শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:০১ অপরাহ্ন

গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিশ্বে সমাদৃত

মো.শাহজাহান মিয়া
  • খবর আপডেট সময় : সোমবার, ১৫ মে, ২০২৩
  • ৮৯ এই পর্যন্ত দেখেছেন

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিশ্বে সমাদৃত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বব্যাংক প্রধানসহ সকলেই তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ পরিণত করতে তাঁর সরকারের প্রতি তাদের অব্যাহত সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হবে। যদিও এটা আগেই বলে দিয়েছি। কিন্তু এটাই হবে, বাংলাদেশকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ব।

সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সদ্য সমাপ্ত জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

  • দেশে রিজার্ভ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই
  • আ’লীগের নির্বাচনী ইশতেহার হবে স্মার্ট বাংলাদেশ
  • বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক আরও উন্নত হয়েছে
  • নির্বাচন নিয়ে সরকারের কোনো ভয়ে নেই
  • জ্বালাও-পোড়াও করলে কোনো ছাড় নয়
  • মোখা মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল
  • বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ
  • বেতন বৃদ্ধি নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
  • নিষেধাজ্ঞা দেওয়া নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সরকার কোনো ‘ভয়ে নেই’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন আসছে বলে ভয় পাব! কেন ভয় পাব! আমি জনগণের জন্য কাজ করেছি, জনগণ যদি ভোট দেয় আছি, না দিলে নাই। তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট বাংলাদেশের উন্নয়ন, মানুষের জীবনমানের অগ্রগতি। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ওয়েস্ট-ইস্ট অব ডেমোক্রেসি আমরা ফলো করি।

দেখুন, ব্রিটেনে কীভাবে ইলেকশন হয়, তারা কীভাবে করে, আমরা সেভাবেই করব। এরমধ্যে আমরা এটুকু উদারতা দেখাতে পারি, পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য যারা আছেন তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা প্রকাশ করেন যে নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারে আসতে চান, আমরা নিতে রাজি আছি। এটুকু উদারতা আমাদের আছে, আগেও আমরা নিয়েছি। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আমি খালেদা জিয়াকেও আহ্বান (নির্বাচনকালীন সরকারে আসার) করেছিলাম। তারা তো আসেনি। আর এখন তো তারা নাইও পার্লামেন্টে। কাজেই ওটা নিয়ে চিন্তারও কিছু না।

জ্বালাও-পোড়াও করলে কোনো ছাড় নয় :

বিএনপির আন্দোলন বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা মাইক লাগিয়ে আন্দোলন করেই যাচ্ছে। সরকার হটাবে। আমরা তো তাদের কিছু বলছি না। আমরা যখন অপজিশনে ছিলাম আমাদের কি নামতে দিয়েছে? গ্রেনেড হামলা করে হত্যা করার চেষ্টা করেছে। আমাদের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারছে। নির্বাচন ঠেকাতে ৫০০ স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে। সাড়ে তিন হাজার লোককে আগুনে পোড়ানো হয়েছে। তিন হাজার ৮০০ গাড়ি, ২৭টি রেল, ৯টি লঞ্চ, ৭০টি সরকারি অফিস পুড়িয়েছে। তারা তো জ্বালাও-পোড়াও করে গেছে। আমি বলে দিয়েছি, আন্দোলন করুক, মানুষ ছাড়ুক কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু জ্বালাও-পোড়াও যদি করতে যায়, কোনো মানুষকে যদি আবার এরকম করে পোড়ায়, তাকে ছাড়ব না। মানুষের ক্ষতি আর করতে দেব না, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাদের ২০ দলীয় ঐক্যজোট। সিট পেয়েছে মাত্র ২০টি। তারা আবার বড় বড় কথা বলে। আর দালালি…। কার পয়সায় আন্দোলন করছে, কোথা থেকে টাকা পাচ্ছে? বাংলাদেশের মানুষ কি এত অন্ধ হয়ে গেছে, চোখে দেখে না। হাজার হাজার কোটি টাকা তো লুট করে নিয়েই গেছে, আর কাদের মদদে করছে সেটা একটু খোঁজ নেন। এত লোক নিয়ে আসে আর প্রতিদিন মাইক লাগিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে, এগুলো তো বিনা পয়সায় হচ্ছে না।

