যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি কার্যকরের সিদ্ধান্তে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকার পদত্যাগসহ একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের ধারায় আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর ধোলাইখাল মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, এক আমেরিকার ভিসানীতিতে মাথা খারাপ হয়ে গেছে তাদের (সরকার)। আজকে একটা পত্রিকা আপনাদের দেখাতে চাই, পত্রিকার সারসংক্ষেপ বলতে চাই। উৎকণ্ঠায় মাঠ প্রশাসন, আলোচনায় সচিবালয়, আর যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য রপ্তানিতে প্রভাব পড়তে পারে।’
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বড় জিনিস কি জানেন। এরা এতো চুরি করেছে, এতো লুটপাট করেছে শুধু আওয়ামী লীগের ওপরেই নয়, প্রশাসনের লোকেরা এই সরকারকে সহায়তা দিতে গিয়েছে যে, এখন সব খাচ্ছে, এখন বালুও খাওয়া শুরু করেছে। চাঁদপুরে ৬ হাজার কোটির টাকার বালু খেয়ে ফেলেছে তারা। এটা আমার কথা নয়, নদী কমিশনের চেয়ারম্যানের কথা। এই হচ্ছে তারা, আজকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে।
সরকারের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আবারও বলছি, আপনি (শেখ হাসিনা) অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। কোনো টালবাহানা করবেন না। এদেশের মানুষ এখন আর আপনাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে তিনি জীবন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তার এতো বেশি শরীর অসুস্থ যে, ডাক্তাররা বলছেন অবিলম্বে তার চিকিৎসা বাইরে ব্যবস্থা করা দরকার। সেই কারণে আমরা গতকাল বলেছি, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আপনার তার বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এর সব দায়-দায়িত্ব এই সরকারকে নিতে হবে।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় খালেদা জিয়ার অবদানের কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য সারাটা জীবন ব্যয় করেছেন, সংগ্রাম করেছেন। তিনি বারবার যুদ্ধ করেছেন, লড়াই করেছেন। ৯ বছর আপোষহীন সংগ্রাম করেছেন এবং ৫ বছর কারাগারে বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তাকে মিথ্যা মামলায় তারা সাজা দিয়ে আটক করে রেখেছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে জাতি চরম ক্রান্তিলগ্নে পৌঁছেছে। আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে। তা নির্ভর করছে আমাদের ওপর, আপনাদের ওপর। এই সরকার সহজে কথা শুনবে না। আমাদের একটি আন্দোলনের মধ্যদিয়ে যেতে হবে। তরঙ্গের পর তরঙ্গ সৃষ্টি করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করতে হবে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এই শপথ আজকে আমাদের নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ওপর নির্ভর করছে আমরা স্বাধীন থাকব কী থাকব না। আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারব কী পারব না। আমাদের ভোটের অধিকার ফিরে পাব কী পাব না। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা করতে পারব কী পারব না। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারব কী পারব না। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে পারব কী পারব না। নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে পারব কী পারব না।
এ সময় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া দুটি স্লোগান ধরেন বিএনপি মহাসচিব। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই সরকার যদি আমাদের কথা না শোনে, ফয়সালা কোথায় হবে।
নেতাকর্মীরা জবাব দেন রাজপথে। মহাসচিব আরও বলেন, টেক ব্যাক, নেতাকর্মীরা জবাব দেন বাংলাদেশ। এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন আমরা সেই লক্ষে এগিয়ে যাই।
বক্তব্যের শুরুতে কারাগারে মৃত্যু হওয়া সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুকে স্মরণ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বর্তমান কারাগারে থাকা কয়েকজন নেতাদের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী এখনও কারাগারে আছেন। একটি ঘোষণা দিতে চাই, তাদের মুক্ত করেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র মুক্ত করব।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, গত এক বছরে সারাদেশে অসংখ্য সমাবেশ করেছি, রোডমার্চ করেছি। এই সময়ে আমাদের ২২ জন নেতাকর্মী এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। ঢাকায় একজনকে প্রাণ দিতে হয়েছে। গত ১৫ বছরে সারাদেশে এই ফ্যাসিস্ট সরকার তার অবৈধ ক্ষমতাকে টিকে রাখতে অসংখ্য নেতাকর্মীকে খুন করেছে। প্রায় সাতশ নেতাকর্মীকে গুম করেছে এবং ৪৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য এসব করে তারা গণতন্ত্রকামী মানুষকে চলমান সংগ্রাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে ও এক দলীয় নির্বাচন করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সাতক্ষীরার সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে আদালত সাজা দেওয়া এবং পাবনায় ৯ জন নেতাকর্মীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, এই সরকার নির্বাচিত নয়। শুধুমাত্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জোর করে দুই দুইবার কৌশল করে, তামাশা করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন সব রাজনৈতিক দলবর্জন করেছিল। সেবার ১৫৪ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে সরকার গঠন করে। ২০১৮ সালে একই কায়দায় আগের রাতে ভোটচুরি করে আবার তারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। আবার তারা পাঁয়তারা করে আটঘাট বেঁধে ২০২৪ সালে আরেকটি নির্বাচন করতে চাচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বলা হচ্ছে গত দুটি নির্বাচন তোমরা (সরকার) কারচুপি করছ। এইবার যদি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক না হয় এই ধরনের নির্বাচন দেশের জনগণ তো মানবেই না, আন্তর্জাতিক বিশ্বও মানবে না। এটাকে চাপা দেওয়ার জন্য বারবার মিথ্যা কথা বলছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে এই আওয়ামী লীগ এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল করেছিল। এবার কায়দা বদলিয়েছে। তারা এবার ক্ষমতায় এসে আদালতকে ব্যবহার করে একতরফা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান বাতিল করেছে। অথচ দেশের মানুষের মনের কথা বুঝে খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান করেছিল।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘এরা পরিকল্পিতভাবে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে জনগণকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আজকে গণতন্ত্র মুক্তি না পেলে, খালেদা জিয়া মুক্তি না পেলে এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। আর এই মুক্তি নির্ভর করছে আপনাদের জনগণের ওপর। তাই আসুন কালবিলম্ব না করে সরকার পতনের একদফা দাবিতে রাজপথে নামি এবং এ স্বৈরশাসককে বিদায় করি।
মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন সুলতানা, মীর সরাফত আলী সপু, রওনুকুল ইসলাম টিপু, অর্পনা রায় দাশ, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খানসহ আরও অনেকে।
নিউজ /এমএসএম