মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:২২ পূর্বাহ্ন

ওষুধ কারখানা স্থাপনের প্রকল্প পাস

সরকারি প্রকল্পে অধিগ্রহণের আগেই জমি কেনেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • খবর আপডেট সময় : শুক্রবার, ৭ জুলাই, ২০২৩
  • ১২৬ এই পর্যন্ত দেখেছেন

মানিকগঞ্জে সরকারি ওষুধ কারখানার জন্য যে সাড়ে ৩১ একর জমি প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানকার ১১ একর ১৪ শতক জমি কেনেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের মেয়ে সিনথিয়া মালেক। তিনি এ জমি ভরাট করে ভিটি শ্রেণিতে পরিবর্তন করেন। মাস সাতেক পর ওষুধ কারখানা স্থাপনের প্রকল্প পাস হয়।

তার ২০ দিন আগে কেনা মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ দেখিয়ে এসব জমি স্বামী আলতাফ আকমলকে দান করেন সিনথিয়া। এখন সরকার এ জমি অধিগ্রহণ করতে গেলে সর্বশেষ মূল্যের তিন গুণ বেশি টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মেয়ে সাড়ে ৭ কোটি টাকায় যে জমি কিনেছেন, সেটা সরকার অধিগ্রহণ করলে ৪০ কোটি টাকা পাবেন তিনি বা তাঁর স্বামী।

প্রস্তাবিত ওই স্থানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বিডি সান লিমিটেডের নামে কেনা হয় ৬ একর ৩৯ শতক জমি। মন্ত্রীর ছেলে রাহাত মালেকের মালিকানাধীন রাহাত রিয়েল এস্টেটের নামে কেনা হয় ৩ একর ১২ শতক জমি। অর্থাৎ সাড়ে ৩১ একর জমির মধ্যে ২০ একর ৬৫ শতাংশ জমি মন্ত্রী, তাঁর ছেলে ও মেয়ে কিনেছেন।

এরপর শ্রেণি পরিবর্তন করে এক লাফে জমির মূল্য (মৌজা দর) পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। তারপর তিনজনই এসব জমি বর্ধিত দরে (মৌজা রেটে) ঘনিষ্ঠজনদের নামে দান বা বিক্রি করেছেন। এর বাইরে মন্ত্রীর ফুফাতো ভাই শামীম মিয়া কিনেছেন আরও ৫ একর ৫৪ শতক জমি।

প্রকল্প পাসের পর ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুর পর্যায়ে জেলা ভূমি ব্যবস্থাপনা কমিটির পর্যালোচনায় প্রস্তাবিত জমি নিয়ে এমন কারসাজির বিষয়টি উঠে আসে। এমন পরিস্থিতিতে এই জমিতে প্রকল্প করতে গেলে ভূমি অধিগ্রহণে সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হবে। এর পরিবর্তে পাশের কোনো মৌজায় প্রকল্প করলে সরকারের এই টাকা সাশ্রয় হবে। বিষয়টি জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক।

এই চিঠি দেওয়ার পরপর বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনে নামেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে দেন মন্ত্রীর ফুফাতো ভাই মো. ইসরাফিল হোসেন, যিনি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি শামীম মিয়ার বড় ভাই।

প্রকল্পটি হচ্ছে সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) মানিকগঞ্জে কারখানা স্থাপন। ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটি পাস হয়। এতে মোট ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয় ১১৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সরকারি অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৭ সালের মার্চ পর্যন্ত। প্রকল্পের জন্য মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের মেঘশিমুল এলাকায় সাড়ে ৩১ একর জমি প্রস্তাব করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রকল্প কোথায় হবে, সেটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রকল্প পাসের সময় প্রস্তাব করে থাকে। তাই প্রকল্প পাসের আগেই ওই এলাকার জমি কিনে নিয়ে শ্রেণি পরিবর্তন এবং তারপর সে জমি অন্যের নামে হস্তান্তর ও মূল্যবৃদ্ধির এই কার্যক্রমকে ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি কোনো প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হলে জমির মালিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে মৌজা দরের তিন গুণ দাম পান। অভিযোগ উঠেছে, অধিগ্রহণ বাবদ সরকারি কোষাগার থেকে ১০০ কোটি টাকা বের করে নিতে কারসাজির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তুলে ধরে গত ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক বলেন, প্রস্তাবিত স্থানে জমি অধিগ্রহণ করলে সরকারের ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হবে। ভূমি ব্যবস্থাপনা কমিটি মেঘশিমুল মৌজায় প্রস্তাবিত জমির সম্ভাব্যতা যাচাই করার পরই বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সরকারকে অবহিত করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি যা বলার চিঠিতে উল্লেখ করেছি। এর বাইরে আমার কোনো বক্তব্য নেই।

নিউজ /এমএসএম

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102