আ’লীগের ইশতেহার হবে স্মার্ট বাংলাদেশ :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ইকনোমি স্মার্ট হবে, জনগণ যখন ডিজিটালের সুবিধা পাবেন। তখন যেটা হবে সেটাই স্মার্ট বাংলাদেশ। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আন্দোলনকারীদের দাবির ঠিক নেই, তাদের সঙ্গে সংলাপ নয়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে কোনো দারিদ্র্য থাকবে না। পুরো বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে। দেশের কাজ যত ভালোই হোক কোনো কিছু তারা দেখতে পায় না। এটা তাদের হীনমন্যতা। হয় তাদের জ্ঞানের অভাব, অথবা তাদের দুরভিসন্ধি। রাজনীতি যখন করি, এগুলো থাকবেই। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে যখন বাংলাদেশের সরকার গঠন করলাম। তখনকার অবস্থা আর বর্তমান অবস্থা দেখলেই তো বাংলাদেশের জনগণ বুঝতে পারে দেশ কতটা এগিয়েছে। অতি দরিদ্রের হার ২৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ব্যবস্থা করেছি। ডিজিটালাইজ করার যত কিছু দরকার, করে দিচ্ছি। জেলায় জেলায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। মহামারির সময় পোশাক শ্রমিকদের টাকা দিয়েছি, কোনো মালিকের হাতে টাকা দেইনি। শ্রমিকের এনআইডি ও মোবাইল অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। আমাদের অর্থনীতি পুরো ডিজিটাল হবে। এখন অনলাইনে চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা হচ্ছে। আমাদের যে আট হাজার পোস্ট অফিস, প্রতিটিকে ডিজিটাল করে দেওয়া হয়েছে। ইকনোমি স্মার্ট হবে, জনগণ যখন ডিজিটালের সুবিধা পাবেন। তখন যেটা হবে সেটাই স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের আগামী নির্বাচনের ইশতেহার হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। এখনই বলে দিলাম।

মোখা মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল :

শেখ হাসিনা বলেছেন, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। আমি নিজে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছি, বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা উপকূলীয় ১৩টি জেলায় ৭ হাজার ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছিলাম। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।

আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ :

শেখ হাসিনা বলেছেন, কৃষির উৎপাদন বাড়াতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে বিএনপি উন্নত দেশ থেকে ভিক্ষে করতে খাদ্য ও কৃষির উৎপাদন বাড়াতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কৃষির উৎপাদন বাড়াতে সরকার কাজ করছে। এ কারণে আজ আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে বিএনপি তা চাইত না। তারা ভিক্ষের জন্য খাদ্য নির্ভরশীলতা অর্জনে বিশ্বাসী ছিল না। তার চাই তো বিদেশ থেকে ভিক্ষে করতে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর দেশের কৃষির মেরামত শুরু করি। আজ আমাদের খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি তা রফতানি বাড়াতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের উৎপাদন বাড়লেও কৃষিপণ্য সংরক্ষণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এজন্য আমরা ৮ বিভাগে বিশেষ সংরক্ষণাগার নির্মাণ করব। এছাড়া কৃষিপণ্যের একটি বড় বাজার আছে বিদেশে। দ্রুততম সময়ে আমরা যাতে বিদেশে পণ্য পাঠাতে পারি সেজন্য বিশেষ কার্গো বিমান কিনছি। এ অবস্থায় সামনের দিনে কৃষিপণ্য উৎপাদন লাভজনক হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে গ্রামে গিয়ে নিজ নিজ জমি চাষের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আপনার গ্রামে ফিরে নিজ নিজ জমি চাষের উদ্যোগ নিন। আমি নিজেও ধান চাষ করে ২০০ মণের মতো ধান পেয়েছি। সবাই উদ্যোগ নিলে আমাদের খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।

কিছু লোক অন্ধ ও বধির :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কিছু মানুষ এসব উন্নয়ন দেখেন না। তারা চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতেও বধির। তিনি বলেন, আমাদের দেশের কিছু লোক আছে, যারা দেশের ভালো দেখতে পারে না। তারা চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতেও বধির। হয় এটা তাদের জ্ঞানের অভাব অথবা দূরভিসন্ধি। তবে এসব ষড়যন্ত্রে দমে না গিয়ে কাজ করে যাওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের বাংলাদেশকে ২০২৩ সালের বাংলাদেশে আমরা টেনে এনেছি। আজকের বাংলাদেশের দিকে নজর দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। আজ আমাদের অতি দরিদ্রের হার ৫.৬। আমরা একে শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য কাজ করছি।

