শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০১ অপরাহ্ন

সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ সৈয়দ জয়নাল আবেদিন

বাংলাদেশের আইসিটি ট্রাইব্যুনাল ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ও রাজনৈতিক নিপীড়নের হাতিয়ার

আজিজুল আম্বিয়া
  • খবর আপডেট সময় : শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১৫ এই পর্যন্ত দেখেছেন

বাংলাদেশে চলমান তথাকথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT-BD)–এর বিচার প্রক্রিয়াকে “ক্যাঙ্গারু কোর্ট” ও “রাজনৈতিক নিপীড়নের হাতিয়ার” হিসেবে অভিহিত করেছেন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা।

বৃহস্পতিবার পশ্চিম লন্ডনের ফ্রন্টলাইন ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের সিনিয়র কোর্টের সলিসিটর ও আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ সৈয়দ জয়নাল আবেদিন। তাঁর তত্ত্বাবধানে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্রকাশ করা হয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিশদ আইনি বিশ্লেষণ ও প্রমাণনির্ভর প্রতিবেদন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান প্রশাসন সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিমালা লঙ্ঘন করছে এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

প্রতিবেদনের মূল অনুসন্ধানসমূহ

১. অসাংবিধানিক সরকার:
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত শেখ হাসিনাই সাংবিধানিকভাবে বৈধ প্রধানমন্ত্রী।
সুতরাং কোনো নির্বাচনের মাধ্যমে নয়, প্রশাসনিকভাবে গঠিত ইউনূস সরকার একটি “দখলদার সরকার” (de facto regime) হিসেবে বিবেচিত।

আন্তর্জাতিক আদালতের Namibia Advisory Opinion (ICJ, 1971)–এর নজির টেনে প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধ সরকারের অধীনে গৃহীত কার্যক্রম আইনি দৃষ্টিতে “শূন্য”।

২. রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার অপব্যবহার:
২০২৪ সালের নভেম্বরে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের মাধ্যমে ICT আইনকে অতীতমুখীভাবে সম্প্রসারণ করে ২০০৯–২০২৪ সালের অপরাধ অন্তর্ভুক্ত করা হয়—যা সংবিধানের ৩৫(১) ও ৯৩ অনুচ্ছেদ স্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করছে।

৩. ন্যায়বিচারের অধিকার থেকে বঞ্চনা:
অভিযুক্তদের আইনজীবী বাছাইয়ের অধিকার কেড়ে নেওয়া, প্রসিকিউটর হিসেবে বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়োগ এবং একপাক্ষিক বিচার প্রক্রিয়ার অভিযোগ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, এ ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদের (ICCPR) ১৪(৩)(d) ধারার পরিপন্থী।

৪. অক্টোবর ২০২৫ অধ্যাদেশ – দোষী প্রমাণের আগেই দোষ স্বীকারের পূর্বধারণা:
নতুন অধ্যাদেশে তদন্তাধীন বা বিচারের মুখোমুখি ব্যক্তিদের সরকারি পদে থাকা বা নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে—যা ন্যায়বিচারের আগেই অভিযুক্তদের “দোষী” ধরে নেয়।

৫. গণগ্রেফতার ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ:
২০২৪ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লক্ষাধিক ব্যক্তি—যার মধ্যে রাজনৈতিক নেতা, সংখ্যালঘু ও সাংবাদিকরাও রয়েছেন—ন্যায্য বিচার ছাড়াই আটক হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।

বাংলাদেশের কারাগারগুলো ধারণক্ষমতার তিনগুণ বেশি বন্দীতে উপচে পড়ছে, এবং নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বহু অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি সতর্ক করে বলেছে, এসব কর্মকাণ্ড Rome Statute (1998) অনুযায়ী “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ” হিসেবে গণ্য হতে পারে।

সায়েদ জয়নাল আবেদিনের তার বক্তব্যে বলেন, “ড. ইউনূসের প্রশাসনের অধীনে পরিচালিত তথাকথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনো প্রকৃত আদালত নয়—এটি রাজনৈতিক নিপীড়নের একটি হাতিয়ার।
বাংলাদেশের মানুষ এমন একটি বিচারব্যবস্থা প্রাপ্য, যা বৈধতা, স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক ন্যায়ের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। যতদিন সাংবিধানিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন এই আইসিটি একটি প্রতীকী ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ হিসেবেই থেকে যাবে।”

প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন পিটিআইয়ের প্রতিনিধি অদিতি খান্না, সিএনএন নিউজ১৮ এর প্রতিনিধি সনজয় উর সুরী, bd24–এর প্রতিনিধি নাহাশ পাশা, চ্যানেল S–এর প্রতিনিধি রেজাউল করিম মৃধা, দৈনিক প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা সংস্করণ, দৈনিক ভোরের কাগজ ও জয় বাংলা পত্রিকার যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি আজিজুল আম্বিয়া, এবং লন্ডন BD TV এর মনির হোসেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টিভি প্রেজেন্টার ও সাংবাদিক তামান্না মিয়া।

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102