শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:১০ অপরাহ্ন

পরস্পরের প্রতি দয়া করাও ইবাদত

ইসলাম ডেস্ক
  • খবর আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩
  • ১০৭ এই পর্যন্ত দেখেছেন

যে মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তাআলাও তার প্রতি দয়া করেন না। মানুষের প্রতি দয়া করায় রয়েছে মহান আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়া অপার সম্ভাবনা। এটি একটি মহান ইবাদত। একে অপরের প্রতি দয়া করা প্রসঙ্গে হাদিসে অনেক নসিহত রয়েছে। যার কিছু তুলে ধরা হলো-

১. হজরত জারির ইবনু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেনরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন

مَنْ لاَ يَرْحَمِ النَّاسَ لاَ يَرْحَمْهُ الله

আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির প্রতি অনুগ্রহ/দয়া করেন না; যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না।’ (বুখারি ৬০১৩, ৭৩৭৬; মুসলিম ৬১৭০-৬১৭২)

মানুষের জন্য সবচেযে বড় অনুগ্রহ হলো মহান আল্লাহ তাআলার দয়া পাওয়া। যে ব্যক্তি আল্লাহর দয়া পাবে, তার দুনিয়া ও পরকাল সফলতায় পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। অন্য হাদিসে এসেছে-

২. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন একদিন এক বেদুঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে এসে দেখলো সাহাবায়ে কেরাম নিজেদের শিশু সন্তানদের চুমু দিয়ে আদর করছেন। তখন সে বললো-

أتُقَبِّلُونَ صِبْيَانَكُمْ ؟ فَقَالَ نَعَمْ قَالَوا : لَكِنَّا وَاللهِ مَا نُقَبِّلُ! فَقَالَ رَسُوْلُ الله أَوَ أَمْلِك إنْ كَانَ اللهُ نَزَعَ مِنْ قُلُوبِكُم الرَّحْمَةَ

‘তোমরা কি শিশুদের চুম্বন করো? নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হ্যাঁ’। তারা বললো- আমরা তো শিশুদের চুম্বন করি না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলা যদি তোমার অন্তর থেকে স্নেহ-মমতা/দয়া বের করে দেন তবে আমি কি তা বাঁধা দিতে সক্ষম হব?’ (বুখারি ৫৯৯৮, মুসলিম ৬১৬৯)

৩. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

قَبَّلَ النَّبيُّ الحَسَنَ بْنَ عَليٍّ رَضِيَ الله عَنهُمَا وَعِنْدَهُ الأَقْرَعُ بْنُ حَابِس فَقَالَ الأقْرَعُ : إن لِي عَشرَةً مِنَ الوَلَدِ مَا قَبَّلْتُ مِنْهُمْ أحَداً فَنَظَرَ إِلَيْهِ رَسُول الله فَقَالَ مَنْ لا يَرْحَمْ لاَ يُرْحَمْ

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসান ইবনে আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে চুমু দিলেন। ঐ সময় তাঁর নিকট আক্বরা’ বিন হাবেস বসেছিলেন। আক্বরা’ বললেন, ‘আমার দশটি ছেলে আছে, আমি তাদের কাউকেই কোনদিন চুমু দিইনি।’ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, যে দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হয় না।’ (বুখারি ৫৯৯৭, মুসলিম ৬১৭০)

মানুষের প্রতি দয়ার ফজিলত

৪. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, একদিন এক নারী তার দুটি মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আমার কাছে আসে। ওই নারী আমার কাছে কিছু চায়। তখন আমার কাছে একটি খেজুর ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আমি তাকে তা (ওই খেজুরটিই) দিয়ে দেই। সে তা দুই ভাগ করে তার দুই মেয়েকে দেয় আর নিজে খাওয়া থেকে বিরত থাকে। তারপর সে উঠে চলে যায়। এমন সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়িতে প্রবেশ করেন। আমি তাঁকে ঘটনাটি বলি। তখন তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি মেয়েদের ব্যাপারে সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করে; ওই মেয়েরা তার জন্য জাহান্নামের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

হাদিসটির মূল আলোচ্য বিষয়ও মানুষের প্রতি সহমর্মিতা বা দয়ার কথা ফুটে ওঠেছে। তাদের বিপদে পাশে দাঁড়ানো। আর এতে মহান আল্লাহ ওই বান্দার ওপর খুশি হয়ে যান। ফলে ওই ব্যক্তির সার্বিক বিষয়ের উপর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ বা দয়া নাজিল হতে থাকে।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব মানুষকে পরস্পরের প্রতি সহানভূতিশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি নিজেও সবার প্রতি দয়াশীল ও কোমল ছিলেন। কোমতলতায় বান্দার প্রতি অনুগ্রহ নাজিল হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-

৫. হজরত আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেনরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘একজন মুমিন অপর মুমিনের জন্য এক ঘরের মতোযার একাংশ অপরাংশকে সুদৃঢ় করে রাখে। এরপর তিনি এক হাতের আঙুল অন্য হাতের আঙুলের মধ্যে প্রবেশ করান।‘ (বুখারিমুসলিমমিশকাত)

৬. হজরত নুমান ইবনু বাশির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সব মুমিন এক ব্যক্তির (দেহের) মত, যদি তার চোখ অসুস্থ হয় তখন তার পুরো দেহ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর যদি তার মাথায় ব্যথা হয় তখন তার পুরো শরীরই ব্যথিত হয়।’ (মুসলিম, মিশকাত)

৭. তিনি আরও বর্ণনা করেছেনরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তুমি ঈমানদারদের তাদের পারস্পরিক সহানুভূতিবন্ধুত্ব ও দয়ার ক্ষেত্রে একটি দেহের মতো দেখবে। যখন দেহের কোনো অঙ্গ অসুস্থ হয় তখন পুরো শরীর তার জন্য বিনিদ্র ও জ্বরে আক্রান্ত হয়।’ (বুখারিমুসলিমমিশকাত)

এভাবে হাদিসের অনেক বর্ণনায় পরস্পরের প্রতি দয়া, অনুগ্রহ এবং উত্তম ব্যবহারের নসিহত এসেছে। পরস্পরের প্রতি দয়া দেখানোর মাধ্যমেই আল্লাহর দয়া পাওয়ার পথ সুগম হয়।

সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত, সব সময় সবকাজে পরস্পরের প্রতি দয়া দেখানো। কারো প্রতি কঠোরতা ও রুঢ় আচরণ না করা। হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুসরণ ও অনুকরণ করা। পরস্পরের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ দেখানো। যার ফলে দয়াকারী মানুষ মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ পেয়ে ধন্য হবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরস্পরের প্রতি দয়া দেখানোর তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

নিউজ /এমএসএম

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102