দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ আসনে (পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলা) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রতিবাদ অব্যাহত আছে। এ আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাঈমুজ্জামান ভূইয়া। এ মনোনয়নের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন মনোনয়ন বঞ্চিতদের সমর্থকরা। তারা সংবাদ সম্মেলন করে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।

 জেলা, উপজেলা, পৌর আওয়ামী লীগসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে নাঈমুজ্জামান ভূইয়ার মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানান মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাকর্মীরা।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মজাহারুল হক প্রধান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট ও আটোয়ারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম। তারা তিনজনই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন না দিয়ে নাঈমুজ্জামান ভূইয়াকে মনোনয়ন দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে তারা বলেন, তৃণমূলকে উপেক্ষা করে একজন হাইব্রীড নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগে এসে তিনি দুই বছরের মাথায় টাকার জোরে সহসভাপতি হয়েছেন। ছাত্রলীগ তো দূরের কথা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে যার কোনও রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ছিল না তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেছিলেন ‘আমি টাকা দিয়ে হলেও মনোনয়ন নিয়ে আসবো’। অবিলম্বে তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে দলের ত্যাগী রাজনীতিবিদদের মনোনয়ন দিতে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানান তারা।

নাঈমুজ্জামান ভূইয়ার মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়ক অবরোধ করেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা।

সংবাদ সম্মেলনে আটোয়ারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কোনও আন্দোলন সংগ্রামে যাকে পাওয়া যায়নি তাকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আমি মনে করি আওয়ামী লীগকে অপমান করা হয়েছে। আমরা তার পক্ষে নির্বাচন করবো না। তবে আমাদের মধ্যে যদি কেউ স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন তাহলে আমরা তার হয়ে কাজ করবো।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, ‘হাইব্রিড নেতাকে মনোনয়ন দেয়ায় দলের কেউ তাকে মেনে নিতে পারছে না। তিনি কখনো ছাত্রলীগ, যুবলীগের সাথে যুক্ত ছিলেন না, ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। উপজেলা নির্বাচনে তিনি প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন। পঞ্চগড়ের মাটির সাথে তার সম্পর্ক নেই। এমন নেতাকে আমরা মানি না। তিনি যাদের নিয়ে সভা সেমিনার করেন তারা ভাড়া করা বিএনপির লোকজন। তারা ফিরে যাওয়ার সময় ধানের শীষের স্লোগান দিতে দিতে বাড়ি যায়। ভোট দেয় বিএনপিতে।’

পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মজাহারুল হক প্রধান বলেন, ‘যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তিনি ১০ শতাংশ ভোটও পাবেন না। দলের কোন নেতাকর্মীই তাকে মেনে নিতে পারছে না। তার কোনও পরিচিতি নেই। শুনেছি তিনি বলেছিলেন, টাকা দিয়ে হলেও মনোনয়ন নিবেন। এমনটি যদি হয় তাহলে দলের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে। তাকে বাদ দিয়ে দলের মধ্য থেকে ত্যাগী ও পরিশ্রমী যে কাউকে মনোনয়ন দিলে আমরা তার হয়ে কাজ করবো।’

সংবাদ সম্মেলনের পর মনোনয়নের প্রতিবাদকারীরা দলীয় কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। পরে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা শহরের শেরে বাংলা পার্ক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে পঞ্চগড় ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন।