বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হুশিয়ারী দিয়ে বলেছেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তার জীবনে কোনো অঘটন ঘটলে তার দায় শেখ হাসিনার সরকারকে নিতে হবে।
শনিবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচিপূর্বক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ৩টা ১৫ মিনিটে কোরআন তেলোয়াতের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম।
এর আগে পদযাত্রা কর্মসূচি উপলক্ষে বেলা ১২টার পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলটির অঙ্গ ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল স্লোগান নিয়ে নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় তারা মুক্তি মুক্তি, মুক্তি চাই খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, এক দফা এক দাবি সরকার তুই কবে যাবি, হটাও হাসিনা বাঁচাও দেশ, টেকব্যাক বাংলাদেশ- এমন নানা স্লোগান দিতে থাকেন। বিএনপি’র এই কর্মসূচিকে ঘিরে আশপাশের এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বেড়েছে। প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পুলিশকে সতর্ক অবস্থান করতে দেখা যায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া পুরো এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। রাজনীতিতে আসার পর থেকেই তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে চলছেন। প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা তিনি। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে তিনি দেশের পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন। দীর্ঘ ৫ বছর তিনি কারাবন্দী। যে মামলায় তাকে সাজা দেয়া হয়েছে তার মিথ্যা বানোয়াট। একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগের যারা আটক ছিলেন তাদের মুক্তি দেয়া হয়েছে। অথচ দেশনেত্রীকে আটক রেখে দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তাই আমাদের লক্ষ্য একটাই- এই সরকারের পতন, এর মাধ্যমেই দেশে নতুন সূর্যদয়ের উদয় হবে।
ফখরুল বলেন, এরা অসাংবিধানিক ও অবৈধ সরকার। তারা ১৫ বছর ধরে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে। এরা এখন গণতন্ত্রের জন্য নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তিনি বলেন, আবরো মিথ্যা মামলা গায়েবি মামলায় সাজা দেয়া শুরু হয়েছে। সরকার দেশের মানুষের রুটিরুজির ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তবে সরকারকে সাবধান করে বলে চাই, এখনও সময় আছে নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে, বাড়িতে বাড়িতে হানা বন্ধ করতে হবে। আগামী ৬ ঘন্টার মধ্যে ছাত্রদলের যাদের তুলে নেয়া হয়েছে তাদের জনসম্মুখে হাজির করতে হবে। আমাদের শান্তিপুর্ণ আন্দোলনকে বিঘ্নিত করতে এলে কারোরই শেষরক্ষা হবেনা। জনগণের উত্তাল তরঙ্গ এলে কোন বিদেশী এগিয়ে আসবে না।
বিএনপির স্হায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অন্যায়ভাবে, বিচারিক আইনের শাসনকে উপেক্ষা করে, শুধুমাত্র ভোট চুরির জন্য খালেদা জিয়াকে আটকে রেখে মৃত্যুর দিকে ঢেলে দেয়া হয়েছে। এর সঙ্গে যারা জড়িত আছেন কেউ রক্ষা পাবেনা। তিনি বলেন, আওয়ামী বিচারলীগ তৈরি হয়েছে নতুন করে তারা দেশের মানুষের বিচার করতে পারবেনা। এরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির আওতায় তাদের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা এসে যাচ্ছে। তাই আমাদের একটাই লক্ষ্য হবে- একদফা আন্দোলন সফল করা।
নজরুল ইসলাম খান, এ কর্মসূচির শান্তিপূর্ণ। কিন্তু গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমরা আপোষ করিনা, খালেদা জিয়ার ব্যাপারেও আপষ হবেনা। তাকে চিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং দাবি জানাই তাকে যেনো অবিলম্বে সুচিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে দেয়া হোক। তিনি বলেন, স্বৈরাচারীরা সারাজীবন টিকে থাকেতে পারেনা। আমরা বিজয়ী হবোই।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনাকে পদে রেখে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা সম্ভব নয়। তারা ক্ষমতায় থাকলে খালেদা জিয়ার জানাজাও দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হবেনা। তাই আমরা তার সুচিকিৎসা নয়, নি:শর্ত মুক্তি চাই। তিনি বলেন, আমাদোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যারা বাধা দিতে আসবে তাদের হাত ভেঙে দিতে হবে। পুলিশ দেখলে ভয় পাওয়া চলবে না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে গয়েশ্বর বলেন, সব হিসাব এক কথায় নিতে হবে হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে। আপোষহীন নেত্রীর কর্মী আমরা, আপোষহীনভাবেই সকল অন্যায়ের প্রতিশোধ নিবো। হাসিনা যদি কোনো লড়ায়ের ঘোষণা দেয়, শক্ত হাতে তার প্রতিরোধ করতে হবে। কারণ, হাসিনার সরকারের পতন মানে গণতন্ত্রের মুক্তি।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আজকে আমরা এখানে এসেছি এক দলীয় বাকশালীয় সরকারকে বিদায় জানানোর জন্য। এই সরকার যদি ভেবে থাকে ষড়যন্ত্র করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখবে, সেটা সম্ভব হবেনা। আজ হোক, কাল হোক রাজপথের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারকে বিদায় জানাবোই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লগি বৈঠার রাজনীতিতে বিএনপি বিশ্বাস করেনা। তাই গণতান্ত্রিক ভাবেই সরকারকে বিদায় করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো।
মির্জা আব্বাস বলেন, যতক্ষণ খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে না পারবো আমাদের আন্দোলন চলবে। এই সরকার দীর্ঘ মেয়াদী প্লান করে ১৪ ও ১৮ সালে নির্বাচন করেছে। এখম আবার বলছে ৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চায়। তিনি বলেন, মোদি সরকার বলছে হাসিনা সরকার ক্ষমতায় না থাকলে এশিয়া মহাদেশের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে, তবে এসব বিদেশি প্রভুদের কথায় আর কোনো কাজ হবে না। জনগণ এবার এই সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেবে না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে এই পদযাত্রা কর্মসূচিটি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রাটি শুরু হয়ে শান্তিনগর, মালিবাগ ও মগবাজার মোড় পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আহমেদ আযম খান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আতাউর রহমান ঢালী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরফত আলী সপু, নাসির উদ্দিন অসীম, রকিবুল ইসলাম বকুল, ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, শিরিন সুলতানা, খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক, নিলোফার চৌধুরী মনি, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, নাজিমউদ্দিন আলম, রফিক সিকদার, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে কাদের গণি চৌধুরী, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক আবুল কালাম সরকার, অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. শেখ মনির উদ্দিন, অধ্যাপক আবদুল করিম, অধ্যাপক দেবাশীষ পাল, ড. মো. নূরুল আমিন, ডা. মো. আবদুস সালাম, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. মো. মেহেদী হাসান সহ অসংখ্য নেতাকর্মী।
নিউজ /এমএসএম