প্রধানমন্ত্রীর অধিদপ্তরের নির্দেশে মন্ত্রী পরিষদ নবীগঞ্জ উপজেলার ইমাম ও বাওয়ানির চা বাগানের শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ভাতাধিসহ যাবতীয় দাবি পাওনা পরিশোধে আন্ত:মন্ত্রণালয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভা মঙ্গলবার (২২ আগষ্ট) অনুষ্ঠিত হবে। এবিষয়কে সামনে রেখে চা শ্রমিকরা তাদের একমাসের ধর্মঘট, মানববন্ধন ও অবরোধ কর্মসুচী প্রত্যাহার করেন। গতকাল ২১ আগষ্ট নতুন আরেকটি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে চা মালিক পক্ষ ইমাম বাওয়ানি চা বাগানের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে চা শ্রমিকদের মধ্যে সতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
গত ১ মাস ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের চা শ্রমিকরা। চলমান তলব, রেশন, বকেয়া মজুরি, বোনাস, উৎসব ভাতা, ভবিষ্যত তহবিলের বকেয়া টাকা, চিকিৎসা, স্থায়ী বাসস্থান নিশ্চিত করণের দাবীতে দফায় দফায় নানা কর্মসূচি পালন করে আসলেও কার্যত কোনো সমাধান হয়নি। গতকাল মন্ত্রী পরিষদ সচিবের আস্বাসের প্রেক্ষিতে আবারও কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে বাগানগুলিতে।
হবিগঞ্জ জেলার হবিগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নে অবস্থিত ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের পাওনা বেতন ও অন্যান্য ভাতা দি পরিশোধের লক্ষ্যে আগামী ২২ আগস্ট ২০২৩ তারিখ বেলা ১২:০০ টায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সমুহ, বাংলাদেশ চা বোর্ড , প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জেলা প্রশাসক হবিগঞ্জ ও মালিকপক্ষের সাথে বৈঠকে বসছে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ। জানাযায়,ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের শ্রমিক বৃন্দ দীর্ঘদিন যাবত বেতন ও অন্যান্য ভাতাদি পাচ্ছেন না ৷ দীর্ঘ ৬ সপ্তাহ যাবত সাপ্তাহিক তলব ও রেশন না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন ৷ গত ১১ জুলাই ২০২৩ তারিখে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজারে ইমাম ও বাওয়ানি বাগানের শ্রমিকবৃন্দ, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিকপক্ষের অংশগ্রহণে .অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মালিকপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ পরিশোধ না করার প্রেক্ষিতে পুনরায় ২৬ জুলাই ২০২৩ তারিখে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, হবিগঞ্জে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব),বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবীগঞ্জ, বাগানের শ্রমিক বৃন্দ, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন এর নেতৃবৃন্দের সাথে এবং ইমাম বাওয়ানি বাগানের মালিকপক্ষ একটি বৈঠক করেন উক্ত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ জুলাই ২০২৩ তারিখে বকেয়া তলব রেশন ও বিগত দুই বছরের বকেয়া বেতন পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয় ৷
উক্ত অর্থ পরিশোধের জন্য মালিকপক্ষ অঙ্গীকার করলেও তা পরিশোধ করেননি৷ বিষয়টি হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করলে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ আগামী ২২ আগস্ট ২০২৩ তারিখে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাটি ডেকেছে ৷
এই সভার বিষয়ে ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের শ্রমিকদের অবহিত করতে গতকাল সকাল ১১টায় ইমাম চা বাগানে আসেন হবিগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ রফিকুল আলম, বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব প্রিয়াংকা পাল ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবীগঞ্জ জনাব ইমরান শাহারীয়ার, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এম,এ আহমদ আজাদ, সাবেক সহ সভাপতি এম,মুজিবুর রহমান, চা বাগানের ম্যানাজার ফখরুল ইসলাম, চা বোর্ডের রেজাউল করিম, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, ইমাম চা বাগানের সভাপতি রামভজন রবিদাশ প্রমূখ ।
শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করে ২২ আগস্ট ২০২৩ তারিখে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিষয়টি দ্রুত সমাধানের বিষয়ে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন ৷ এ সময়ে চা বাগানের পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও সাধারণ শ্রমিক বৃন্দ জেলা প্রশাসক, হবিগঞ্জ মহোদয়ের উদ্যোগে আস্থা ব্যাক্ত করেন ৷
চা শ্রমিকদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়- নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নে অবস্থিত ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগান। এইদুটি বাগানে কাজ করেন ৩৬০ জন চা শ্রমিক।
শ্রমিকদের দাবী, ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের ৩৬০ জন শ্রমিকের শ্রমচুক্তি মোতাবেক শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি/এরিয়ার অর্থ বাবদ ২০১৯-২০ ও ২০২১-২২ অর্থ বছরের ৮১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, এরিয়া বোনাসের ১৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা পরিশোধ করছেনা মলিকপক্ষ।
এছাড়া চা বাগান শ্রমিক ভবিষ্যত তহবিলের (পিএফ) ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা মালিক পক্ষ পিএফ কার্যালয়ে জমা প্রদান না করার ফলে অবসর প্রাপ্ত শ্রমিকগণ পিএফ অর্থ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে চা শ্রমিকদের রোদ-বৃষ্টিতে বাসস্থানে অবস্থান করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত তারা।
ইমাম চা বাগানের সভাপতি রামভজন রবিদাশ বলেন- বার বার আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েও মালিকপক্ষ বকেয়া পরিশোধ করেনি। এখন আমাদের উপর নতুন নির্যাতন শুরু হয়েছে যাতে আমাদের ছেলে মেয়েদের শিক্ষা আলো না পায় এই জন্য বাগান কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন আমাদের ছেলেমেয়ে এখন কোথায় লেখা পড়া করবে সেই চিন্তায় আছি।
ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের ম্যানাজার ফখরুল ইসলাম বলেন, অসুস্থ্যতার জন্য কয়েকদিন শিক্ষকরা স্কুলে যেতে পারেনি। আমরা স্কুল বন্ধ করি নাই মিথ্যা কথা।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ার বলেন, আমরা আশাবাদী মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর অধিদপ্ত স্থায়ী ভাবে সমাধান করবেন। দুটি চা বাগানের শ্রমিকদের পক্ষে পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক দেবী চন্দ্র তিনি সমস্ত দাবি দাওয়া তুলে ধরবেন। তিনি বলেন প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন বন্ধ হলো তদন্ত করে সঠিক পেলে আমরা বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।
নিউজ /এমএসএম