পাচার করে আনা অর্থ-সম্পদ জব্দে বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্স (এসপিএফ)।
গত মঙ্গলবার এই অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সাইপ্রাস, তুরস্ক, চীন, কম্বোডিয়া এবং ভানুয়াতুর নাগরিক। তাদের সবার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, জালিয়াতি ও গ্রেপ্তার এড়াতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই অভিযানকে দেশটির ইতিহাসে মানি লন্ডারিংবিরোধী সবচেয়ে বড় অভিযানগুলোর একটি বলা হচ্ছে।
অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের এই অভিযান ঘিরে আতঙ্কে রয়েছেন সেখানে বিনিয়োগকারী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের অনেকেই। তারা সেখান থেকে অর্থ সরানোরও পথ খুঁজছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশের বড় বড় কয়েকটি গ্রুপ অব কোম্পানিও রয়েছে।
সিঙ্গাপুর পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যেসব বিদেশির বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে, তারা নিজ দেশে অর্থ পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেই সঙ্গে তারা অনলাইন জুয়া খেলার সঙ্গেও জড়িত। সন্দেহজনক লেনদেন নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিবেদন (এসটিআর) হাতে পেয়ে বিশদ অনুসন্ধানের পরই পুলিশ তাদের শনাক্ত করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বেশির ভাগকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বিলাসবহুল বাংলো থেকে। একজন গ্রেপ্তার এড়াতে বারান্দা থেকে লাফ দিয়ে ড্রেনে লুকিয়েছিলেন।
সিঙ্গাপুরের পুলিশ জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার অভিযানের সময় এসব ব্যক্তিকে ট্যাংলিন, বুকিত তিমাহ, অরচার্ড রোড, হল্যান্ড, সেন্তোসা কোভ ও রিভার ভ্যালিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করা হয়। এসব এলাকায় বিভিন্ন বিলাসবহুল বাংলো বসবাস করতেন তারা। চড়তেন দামি গাড়িতে।
গ্রেপ্তারকৃতদের একজন সু হেইজিন (৪০)। সাইপ্রাসের নাগরিক তিনি। হল্যান্ড এলাকায় নিজের বিলাসবহুল বাংলো থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন তুরস্কের নাগরিক ভ্যাং শুইমিং (৪২)। ট্যাংলিন এলাকার একটি বিলাসবহুল বাংলো থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন চীনের ঝাং রুইজিন (৪৪), লিন বাওয়েয়িং (৪৩) ও ওয়াং বাওসেন (৩১)। সান্তোস কোভের পার্ল দ্বীপের একটি বাংলো থেকে গ্রেপ্তার হন ঝাং ও লিন। অন্যদিকে ট্যাংলিন এলাকার একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন ওয়াং।
কম্বোডিয়ার নাগরিক সু বাওলিনকে (৪১) নাসিম রোডের একটি বাংলো থেকে এবং একই দেশের চেন কুইনজিগুয়ানকে (৩৩) রিভার ভ্যালি এলাকার একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কম্বোডিয়ার নাগরিক সু ওয়েনকিয়াং (৩১) গ্রেপ্তার হয়েছেন বুকিত তিমাহ এলাকার একটি বাংলো থেকে।
লি-ভানুয়াতুর ৩৫ বছর বয়সী সু জিয়ানফেং গ্রেপ্তার হয়েছেন বুকিত তিমাহ এলাকার একটি বিলাসবহুল বাংলো থেকে। আর সাইপ্রাসের নাগরিক ওয়াং দেহাইকে (৩৪) গ্রেপ্তার করা হয়েছে অরচার্ড এলাকায় বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সাইপ্রাসের একজন (সু হেইজিন) নাগরিক রয়েছেন। তার বয়স ৪০ বছর। তিনি বিলাসবহুল একটি বাংলোয় বসবাস করতেন। অভিযানের সময় তিনি গ্রেপ্তার হওয়া এড়াতে বাংলোর দ্বিতীয় তলার বারান্দা থেকে লাফিয়ে পড়েন। আহত অবস্থায় পাশের একটি ড্রেনে লুকিয়ে ছিলেন তিনি। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। ওই ব্যক্তির কাছে চীন ও কম্বোডিয়া থেকে ইস্যু করা পাসপোর্ট ছিল।
গত বুধবার তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে। ৪০০ জনের বেশি সদস্যের বড় একটি দল এ অভিযানে অংশ নেন বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে। এতে সিঙ্গাপুর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, বাণিজ্যবিষয়ক বিভাগ (সিএডি), দাঙ্গা পুলিশ, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা যুক্ত ছিলেন।
অভিযানে এক নারীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। আর আটজন সন্দেহভাজন পলাতক। তাদের নাম পুলিশের তালিকায় রাখা হয়েছে। অভিযানে অর্থ, বিলাসবহুল গাড়ি, অলংকার, হাতব্যাগ, ঘড়ি, মদ, মুঠোফোন, কম্পিউটারসহ নানা জিনিস জব্দ করেছে পুলিশ।
নিউজ /এমএসএম