১) 🖋️ আরশি গভীরে ধুসর গর্ভ 🖋️
পাশের রাস্তাতে তিন জন্মের লাশ ;
অনিয়মহীন এভাবেই একক অপার্থিব অশরীর ৷ উল্টোদিকে আমি নিভৃতের নির্জন সময়
ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি প্রভূত একাকী স্তব্ধ এভাবেই ,—
সময় সত্য ; আভরণ খোলা বৃষ্টির গন্ধ মেশা মধ্যরাতের শ্মশান !
সেটাও কবে থেকে জনহীন ; মানুষ পোড়া অতীব আঁধার ঢাকা সম্মোহনে বিভোর !
এভাবেই কিছু সময় অতীত সূড়ঙ্গে অশরীর আমিও …… ,
গভীর শূন্যতায় নিপুন অন্তরিক ; এই দর্পণ !
চেহারা বদেলে মৃত্যু ঘুম নিয়ে দিব্যি কাঙালের ছদ্মবেশে এই রাস্তাটা পেরিয়ে গেছে স্তব্ধ পেছল গলিপথ ধরে ,—
এই এখানেই প্রত্যন্তে ডুবে আছে বহু কালের বিবিধ
প্রণয় ; কিছু কিছু দুঃসময়ের পিছমোড়া সর্বনাশ ! গভীরতর আঁকার দিয়ে অকস্মাৎ নিজের প্রতি জন্মের শরীর ভুলে গেছে ; এই আমিটা ৷
তাই নানান বাহানা পেতেছি এই জন্মের ছায়ার কাছে মৃদু কান্নায় ,…..
মায়া চাদরের চটুল আকর্ষণ ; ওখানে আদ্যোপান্ত গভীর কুমারী সরোবর ৷
সেখানে নির্ঘুমে কতবার ডেবেছি এবং বেঁচেও উঠেছি ব্যক্তিগত হাওয়া ভাসিয়ে নিছক অলৌকিকে !
মঝেমধ্যে এই রাস্তায় চলে আসি প্রতিবিম্ব প্রতিফলনে অনাহুতের মত ….. !
আবেগ নতুবা স্বপ্ন ফেরত ভুল পথ ,
যেটুকু আকাশ ছিল সেটাও এভাবেই ফুরিয়েছে বিসমৃতির মরণ ডাকে !
কেউ একজন আরশির ভেতর একটানা বাইশ বছর ধরে ঘুমোচ্ছে !
অতিরিক্ত নীরবতা ছড়িয়ে স্মৃতির ভিতর ; নিপুন আছিলায় বহতা পেছল স্বপ্ন ,—– যাবতীয় জন্মগুলো নামহীন দিনগুলো নিয়ে পুড়ছিল একা এভাবেই !
এখান দিয়ে ইতিহাসের সিলেবাস প্রাণ তত্ত্বের বিন্দু বিষর্গ গুলো ছুঁয়ে দেখেছে এক বৈরাগী ভিক্ষুক …… !
এভাবে এটুকু নির্বিকার ছিলাম ; বুকের মধ্যে প্রতিজন্মের কান্না গুলো নিদারুণ চোখ মুছতে মুছতে আবেগে ও সোহাগে আত্ম পরিচয় পেতেছে এই পথে !
যেভাবেই চেয়েছি তোমায় ; মৃত্যুর পরে সেটাও স্মৃতি শূন্য এভাবেই নির্ভুল আঁকারহীন অশরীর হয়ে আছে !
নিছক এভাবেই মৃত্যু মৃত্যু কবিতার অনেকটা কাছেই আমার বেমালুম চলে আসা অভাবি প্রত্যয়ে ,—- চেহারা পাল্টে লুকিয়ে দেখেছি তোমাকে প্রতি জন্মে ৷
তুমি কিন্তু অচেনাই এভাবেই আছোঁয়া ; সুতরাং একবার বেঁচে ওঠার লোভ অদূরেই গোপন ছিন !
জন্মঋণ এবং বহুকালের সঞ্চিত অসুখ ; এই পথে
প্রেম প্রবাহে জ্যোৎস্নার মতই উজ্জ্বল ৷
এভাবেই মরেছি কতবার কতভাবে ; মৃত্যু ও মরণ সেটাও ভুলে গেছি ,— রীতিমত প্রতি জন্মের প্রেমের কাছে আমার তোমাকে না পাবার অভিমানে এই শ্মশান শূন্য পথে মৃত্যুর সেই দিন থেকে একা ও একক হয়ে নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে অবুঝ এভাবেই !
তবু ঘরে ফিরি ; যে শরীরটা প্রিয়জনেরা মৃত্যুর পর পুড়িয়ে ফেলেছে ; তার দু’ঘণ্টার ভেতর আবার অন্য এক দেহকে পাই !
আবার প্রতীক্ষায় থাকি তোমাকে পাবার !!
২) 🖋️ আজনবী অশারীর মৃত্যু 🖋️
মুক স্তব্ধ হলে নিজস্বী স্মৃতি স্তবকেরা ছায়ার ভেতর পায়ে পায়ে কাছে চলে এলে ; ইথার ভাষ্যে আজনবী শিতারিষ্ট যন্ত্রের কান মোলে নিপুন প্রণয়ে !
রোজ যাকে দেখি চেনা রাস্তায় ; চোখের মধ্যে রাখি সঞ্চিত পাপ , তাপ , মায়াবী অভিমান , এসব ভেতরেই চুপ একই অদৃশ্যতায় বিশ্রামহীন ; অপটু আদর্শে দর্পণের কাছে ঋণস্বীকার করে !
মৃত্যুর পর অন্য এক অদেখা অশরীর ছদ্মবেশ ; এই চেনা চৌরাস্তায় আমাকেও অচেনা দেখি গল্পের ফাঁদে ব্যথাতুর বিবর্ণ পাঁচালি নিয়ে এপাড়া – ওপাড়া অজ্ঞাত অবিচল শূন্যতায় ক্লেডিয়াস ঢেউয়ের ভেতর !
বহুদিন পর নিজে নিজেই নিখোঁজ হলাম ,—– এই ঘরে আমার আত্মগোপনের হদিশ পায়নি নিজের প্রিয়জন এবং স্ত্রী ও সন্তান ; তবুও এভাবেই মৃত্যু মৃত্যু উদাস অন্তরে ভিজে ওঠে মনের দু’চোখ !
কথা হয়েছিল এক যুগ আগে ; তোমার সাথে ! তখন কবিতার ভেতর দূর্দান্ত মুগ্ধতায় আগুনের কথা ভুলেই গেছি ,—– সময়টা আপাদমস্তক উড়ণচন্ডি ছিল ; প্রেম ছিল , প্রার্থনা ছিল , সুগন্ধ ছিল চারপাশ ঘিরে ….. তবুও এই মন ভালোবাসার দৃশ্যমানতা প্রত্যন্তে কতবার হিসেবহীন এঁকেছে স্বযত্নে ; সেটা মন বোঝে নি !
এভাবেই কতবার তোমার জন্য সখ করে মিথ্যেই মরেছি , সেটাও নাবুঝে এ-ভা-বে-ই নবনীতা !
এই যে এই ঘরে আমার উচ্ছ্বিষ্ট অতীত ; তারাও অবিবেচক , তা না হলে কেনোইবা ওরা মৃত্যুর পর স্মৃতিস্বপ্ন মেলে ধরে কথা না বাড়িয়ে ,—–
শ্মশান থেকে ওরা ফিরে এসে ছিল আমাকে দাহ করে ! নিম পাতা – লোহা – আগুন ছুঁয়ে এ বাড়ির চৌকাঠ ডিঙিয়ে ছিল ; ওদের ঠিক পিছন পিছন আমিও চলে এসেছিলাম এই ঘরে অযান্ত্রিক একক ! অথচ প্রিয় মুখগুলোর বিমূর্ত নাটক দেখে সব হারানো রাত রাত গন্ধে অনির্দিষ্ট মোচড় খেলাম ….. !
যখন এই শরীরটা পুড়ে উঠছিল ; স্মৃতিবাস স্বপ্ন গুলো একবার বাঁচার ইচ্ছাতে চিৎকার করে আমার অভ্যন্তরে তোমার নাম করে কেঁদে উঠেছিল নবনীতা !
সেদিনের সন্ধ্যায় শিলাবৃষ্টির ভেতর এই ঘরে প্রথম স্পর্শের ছোঁয়ায় আঁধার বিগ্রহের বুকে ফাঁটল দেখেছিলাম !
তুমি তোমার হাত এগিয়ে দিয়েছিলে ভালোবাসতে ,—- অথচ আজ হঠাৎ বাতাসে উড়ে গেল কবিতার খাতার শেষ তোমাকে নিয়ে লেখা কবিতা ; নবনীতা !
কতদিন কেটেছে এভাবে তুমিহীন দহনে – পীড়ণে – দুঃখে ও জ্বালায় ,—– এই ঘরে স্বপ্নরা এসে খোঁজ নিয়ে গেছে ; আমি আর ফিরবো না কোন ভাবে !!
৩) 🖋️ শব্দ বিজ্ঞাপন ও মৃত্যুঘুম 🖋️
জাগো , এভাবে চলতে চলতে ঘুমন্ত নির্ঘুমে নিরব নির্জনে একাকি !
জাগো , মৃত্যুর খবর পেরিয়ে শব্দ সন্ধি মেলাতে মেলাতে অন্য কোন শরীরে ! এই একবারই মনের কথা খুলে বললাম তোমায় ; যদি আত্ম সমর্পন করি বেঁচে থাকতে থাকতে ৷
জাগো , নতুন নতুন কথা ছড়িয়ে ফুল – পাখি – আকাশ – বাতাসকে আত্মীয় স্বজন বানাতে বানাতে ! সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর বৃষ্টির ধ্বনী এঁকেছি চোখে ; তবুও মনগল্পের টানে এই রাস্তায় রোজ প্রতিদিন মধ্যরাতে ঠিক এই সময় পথ অবরোধ করে না ফেরার দেশের সঙ্গী সাথীরা !
চল , বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে মৃত্যুর দরজা খুলে ; অন্য কোন খানে !
শেষটুকু লিখতে চেয়েছি মরা মানুষের পাশে বসে শব্দহীন জোছনা মেখে ,…… বহুদিন ধরে মন ভালো নেই ; গভীরে ডুবে গেছে বেশ কিছু স্মৃতি ! তবু শেষবারের মতো নিজেকে আঁকড়ে ধরতে চেয়ে আমি থেকে ছায়াটাও দৃশ্যের জ্ঞানগম্য ভুলে ভিষণ অন্ধকার মিশেছে !
জাগো , তবু একবার বাঁচার জন্য জাগো ; এই যে বহুকালের দর্পণে ভেসে উঠছে বেশ কয়েকটি কষ্টের দাগ ৷ ওধারে বৃষ্টিহীন মেঘ গর্জনে আকাশটা আজও নির্বাক হয়ে চেয়ে আছে , ….. তবু মরে যেতে ইচ্ছা করে ; যদি মৃত্যুর আগে ও পরে রাজি হয়ে গেলাম এই আমিটার কাছে ; আবার নতুন শরীর নিয়ে জন্মে ওঠার !
এই মুহূর্তে কতজন হাসছে আড়ালে ; কতজন ভিতরে ভিতরে পুড়ছে জ্বলনে ও জ্বালায় ! তবু শেষ পর্যন্ত ঐ যে সময় ভালোবাসাহীন নির্বিকার ভঙ্গিতে চুপশব্দে বোবা শয়তানের ছদ্মবেশ নিয়ে শ্মশান অপেক্ষা করে আমারই জন্যে !!
ঘরে ফেরার সময় হতেই মৃদু কান্নার শব্দে মনে হয় ; কিছু ফেলে যাচ্ছি না তো ? নীলফুল – টকঝাল স্বপ্ন – ছদ্ম আদর্শ , কিম্বা রূঢ় অস্বীকারে বিমুখ প্রেম ! অগাধ ধোঁওয়া বুক ভাড় করে তোলে ,….. লোকে ভাবে কিছু দোষ করে ফিরছি !
তাকিয়ে দেখি পড়ে আছে আমার জন্মঋণ ; আমার এতকালের স্মৃতিছুট্ সময় !!
৪) 🖋️ পরবাস্তব এবং হৃদয়তান্ত্রিক পদ্য 🖋️
চোখের কাছে অচেনা সর্বনাশ
ভেতর থেকে দৃশ্যের বিচ্ছেদ
মনের মধ্যে যন্ত্রণার অলি-গলি
নামহীন যত কান্নার নির্দেশ !
এখন থেকে অন্তরে তুমি থাক ; বিম্বা অতলে হৃদয় মেলে রাখ ….
এইবেলা যদি স্পর্শে ওঠো কেঁপে , আকাশ থেকে বৃষ্টি আসুক ঝেঁপে ,—
গভীরের সুখ সময়ের পথ ধরে
চলতে – চলতে কোন অতলান্ত ভোরে
স্বপ্নের কথা নিজেকে বলতে – বলতে ; ঘুম ভেঙে যায় মনের অজান্তে !
কোথায় যেন পুড়ছে অচেনা স্মৃতি , মিথ্যে – মিথ্যে বিষণ্ন দুটি চোখ ,—-
কোথায় যেন নামহীন পৃথিবীতে
ভোরে আছে যত মৃত্যুর প্রতিশোধ !
হঠাৎ যদি ফুল – পাখি – চাঁদ দেখে ; সময়ের সাথে একা একা পথ চলি ,—-
কবিতার কাছে আশ্রয় খুঁজে নিয়ে ; তিন প্রহরের যন্ত্রণা তাকে বলি !
এসব কথা আত্মায় ঘোরে – ফেরে ; তবুও কেন মন বোঝে না তাকে ,—– চতুর্দিকের অগণন স্মৃতিগুলো আদিগন্ত ভালোবাসা হয়ে থাকে !
চলে যাব ব’লে চোখ ভিজে আসে জলে ; চুপচাপ শুধু নীরবতা নিয়ে থাকি ,—-
চেনা – অচেনার অনেকেই কাছে থাকে
মৃত্যুর পাখি করে যায় ডাকিডাকি !
নতুন ক’রে আসব আবার ফিরে ; ডাকবে কাছে নতুন নামে যখন , সেই পুরাতন স্মৃতির ফাঁকে – ফাঁকে
আগের আমিকে পড়বে কি মনে তখন ?
স-মা-প্ত
🖋️
বাংলা কাব্যসাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবি ব্যক্তিত্ব বিদ্যুৎ ভৌমিক ৷ জন্ম ১৬ই জুন ১৯৬৪ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার ঐতিহাসিক শহর শ্রীরামপুরের এক সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত পরিবারে ৷ যাঁর প্রতিটি নির্মাণ কবিতা প্রেমীদের কাছে পরম সম্পদ ৷ কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক তাঁর কবিতার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পেয়েছেন ২০২২ “সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সাহিত্য সম্মান”। সম্প্রতি ২০২৩ কলকাতার মধুসুদন মঞ্চ মৌললী যুব কেন্দ্রে “ছায়াপথ প্রকাশনী” থেকে তাঁকে দেওয়া হয় বিশেষ সাহিত্য সম্মান ৷
নিউজ /এমএসএম