আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে সবচেয়ে বড় সমাবেশ ঘটাবে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। এরইমধ্যে তাদের জনসমাবেশকে ঘিরে রাজনীতিতে উত্তাপ-উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। ওইদিন কি হবে তা নিয়ে সর্বত্রই নানামুখী আলাপ-আলোচনা ও জল্পনা-কল্পনা চলছে। তবে ১০ ডিসেম্বর বিএনপি-জামায়াতকে কোনোভাবেই রাজপথ দখলের সুযোগ দেবে না বলে হুসিয়ারি দিয়েছে যুবলীগ।
সংগঠনটির ৫০ বছর পূর্তি ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গত ১১নভেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশে এ হুসিয়ারি দেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। তিনি বলেন, আজকের সমাবেশের মধ্য দিয়ে মূলত বিএনপি-জামায়াতের রাজপথ দখলের হুমকির জবাব দেওয়া হবে।
একইসুর কতা বলেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিন যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করীম রেজা। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের আতঙ্কের জবাব দিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিন যুবলীগের অন্তর্গত ৭৫টি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সুশৃঙ্খলভাবে ডিসেম্বরের প্রথমদিন থেকেই স্ব স্ব এলাকায় জনগণের জানমাল রক্ষায় পাহারা বসানোর সকল দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপিকে রাজপথ দখলের সুযোগ তারা দেবেন না। বিরোধীদের যে কোন আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলায় রাজপথে থাকবে যুবলীগ নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, বিএনপি দুই-একটা সমাবেশ করে যে আতঙ্ক ছড়াতে চায় তার জবাব দিতে যুবলীগ প্রস্তুত। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই যুব সমাজ ঐক্যবদ্ধ। ইতোমধ্যে দেশব্যাপী কর্মসূচির নামে বড় বড় শোডাউন দিয়ে মাঠ দখলে রাখার চেষ্টা করছে করছে বিএনপি। জবাবে পাল্টা সভা-সমাবেশ ও মিছিল-শোডাউন করছে আওয়ামী লীগও। এতে আগামী ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে হামলা-সংঘাতের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট্ররা। এতে সাধারণ মানুষের মনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক-সংশয়।
এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জনগণের ক্ষতি সাধন করে, জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে এমন কোনো কর্মসূচি প্রতিহত করা হবে। আগামী পয়লা ডিসেম্বর থেকে রাজপথে থাকবে আওয়ামী লীগ, এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আগামী ১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বিভিন্ন পর্যায়ে বিজয় উৎসব পালন করবে। প্রতিদিন পাড়ায়, মহল্লায়, ওয়ার্ডে নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের অন্যতম অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের সম্মেলন। সবকিছু মিলিয়ে ডিসেম্বর মাসে রাজপথেই থাকবে আওয়ামী লীগ। আর এ কারণেই বিএনপির এই মহাসমাবেশকে ঘিরে উত্তেজনা বাড়ছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি অবস্থান রাজপথে সহিংসতা এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উত্তাপ-উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আর এরকম পরিস্থিতিতেই শেষ পর্যন্ত কি হয় তা নিয়ে নানারকম অনিশ্চয়তা কাজ করছে।
এই অনিশ্চয়তার মধ্যে জামায়াতের একটি গোপন পরিকল্পনা কথা ফাঁস হয়ে গেছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী বিএনপির জনসভায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে জামায়াত কাজ করতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। ইতোমধ্যে জামায়াত ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। গত কিছুদিন ধরেই বলা হচ্ছে যে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই। আর এই সম্পর্ক না থাকার বিষয়টি জামায়াত প্রকাশ্য করলেও বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু করেনি। যদিও ২০ দলের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে এবং বিএনপি এখন যে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ করেছে সেই সংলাপে জামায়াতকে রাখেনি। কিন্তু প্রকাশ্যে যাই হোক না কেন জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির গোপন সম্পর্ক এখনও রয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যেহেতু জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্য সম্পর্ক নিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আপত্তি রয়েছে এ নিয়ে বিএনপির সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিএনপি সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে। সে কারণেই জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি প্রকাশ্য কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না। কিন্তু প্রকাশ্যে কর্মসূচি না করলেও বিএনপি এবং জামায়াতের গোপন সম্পর্ক যে রয়েছে তা বুঝা যায় বিভিন্ন মহাসমাবেশ।
প্রতিটি মহাসমাবেশে জামায়াতের কর্মীদের উপস্থিতি লক্ষণীয় এবং এই মহাসমাবেশ গুলোতে জামায়াত তার নিজস্ব অবস্থান থেকেই অংশগ্রহণ করছে। যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন, জামায়াতের উপস্থিতি সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তারা বলছেন যে, যেকোনো সাধারণ নাগরিক এ ধরনের সমাবেশে আসতে পারে। কাজেই, এটি জামায়াত না অন্য কেউ সেটি বিচার করা আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু বিএনপি যাই বলুক না কেন জামায়াত বিএনপির এই সমস্ত মহাসমাবেশ গুলোতে যেমন লোক যোগাচ্ছে তেমনি আসন্ন ঢাকা মহাসমাবেশকে ঘিরে জামায়াতের প্রস্তুতি রয়েছে।
একাধিক গোয়েন্দা সূত্র বলছে যে, বিভিন্ন পাড়ায়-মহল্লায়, অলিগলিতে জামায়াত সশস্ত্র অবস্থায় থাকবে। জামায়াতের ১০ ডিসেম্বর নিয়ে তিনটি পরিকল্পনার কথা এখন পর্যন্ত জানা গেছে। প্রথমত, জামায়াতের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীদের গোপনে ঢাকায় এসে সমবেত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, জামায়াত তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় লালিত-পালিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করবে এবং এই জঙ্গি সংগঠনগুলো ১০ ডিসেম্বর এবং তার আগে-পরে নানারকম নাশকতা করার জন্য প্রস্তুত থাকবে। তৃতীয়ত, ১০ ডিসেম্বর অলিতে-গলিতে, পাড়া-মহল্লায় জামায়াত অবস্থান নিবে এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।
এরকম একটি পরিকল্পনা নিয়ে জামায়াত যখন এগুচ্ছে, তখন রাজনীতিতে সহিংসতার শঙ্কা নতুন করে বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিওা ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের পক্ষ থেকে একাধিক কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে তিন ধাপে আওয়ামী লীগ কর্মসূচি পালন করবে। প্রথমত, আওয়ামী লীগ প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে বিজয়ের মাস উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের সমাবেশ এবং কর্মসূচি পালন করবে। এই ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মসূচি গুলো এমন ভাবে করা হবে যেন ওই ওয়ার্ডকে জাগ্ররণ তৈরি হয়। দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি হবে অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো বিজয়ের মাস থেকে ঘিরে নানা রকম কর্মসূচি পালন করবে। তৃতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ঢাকায় দুটি বড় ধরনের শোডাউন করবে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, যত বেশি রাজনৈতিক কর্মসূচি হবে তত বেশি কোণঠাসা হবে বিএনপি এবং জামায়াত। আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, ডিসেম্বর এমনি বিজয়ের মাস। বিজয়ের মাসে আওয়ামী লীগের নানারকম কর্মসূচি থাকে। এবার কর্মসূচিগুলোর অবয়ব এবং আকার বড় করা হবে, যেন প্রতিটি কর্মসূচি দৃশ্যমান হয় এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করা যায়। আর এই সমস্ত কর্মসূচির মাধ্যমে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির নাশকতা এবং ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন।
এ বিষয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর জনগণের জানমাল রক্ষায় আওয়ামী লীগ সংঘাত নয় মাঠে থাকবে।
তিনি বলেন, দেশের জনগণকে নিরাপত্তা দিতে আওয়ামী লীগ সব সময় মানুষের পাশে আছে। কোনো রাজনৈতিক দল যদি দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা করে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে, জনগণকে জিম্মি করতে চায় তাহলে আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমুচিত জবাব দেবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করে। দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় মানুষের পাশে ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতে থাকবে।
ইউকেবিডিটিভি/ বিডি / এমএসএম