সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
শ্রীমঙ্গলে ট্রেনের ধাক্কায় চিকিৎসকের মৃত্যু সাংবাদিক মুরাদ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক লাঞ্ছিত আজমিরীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক বিসিক এর প্লট বরাদ্দ নিয়ে শ্রীমঙ্গলে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত সম্প্রীতির বন্ধনে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই- সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পঞ্চগড়ে বিএনপির ৩১ দফার প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনা সহ সকল নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত ঠাকুরগাঁওয়ে ইএসডিও’র পিএফ ও গ্র্যাচুইটি সুবিধাদির চেক বিতরণ অনুষ্ঠিত

সিসিক নির্বাচন

আনোয়ারুজ্জামানের বড় ব্যবধানে জয়ের সম্ভাবনা

মো. শাহজাহান মিয়া
  • খবর আপডেট সময় : সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩
  • ১৪০ এই পর্যন্ত দেখেছেন

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের জন্য আর মাত্র দুই দিনের অপেক্ষা। এর মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি গোছানো প্রায় শেষ। এখন মূলত চলছে ভোটের হিসাব-নিকেশ। বিভিন্ন রাস্তায়, হোটেলে, রেস্টুরেন্টে, চায়ের আড্ডায়, আলাপে চলছে ভোট রাজনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ। যদিও এই ভোটের ফলাফল নিয়ে অনেকটা নিশ্চিত নগরবাসী। সবার ধারণা নৌকার মাঝি আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীই হতে যাচ্ছেন পরবর্তী নগরপিতা। তারই গলায় পড়বে বিজয়ের মালা। তবুও শ্রীহট্টবাসীর কপালে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ। কারণ সিলেটি ভোটাররা শেষমুহূর্তের ‘গইড়’ (পল্টি খাওয়া) কোনদিকে দেবে, এমন আলোচনাও আছে।

অতীতের অনেক স্থানীয় এবং জাতীয় নির্বাচনে ‘খেইল’ (খেলা) দেখিয়েছে সিলেটবাসী। আর জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনে তাদের ভিন্ন রূপের কথা দেশে সুবিদিত। বিশেষ করে স্থানীয় নির্বাচনে সিলেট শহরের ভোটাররা ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের চেয়েও সিলেটের স্থানীয় প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেয়। ‘সিলটি ভাইসাব’ হিসেবে একটি মিথ গড়ে উঠেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। যে কারণে অনেক বড় বড় ডাকসাইটে নেতাকে টপকে ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন ছক্কা ছয়ফুর। আর সিলেটের সব রাজনৈতিক হিসাব-নিকেশ ভেঙে কারাগার থেকে সিলেটের ‘কামরান’ বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে ‘মেয়র কামরান’ হয়েছিলেন। বিএনপির আমলে যেভাবে কামরান মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন, একইভাবে আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপির আরিফুল মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন ওই ‘সিলটি ভাইসাব’ হিসেবে। এ বছরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কোনো শক্তিশালী প্রতিদ্ব›দ্বী নেই। তবে নীরব ভোটাররা- যাদের ‘মুুক্ত ভোট’ বলা হচ্ছে তারা কি ভোট দিতে যাবেন, নাকি যাবেন না- এমন আলোচনা কম নয় সিলেটে।

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লাঙ্গলের নজরুল ইসলাম বাবুলকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে না নগরবাসী। তাই বিশাল ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখছে আওয়ামী লীগ। কমপক্ষে এক লাখ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে সারাদেশে সরকারের উন্নয়ন-অর্জনের পক্ষে গণজোয়ার তুলতে শেষমুহূর্তে দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছে দলটি।

এদিকে পুরো নগর ছেয়ে গেছে পোস্টারে। কানে আসছে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে মাইকে প্রচার। প্রার্থীরা যাচ্ছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। শেষ সময়ে ভোটের হিসাব-নিকেশ নিয়ে আলোচনা। তবে নির্বাচনের এমন আমেজ তৈরি হলেও মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা যেন কম। জানতে চাইলে প্রবীণ রাজনীতিবিদ জাসদ সিলেটের সভাপতি লোকমান আহমদ বলেন, চিরাচরিতভাবে দেশে নির্বাচন যেভাবে জমে ওঠে, সেভাবে জমে উঠেছে- এটি বলতে পারি না। কিন্তু নির্বাচনী আবহ খুব জোরদার। তবে নির্বাচনে মানুষের আগ্রহ নেই বলা যাবে না। মানুষ তার রায় দিতে নির্বাচনে আগ্রহী ও উদগ্রিব। ইভিএমে প্রথম ভোট দেবে। কিছুটা শঙ্কা থাকলেও এতে মানুষ উৎসুক। ভোটে তীব্র প্রতিযোগিতা নেই- এটি সত্যি; তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো শক্তিশালী প্রার্থী নেই। ফলে নির্বাচনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না।

জাতীয় পার্টি, হাতপাখাসহ বরাবর নির্বাচনে যারা অংশ নেয়, তারা সবাই রয়েছে। আর বিএনপির প্রার্থী, বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি তাদের রাজনৈতিক কারণে। তিনি থাকলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরো তীব্র হতো নিঃসন্দেহে।

সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন একশভাগ নিরপেক্ষ হয়েছে, ভোটার প্রভাবিত হয়নি- এটি বলতে পারব না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এটি প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। এবারের নির্বাচনে মানুষের আগ্রহ নেই। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় বিশেষ করে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় নির্বাচনটা উত্তাপ ছড়াচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। যা ভোট হচ্ছে, তা কাউন্সিলর পদে। তিনি বলেন, যখন থেকে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন হচ্ছে; তখন থেকে আমাদের যে ঐতিহ্য ছিল- ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেই স্বাতন্ত্র্য’ বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন হওয়ায় একদিকে বিভক্তি প্রকট হয়েছে, কে দাঁড়িয়েছে সেটি বিষয় নয়, বিষয় প্রতীক- এটি সমস্যা। অন্যদিকে স্থানীয় সরকারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ক্ষুণ্ন করেছে।

এটিও নির্বাচনে নগরবাসীর আগ্রহ হারানোর একটি কারণ। আর ইসির (নির্বাচন কমিশন) উচিত ছিল, ইভিএমে ভোট নেয়ার আগে সিলেটের জনগণের কোনো মতামত নেয়া, তাও হয়নি। কারণ যে কোনো নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হলে ভোটারদের মতামত নিতে হয়। কিন্তু এখানে ওপর থেকে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আমার মনে হয়, এতেও ভোটাররা আগ্রহ হারিয়েছেন। আরেকটি বিষয়, গণমাধ্যমে খবর এসেছে কোন প্রার্থী কত টাকা খরচ করছেন? কিন্তু তাদের হলফনামায় দেখা গেছে, আয় দেখিয়েছেন কম। এছাড়া নির্বাচনের হলফনামায় টাকা নিয়ে সত্য-মিথ্যার লুকোচুরি খেলা, এটি মানুষ প্রথমেই বুঝতে পেরেছে। ফলে নির্বাচনের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেছে।

  • সব প্রার্থীর নজর বিএনপির ‘ভোটব্যাংকের’ দিকে

সব প্রার্থীর নজর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না আসা বিএনপির ‘ভোটব্যাংকের’ দিকে। বিএনপির ভোটব্যাংক শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যাবে, এ নিয়ে গতকাল দিনভর সিলেটে নানারকম আলোচনা ছিল চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গন পর্যন্ত। শহরের শিবগঞ্জ সোনারপাড়া সাফরান রেস্টুরেন্টে দুপুর আড়াইটায় দেখা গেছে, খাবার খাচ্ছিলেন প্রায় পঞ্চাশজনের মতো। প্রায় সব টেবিলেই ভোটের আলাপ। কার পাল্লা ভারী, তা নিয়ে একেকজন একেক মন্তব্য করছেন। আব্দুল বাসেদ বলেন, ‘যাই বলেন, শেষমেশ নৌকাই পাস করবে।’ মোরগ-পোলাও খেতে খেতে নাজমুল আহমেদ পাল্টা মন্তব্য করলেন, ‘যেতা বুঝি, ইতা অইলো, বিএনপি যে দিকে যাইব, ওউ পাল্লা ভারী অইব। এর লগেউ কনটেস্ট অইব নৌকার।’

স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের অতীতে তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। স্থানীয়দের মতে, ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনের সময় কে জিতবে, কে হারবে- এমন মন্তব্য প্রকাশ্যে করতে দেখা যায়নি। এবার ব্যতিক্রম। ভীতির সঞ্চার হতে পারে, তেমন পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। যারা ভীতি তৈরি করতে পারে, তাদের এবার সেভাবে মাঠে দেখাও যাচ্ছে না। ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে খুব একটা শঙ্কার কথাও শোনা যাচ্ছে না।

২০১৮ সালে সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন তৎকালীন জনপ্রিয় মেয়র বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান। জনপ্রিয়তার দিক থেকে তিনি এগিয়ে ছিলেন বলেই মনে করা হতো। জনতার সেই কামরানকে ৬ হাজার ১৯৬ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দেন তখনকার বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। অবশ্য ওই সময় এমন অভিযোগও উঠেছিল, দলে কামরানের দাপট কমাতে আওয়ামী লীগেরই একটা অংশ ভেতরে ভেতরে বিরোধী শিবিরকে সহায়তা করেছে। বিএনপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৫৮৮ ভোট। আর নৌকার প্রার্থী পেয়েছিলেন ৮৬ হাজার ৩৯২ ভোট। ভোটের হিসেবে শতকরা ৬৪ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট বিএনপি ও ৪৭ দশমিক ৩২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। ভোটার উপস্থিতি ছিল ২,০১,৫৭৭। বর্তমান ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬১৫। এ কারণেই ভোটের হিসাব-নিকেশটা আলোচনায় বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, আমরা জনগণের পাশে ছিলাম, আছি, থাকব। আর জনগণও সারাদেশের মতো উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সিসিক নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেবে। আমরা আশা করছি, সুষ্ঠু, সুন্দর, স্বচ্ছ ভোট হবে। সেই ভোটে নৌকা জিতবে।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, সিলেটে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন প্রার্থী ও তার দলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী শক্তিশালী না হওয়ায় বিপুল ভোটের ব্যবধানে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে। ভোটের দিন কেমন ভোটারের উপস্থিতি আশা করেন- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২১ তারিখ আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে অন্যান্য সিটির তুলনায় সিলেটে ভোটার উপস্থিতি বেশি হবে।

এদিকে সিলেটবাসী শেখ হাসিনাকে নৌকার জয় উপহার দেবে বলে প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে দিনরাত প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। জানতে চাইলে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, সিলেটবাসী শান্ত প্রকৃতির মানুষ। তারা উন্নয়ন চান। আশা করছি বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকার জয় হবে। আর নৌকার জয় মানেই সিলেটবাসীর উন্নয়নের দরজা আরো একধাপ এগিয়ে যাওয়া। বিএনপি ভোটে থাকলেও আওয়ামী লীগের জোয়ার তারা রুখতে পারত না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নিউজ /এমএসএম

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102