কামরান আরিফ বিহীন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নেই উত্তাপ । অনেকটা একপেশে উত্তাপ ছড়াচ্ছে আজকের সিসিক নির্বাচন । মেয়র পদে প্রার্থীর সংখ্যা ৫ হলেও ইতিমধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান নির্বাচন বর্জন করায় প্রার্থী এখন ৪ জন । মূল প্রতিযোগীতায় আছেন আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয়পার্টি মনোনিত লাঙ্গলের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল । যদিও এই প্রতিযোগীতাকে সিলেট সিটির ভোটাররা অসম প্রতিযোগীতা বলে মন করছেন ।
জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল আলম গোলাপফুল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকে আব্দুল হানিফ কুটু নির্বাচনে থাকলেও মূল প্রতিযোগীতায় নেই । এই প্রথমবার নির্বাচনে নেই বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেট সিটির সর্বশেষ চার নির্বাচনের সবগুলোতেই মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছিলেন কামরান । আর আরিফুল হক চৌধুরী একটিতে কাউন্সিলর পদে এবং দুটিতে মেয়র পদে নির্বাচন করেছিলেন । এবারের নির্বাচনে এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর শূন্যতা অনুভব করছেন ভোটাররা । কারণ তারা দুজন দলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠেছিলেন।
২০০২ সালে সিলেট পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান । ২০০৩ সালের মার্চ মাসে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মুহাম্মদ আবদুল হককে পরাজিত করে কামরান সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র হন । ওই নির্বাচনে ২০ হাজার বেশি ভোটে কামরান বিজয়ী হয়েছিলেন । ২০০৮ সালে কারাবন্দি অবস্থায় মেয়র নির্বাচন করে দ্বিতীয় বার জয়লাভ করেন কামরান । এ নির্বাচনে তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৮৩ হাজার বেশি ভোট পেয়েছিলেন । এরপর কামরান ২০১৩ ও ২০১৮ সালের মেয়র নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন ।
অন্যদিকে সিলেটের বর্তমান মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী ২০০৩ সালে কাউন্সিলর হিসাবে নির্বাচিত হন । পাশাপাশি তিনি সিটি করপোরেশনের নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৩ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন । তবে এবার নিজের দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তিনি প্রার্থী হননি ।
সিটির নতুন অন্তর্ভুক্ত ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার আলম হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘কামরান আরিফের মতো মেয়র সিলেটে আসবেন কি না জানি না, বদর উদ্দিন আহম কামরানের সাথে সাধারণ মানুষ সব সময় কথা বলতে পারত । তাই তাকে জনতার কামরান বলা হয়, তিনি উন্নয়নও করেছেন, আর আরিফুল হকও অনেক উন্নয়ন করেছেন, নগরের সৌন্দর্যবৃদ্ধিতে তিনি আন্তরিক ছিলেন ।”
নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলমগীর আহমদ এবার নতুন ভোটার, তার মতে এবার সিলেটে ভোটের জৌলুস নেই,পুরোনো কোনো প্রার্থী না থাকায় কাকে ভোট দেবেন এখনও সিন্ধান্ত নিতে পারেন নি । সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শ্রমজীবি বিপুল দাস, তিনিও এবার নতুন ভোটার । জীবনের প্রথম ভোট কাকে দেবেন এমন প্রশ্ন করতেই অনেকটাই নিরুত্তর । অবশেষে বললেন “যেহেতু ভোটার ভোট তো দিতেই হবে, বিবেক যাকে বলবে তাকেই ভোট দেবো ।” নগরীর ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কুলসুমা বেগম এখনও জানেন না কাকে ভোট দেবেন ।
নগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তালহা কবির বলেন, ‘‘কামরান-আরিফ ছাড়া নির্বাচন জমছে না এবারের নির্বাচন একেবারে সাদামাটা,কামরান ভাই মারা যাওয়ায় তাইন তো আর নির্বাচন করতে পারতা নায়, তবে আরিফুল হক নির্বাচন করলে এবার ভোট সুন্দর হত । এখনতো একতরফা ভোট অর ।’’
তবে সরগরম কাউন্সিলর প্রার্থীরা । তাদের অনুসারীরা অনেকটা জমিয়ে রেখেছেন ভোটের মাঠ । এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বাচনী কার্যক্রম চলছে । সিলেটে একটি সুষ্ট ও সুন্দর নির্বাচন হবে বলে আশা করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা । প্রার্থীরাও মনে করছেন ভোটারদের যথেষ্ট উপস্থিতি থাকবে এবং সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকবে ।
নিউজ /এমএসএম