বাংলাদেশের অর্জনগুলো নস্যাৎ করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছে। যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে। তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে গভীর ষড়যন্ত্র করবে- এটাই স্বাভাবিক। আমরা যে অর্জনগুলো করেছি সেগুলো যেন নস্যাৎ হয় সেটাই তারা চায়। তাদের এই ষড়যন্ত্র চলতেই থাকবে। কিন্তু ভবিষ্যতে জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে।
বুধবার (১৭ মে) সকালে ৪৩তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে গণভবনে শুভেচ্ছা জানাতে আসা দলের নেতারা শুভেচ্ছা জানাতে এলে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় নেতাসহ দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতারা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
এসময় তিনি আরো বলেন, সৎ উদ্দেশ্যে কাজ করলে যে কোনো জায়গাতেই সফলতা নিয়ে আসা সম্ভব হয়, সেটা মেনেই আমি কাজ করি। দেশের মানুষের উন্নত জীবন নিশ্চিত করাই আমার বড় লক্ষ্য।
জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগই মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে, বাকিরা লুটেরার দল। তারা এদেশের মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে না। সেটা মাথায় রাখতে হবে। ঐ সন্ত্রাসের দল, খুনীর দল, যুদ্ধাপরাধীদের দল- এরা যেন আর বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে। এই অনুরোধটাই আমি সবার প্রতি রাখছি।
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যারা ভোট চোর ছিল, রীতিমতো ভোট ডাকতি করত তারাই এখন গণতন্ত্র চায়, ভোটের অধিকারের কথা বলে। যাদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে, আজকে তাদের কাছে শুনতে হয় এসব কথা। যাইহোক এগুলো মাঠের কথা মাঠেই থাকবে, আমরা জনগণের সঙ্গে থাকবো, জনগণের পাশে থাকবো।
জনগণের আস্থাই আওয়ামী লীগের একমাত্র শক্তি মন্তব্য করে দলটির সভাপতি বলেন, জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে তাদের ভোটের মাধ্যমেই আমরা সরকারে এসেছি। তাদের আস্থা-বিশ্বাসটাই আমাদের একমাত্র শক্তি। আর কোন শক্তি নাই। বাংলাদেশের জনগণই আওয়ামী লীগের একমাত্র বন্ধু। আওয়ামী লীগ দেশের নির্বাচনী পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা এনেছে। গণতন্ত্র আর ভোটের অধিকার নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ভোটের অধিকার কবে ছিল। ৭৫ সালের পর থেকে যেভাবে ভোট চুরি, ভোট কারচুপি, ভোট নিয়ে খেলা, মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা হয়েছে। আওয়ামী লীগেরই নানা পদক্ষেপের ফলে বিভিন্ন সংস্কার করে করে নির্বাচন পদ্ধতিটাকে গণমুখী করেছে, জনগণের ভোট সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করেছে। আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো- এই স্লোগান দিয়ে, মানুষকে যে ভোট সম্পর্কে সচেতন করা এটা তো আওয়ামী লীগই করেছে। এটা তো আর কারো না। তারপর নির্বাচন কমিশন করার জন্য আইন করে দেয়া হয়েছে। আমরাই সেটা করেছি। যেখানে ভুয়া ভোট দিয়ে ভোটার তালিকা হতো সেখানে ছবিসহ ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড, নির্বাচনী পদ্ধতিকে যতটুকু সংস্কার করে নিয়ে আসা বা মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন এগুলোতো আওয়ামী লীগেরই করে দেয়া। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স সবই করে দিয়েছি আমরা। তারপরও অনেকেই আমাদের ছবক দিতে আসে, গণতন্ত্রের, নির্বাচনের। তাদের বিষয়ে আসলে কিছুই বলার নেই।
দলকে সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী করার নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়নের গতি যাতে ত্বরান্বিত হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন, জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাবে এটাই আমাদের একমাত্র প্রতিজ্ঞা। কাজেই জাতির পিতার যে স্বপ্ন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতার সোনার বাংলা ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যের কথা পুনরায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে শুধু উন্নয়নশীল দেশ উত্তরণ না স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে সেটাও আমরা কার্যকর করে যাচ্ছি। সততা থাকলে পরে, আর উদ্দেশ্যটা যদি সৎ হয়, তাহলে যে কোনো ক্ষেত্রে সাফল্য আনা যায়। এই কথাটা সব সময় মনে রাখি। লক্ষ্য একটাই দেশের মানুষের জীবনটা উন্নত করে দেয়া। তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে দেয়া। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়েছেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। সেই হাসি ফোটানো একমাত্র কর্তব্য। সেটা আমরা করে যাচ্ছি।
টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি এটাকে ধরে রেখে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে চলতে হবে। ধন সম্পদ কারো চিরদিন থাকে না। আর মরলেও জায়গা হবে মাটির নিচে। কেউ কিছু সঙ্গে নিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু বেশি করলে বদনামটা নিয়ে যেতে হয়।
মানুষের কল্যাণে কাজ করার তৃপ্তির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যখন একজন ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষকে ঘর দেই তাদের মুখের হাসি আর চোখের পানি যখন একাকার হয়ে যায়, আমি মনে করি এর চেয়ে বড় পাওয়ার স্বার্থকতা আর কিছু নাই।
১৯৮১ সালের এইদিনে দেশে ফিরে আসার দিনের কথা স্মৃতিচারণ করে আবেগাপ্লুত বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, যেদিন ফিরে এসেছিলাম পেয়েছিলাম এদেশের জনগণকে আর আমার আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে। সেদিন থেকে আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের জনগণ তারাই তো আমার পরিবার।
নিউজ/এম.এস.এম