধকে নির্বাসিত করা এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের নগ্ন উল্লম্ফনকে প্রশয় দেওয়া। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার ইউনূস সরকারের এই সিদ্ধান্ত সমূহকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ প্রবাসীরা। বাংলাদেশ আজ মহাসংকটে উল্লেখ করে বক্তারা আরও বলেন ’৭১ এর পরাজিত শক্তি, ভিনদেশিদের যোগসাজশে বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। মেটিকুলাস ডিজাইনের মাধ্যমে সবকিছু ধ্বংসর কাজ চলেছে।
প্রতিদিনই লন্ডন সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা ইউনুস সরকারের অবৈধ কাজের নিন্দা ও এই সরকারের পদত্যাগের দাবীতে সভাসমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। যতদিন বাঙালি, বাংলাভাষা পৃথিবীর মানচিত্রে থাকবে ততদিন বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ গণমানুষের সংগঠন হিসেবে নিপীড়িত বাঙালির হৃদয়ে থাকবে ।
উল্লেখ্য যে, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় জারি করা এই নিষেধাজ্ঞাকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর শঙ্কা তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগ এই পদক্ষেপকে অবৈধ” ও অসাংবিধানিক” বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নিরপেক্ষ নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানো হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এই নিষেধাজ্ঞাকে বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ এই সিদ্ধান্তকে “বিভেদ সৃষ্টিকারী” এবং “গণতান্ত্রিক নীতির উপর আঘাত” বলে অভিহিত করেছে, যা সমাজে বিভক্তি বাড়াচ্ছে এবং ভিন্নমত দমন করছে।
হিউস্টন ক্রনিকল লিখেছে, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন এক সন্ধিক্ষণে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার কার্যালয়ের প্রতিবেদনে ‘এমন রাজনৈতিক দলের নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকার’ সুপারিশ করা হয়েছে যা প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং বাংলাদেশী ভোটারদের একটি বৃহৎ অংশকে কার্যকরভাবে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করবে।
তবে, দ্য প্রিন্ট এবং লাইভমিন্ট সতর্ক করেছে যে, এই পদক্ষেপ ভোটারদের একটি বড় অংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
দ্য ট্রিবিউন জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ এই নিষেধাজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যা রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ একটি প্রতিবেদনে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করার পরামর্শ দিয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা “প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফিরে আসার পথে বাধা সৃষ্টি করবে” এবং বাংলাদেশের ভোটারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে। জাতিসংঘের এই সতর্কতা সত্ত্বেও, ইউনূস সরকার এগিয়ে গেছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগকে আরও গভীর করেছে।
আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে গত অক্টোবরে “সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে নিষিদ্ধ হয়। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা জাতীয় নিরাপত্তা, জুলাই আন্দোলনকারীদের সুরক্ষা এবং ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তার জন্য নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের বিচারকে সমর্থন করলেও দল নিষিদ্ধকরণের বিরোধিতা করেছে বিএনপি। দলটি ডিসেম্বর ২০২৫-এ নির্বাচন চায়, কিন্তু সরকার জানিয়েছে, সংস্কারের অগ্রগতির উপর নির্ভর করে নির্বাচন জুন ২০২৬ পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে। এনসিপি এবং #জামায়াতে #ইসলামীর মতো দলগুলো নিষেধাজ্ঞার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে, যা রাজনৈতিক সমীকরণকে জটিল করছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করতে পারে। লাইভমিন্ট এবং দ্য প্রিন্ট জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ ভোটারদের একটি বড় অংশকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বাদ দিতে পারে।আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘ এবং প্রভাবশালী দেশগুলোর উচিত এই পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা। বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তাদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন।