শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৫১ অপরাহ্ন

মৃতদেহ সৎকারের নতুন পদ্ধতি নিয়ে আসছে ব্রিটেন

যুক্তরাজ্য অফিস
  • খবর আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩
  • ১২৭ এই পর্যন্ত দেখেছেন

মৃতদেহ সৎকারে আধুনিক এক পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হতে চলেছে ব্রিটেন। গ্রিনহাউজ গ্যাস ও কার্বন নিঃসরণ কমাতেই পদ্ধতিটির উদ্ভাবন। অভিনব এ পদ্ধতিটিতে উচ্চ তাপমাত্রার পানিতে গলিয়ে ফেলা হবে মৃতদেহটিকে। একে ক্ষারীয় হাইড্রোলাইসিস, রিসোমেশন বা ‘জলের শ্মশান’ নামেও ডাকা হয়। কো-অপ ফিউনারেলকেয়ার নামের একটি প্রতিষ্ঠান এ পদ্ধতিটি চালু করছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র্রে পদ্ধতিটির ব্যাপক প্রচলন থাকলেও ব্রিটেনে এই প্রথম। সোমবার বিবিসি, মেট্রো ইউকেসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি বছরের শেষেই প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করবে।

গবেষকরা বলছেন, মৃতদেহ পোড়াতে ব্যাপক পরিমাণে জ্বালানির প্রয়োজন হয়। একটি মৃতদেহ পোড়ালে ২৪৫ কেজি কার্বণ নিঃসরিত হয়, যা ৬৫,০০০ পরিবারের বিদ্যুৎ সরবরাহের সমান। পরিবেশ থেকে দূষণ কমাতে রিসোমেশন পদ্ধতির কথা চিন্তা করা হয়। মাটিতে দাফনের পর মৃতদেহ পচতেও সময় লাগে দীর্ঘদিন। প্রাকৃতিকভাবে ঘটে যাওয়া ঘটনারই দ্রুততম পদ্ধতি এ জল-সৎকার। ভিন্নধর্মী এ পদ্ধতিটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়।

প্রথমে মৃতদেহটিকে মেশিনে রেখে পর্যাপ্ত জল দেওয়া হয়। ওজন, লিঙ্গ এবং মৃতদেহটির সার্বিক দিক বিবেচনা করে জলের পরিমাণ নির্ধারিত হয়। সাধারণত মৃতদেহ মাটিতে দাফনের সময় কফিনে রাখা হয়। জল-সৎকারের জন্যও মৃতদেহটিকে একটি পশমী কাফনে মোড়ানো হবে। এরপর কর্নস্টার্চ থেকে তৈরি একটি ‘বায়ো পাউচ’-এ স্থাপন করা হবে। তারপর এতে পটাশিয়াম হাইড্রো-অক্সাইড যোগ করা হয়। চাপযুক্ত ট্যাঙ্কটি ক্ষারীয় দ্রবণে পূর্ণ করা হবে। ট্যাঙ্কটি ১৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) উত্তপ্ত করা হয়। ৯৫ শতাংশ জল ও উচ্চতাপে হাড় থেকে টিস্যুগুলো আলাদা হয়ে যায়।

প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ৪ ঘণ্টা সময় ব্যয় করা হয়। হাড়গুলো পৃথক করার পর বাকি তরলটুকু প্রায় ৩৩০ গ্যালন পানি দিয়ে নিষ্কাশন করা হয়। সবশেষে অবশিষ্ট হাড়গুলো ‘সাদা পাউডার’ করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কো-অপ কোম্পানিটি বছরে ৯৩,০০০টিরও বেশি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ব্যবস্থা করে।

ইতোমধ্যেই ব্রিটেনের আইন কমিশন বিষয়টিকে খতিয়ে দেখছে। নতুন এ দাফন পদ্ধতিকে কীভাবে আইনের অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। তবে এটি স্পষ্ট যে, রিসোমেশন পদ্ধতিটি বে-আইনি নয় এবং প্রাসঙ্গিক স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও পরিবেশবিধি মেনে চলবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু নিজের সৎকারের জন্য এ পদ্ধতিটি বেছে নিয়েছিলেন।

ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব ও ধর্ম বিভাগের অধ্যাপক ডগলাস ডেভিস বলেছেন, ‘মৃত্যুর পর মৃতদেহ সৎকারের জন্য যুক্তরাজ্যের উদ্ভাবনী ইতিহাস রয়েছে। সহানুভূতিশীল, কার্যত এবং স্বাস্থ্যকরভাবেই যা সম্পন্ন হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য সৎকারের তুলনায় রিসোমেশন পদ্ধতিতে কম কার্বন নিঃসরণের ব্যাপরটিকে নিসন্দেহে অসংখ্য মানুষকে আকর্ষণ করবে।’ কো-অপ ফিউনারেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিল স্টুয়ার্ট বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত সৎকার দাফন ও দাহের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরিবেশবান্ধব ও উদ্ভাবনী বিকল্প তৈরি করাই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। শোকাহতের জন্য এবং নিজেদের অন্তিম যাত্রায় এটি একটি ইতিবাচক পদ্ধতি।’

নিজেদের পরিষেবা প্রসারিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি আরও কিছু শাখা উদ্বোধন করবে। রিসোমেশন পদ্ধতিটিতে বাড়তি কোনো খরচ নেই-এমনটাই দাবি কো-অপ প্রতিষ্ঠানটির। তবে নতুন এ পদ্ধতিটির পরিচিতি তুলে ধরা হবে কো-অপ কোম্পানিটির কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাদেরই করা এক পরিসংখ্যানেই তা স্পষ্ট। তাদের উদ্যোগে পরিচালিত ইউগোভ জরিপে দেখা গেছে, ৮৯ শতাংশ যুক্তরাজ্যের প্রাপ্ত বয়স্করা রিসোমেশনের কথা শোনেননি। তদুপরি গত পাঁচ বছরে অন্ত্যেক্রিষ্টিয়া সম্পন্নকারী এক-পঞ্চমাংশ ভাবছেন তারা তাদের প্রিয়োজনের সৎকারে এ পদ্ধতিটি বেছে নিতে।

নিউজ/ যুক্তরাজ্য / কেএলি

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102