পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করতে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে তিন দিনব্যাপী‘(হারমোনি ফেস্টিভ্যাল’ নামে) মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
আগামী ১০-১২ জানুয়ারি বিটিআরআই সংলগ্ন কাকিয়াছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এতে স্থানীয় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন উপকরণ প্রদর্শনী হবে।
অঞ্চলভিত্তিক এ ‘হারমোনি ফেস্টিভ্যাল’ মেলাকে সফল করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন। তারা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। নৃ-জাতি গোষ্ঠীর বর্ণিল জীবন ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন এই হারমোনি ফেস্টিভ্যাল ১০ থেকে ১২ জানুয়ারি সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।
ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগ্রহীরা খোঁজ নিচ্ছেন উৎসবের। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন জানান, শ্রীমঙ্গল ও সংলগ্ন এলাকায় বসবাসরত সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের একটি প্লাটফর্মে নিয়ে আসা হবে। তারা ৪৪টি স্টলের মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত পণ্য খাবার, জীবনাচার, পোশাক ইত্যাদি প্রদর্শন ও বিক্রয় করা হবে । এছাড়াও তাদের সংস্কৃতি, নাচ-গান, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের বিষয়াদি মঞ্চে পারফরমেন্স করবেন।
উৎসবে খাসিয়া, গারো, মণিপুরী, ত্রিপুরা, সবর, খাড়িয়া, রিকিয়াসন, বারাইক, কন্দ, রাজবল্বব, ভূঁইয়া, সাঁওতাল, ওরাও, গড়াইত, মুন্ডা, কুর্মী, ভুমিজ, বুনারাজি, লোহার, গঞ্জু, কড়া জনগোষ্ঠী অংশ নিচ্ছেন।
শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জের প্রতিটি এলাকায় তাদের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। এখানকার সবর জনগোষ্ঠী পত্র সওরা নৃত্য ও চড়ইয়া নৃত্য, খাড়িয়াদের খাড়ি নৃত্য, রিকিয়াসনদের লাঠি নৃত্য, বাড়াইকদের ঝুমুর নৃত্য, কন্দদের কুই নৃত্য, রাজবল্ববদের উড়িয়া নৃত্য, ভূঁইয়াদের ভূঁইয়া গীত, সাঁওতালদের লাগড়ে নৃত্য, ওরাওদের ওরাও নৃত্য, গড়াইতদের গড়াইত নৃত্য, মুন্ডদের মুন্ডারি নৃত্য, কুর্মীদের কুরমালি নৃত্য, ভূমিজদের ভূমিজ নৃত্য, বুনারাজিদের উড়িয়া ভজন, লোহারদের ভুজপুরি রামায়ন কীর্তন, গঞ্জুদের গঞ্জু নৃত্য, কড়াদের কড়া নৃত্য, খাসিয়াদের ঐতিহ্যযবাহী পোশাক ডিয়া কেরছা ও মালা পরিধানের মাধ্যমে নাচ-গান, তীর-ধনুক প্রতিযোগিতা, সীয়াট বাটু (গুলতি দিয়ে খেলা), কিউ থেনেং (তৈলাক্ত বাঁশে উঠার প্রতিযোগিতা), ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর কাথারক নৃত্য, বেসু নৃত্য, জুম নৃত্য, গযারি পুজা, কযার পুজা, নক থাপেং মা পূজা, কাদং (রনপা), গারো জনগোষ্ঠীর জুম নৃত্য, আমোয়দেব (পুজা), গ্রীক্কা নাচ (মল্লযুদ্ধ), চাওয়ারী সিক্কা (জামাই-বৌ নির্বাচন), চাম্বিল নাচ (বানর নৃত্য), মান্দি নাচ, রে রে গান, সেরেনজিং (প্রেমকাহিনীর গান), মণিপুরী জনগোষ্ঠীর রাসলীলা নৃত্য, পুং চলোম নৃত্য (ঢোল নৃত্য) রাধাকৃষ্ণ নৃত্য এবং সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল নৃত্য প্রদর্শন করা হবে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইসলাম উদ্দিন জানান, শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিতব্য ‘হারমোনি ফেস্টিভ্যাল’ বাংলাদেশে এই প্রথম। এতে স্থানীয় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি নিজেদের সংস্কৃতি, নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের প্রশার, তাদের খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ, স্থায়ী করণ এবং বিক্রয়ের একটি সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাদের অবহেলিত ঐতিহ্য তুলে ধরার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের এই উদ্যোগ।
এর ফলে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য একটি বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হলো। দীর্ঘদিন যাবত অবহেলিত এই জনগোষ্ঠী বর্তমান উদ্যোগের ফলে নিজস্ব এলাকায় বিশাল আয়োজনের মাধ্যমে তাদের সংস্কৃতি, জীবনযাপনসহ ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরার সুযোগ পেল। যা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এর ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পরবে এবং সমাদৃত হবে বলে মনে করি। এছাড়াও এই আয়োজন ও উদ্যোগের সাথে জড়িত থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এই আয়োজনকে সাফল্যমন্ডিত করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
এছাড়াও আয়োজনে থাকবে খাসিয়া জনগোষ্ঠীর পান নিয়ে লাইভ পরিবেশনা, ত্রিপুরাদের কোমর তাঁত, মণিপুরীদের লাইভ তাঁত, চা ও রাবার প্রসেসিং, হোমস্টে, কুমারদের লাইভ মাটির জিনিসপত্র প্রস্তুত করা থাকছে উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ।