অর্থনৈতিক রিপোর্টার: বছরজুড়ে নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরেও বৃদ্ধি পেয়েছে খেলাপি ঋণ। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিংখাতে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ তিন হাজার ২৭৪ কোটি টাকায়। যা বিতরণ করা মোট ঋণের সাত দশমিক ৯৩ শতাংশ। তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে দুই হাজার ১২৪ কোটি টাকা। আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। বুধবার (২ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক খাতে খেলাপি কমাতে ঋণ পরিশোধের জন্য নানা রকম সুবিধা দিয়েও এর লাগাম টানা যাচ্ছে না। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ আবারও এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এখন আর নতুন করে কোনো সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না। ঋণ আদায়ে কঠোর হতে হবে ব্যাংকগুলোকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) ডিসেম্বর মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ১ হাজার ৭৯৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে এক লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। করোনা শুরুর বছর ২০২০-এর ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ ছিল। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা।
তথ্য বলছে, মোট খেলাপির মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে রয়েছে ৪৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ৫১ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকগুলোতে দুই হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার খেলাপি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও রাষ্ট্রের বিশেষায়িত তিন ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের মধ্যে তিন হাজার ৯৯১ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে।
করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় ২০২০ সালে ঋণ গ্রহীতারা কোনো টাকা পরিশোধ না করলেও তাকে খেলাপি দেখাতে পারেনি ব্যাংক। ২০২১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক কিস্তির ১৫ শতাংশ ঋণ পরিশোধে নিয়মিত থাকার সুযোগ দেয়। এই ছাড়ের কারণে একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা তা করেননি। ফলে ধারাবাহিকভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, বার বার ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেওয়ার পরও খেলাপি বাড়ছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৃঢ় পদক্ষেপ এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আবার কাউকে যাচাই-বাছাই না করেই ঋণ দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সতর্ক থাকতে হবে। যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দিলে খেলাপি বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেক হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলোকে ঋণ আদায়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। পাশাপাশি খেলাপি কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও তৎপর হতে হবে। যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দেওয়ায়সহ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার ফলে খেলাপি বাড়ছে। আবার নানা অজুহাতে ঋণ পরিশোধ না করার প্রবণতা বেড়েছে গ্রহীতাদের মধ্যে।