দেশের রিজার্ভ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই :

দেশের রিজার্ভ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা রিজার্ভ নিয়ে বলতে বলতে সবার মাথায় এটা ঢুকে গেছে। রিজার্ভ নিয়ে দেশে তেমন কোনো সংকট নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো ডলার যেন আমাদের হাতে থাকে, সেটা নিয়েই আমাদের চিন্তা। তবে আমরা সবসময় রিজার্ভ ধরে রাখার চেষ্টা করি। আগে কত রিজার্ভ ছিল, এখন আমাদের রিজার্ভ কত এসব। তাই এটা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। আমাদের জমি আছে আমরা নিজেদের খাবার নিজেরাই উৎপাদন করব। এটা নিয়েও আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আমাদের স্যাংশন দিয়েছে, তাদের স্যাংশন বিষয়ে কোনো ভয় করি না। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আমাদের আত্মবিশ্বাস নিয়ে থাকতে হবে। তবে যারা আমাদের এমন স্যাংশন দিয়েছে তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু কেনাকাটা না করতে আমি অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অন্যদের বলে দিয়েছি। চলমান ডলার সংকট বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। আমাদের বিনিয়োগ বাড়ছে, উৎপাদন বাড়ছে। কাজেই ডলারের ওপর চাপ তো বাড়বেই। কিছুদিন আগে করোনা গেল, এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যার ফলে আজ সারা বিশ্বে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। পরিবহণ পরিচালন ব্যয় বেড়ে গেছে। যে কারণে ডলার সংকট এখন সমগ্র বিশ্বেই রয়ে গেছে।

বেতন বৃদ্ধি নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০১৫ সালে আমরা যখন বেতন ভাতা বৃদ্ধি করি, আমরা একটা গবেষণায় দেখেছিলাম যে, ইনফ্লেশনের (মুদ্রাস্ফীতি) সাথে সাথে একটা পারসেন্ট হারে বেতন বাড়বে। প্রতি বছরের হিসাব মতে, ইনফ্লেশন যত বাড়বে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বেতন বাড়াই। অনেক সুযোগও দিয়েছি, বৈশাখী ভাতা থেকে শুরু করে, ফ্ল্যাট কেনার ভাতা, গাড়ি কেনার লোন ইত্যাদি। তিনি বলেন, যেহেতু ইনফ্লেশন কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা সেই জায়গায় আবার কতটুকু পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া যায় সেই চিন্তা-ভাবনা করছি। কমিশন কর, এটা কর, সেটা কর, এতে খুব বেশি লাভ হয় না। কিছু লোক বঞ্চিত হয়ে যায়, আর কিছু লোক লাভবান হয়। এজন্য প্রতি বছরের হিসাব মতো ইনফ্লেশন যত বাড়বে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বেতন বাড়াব। তাছাড়া অনেক সুযোগও দিয়েছি। বৈশাখী ভাতা থেকে শুরু করে ফ্ল্যাট কেনার লোন, গাড়ি কেনার লোনসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বেতন যেভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম সেটা কিন্তু সবার জন্যই। তাই আমাদের মহার্ঘ্য ভাতার দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। যেহেতু ইনফ্লেশন বেড়ে গেছে, তাই ক্রয় ক্ষমতা অনুযায়ী এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন যেন বাড়তে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। বেসরকারি খাতের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা তাদের বিষয়। এটা সরকারের ব্যাপার না। বেসরকারি খাত করোনা ভাইরাসের সময় যেন বিপদে না পড়ে তার জন্য প্রণোদনা দিয়েছি। তাদেরকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমরা ভর্তুকিও দিয়েছি। এই ভর্তুকিটা বাজেটে বিপদে ফেলেছে। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এমন ভর্তুকি দেয় না। বিদ্যুতে ভর্তুকি দেওয়ায় কে বেশি লাভ পায়? যে সবচেয়ে বেশি এয়ারকন্ডিশন চালায় তার লাভ হয়। গরিব মানুষের তো লাভ হয় না। আসলে লাভবান হচ্ছেন বিত্তশালীরা। সব জায়গায় জ¦ালানি তেল, পরিবহণ এত বেড়েছে। এটা টানা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। যে দামে উৎপাদন হবে সেই দামে কিনতে হবে। যে যতটুকু পারবেন ততটুকু কিনবেন। সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে এসব জায়গায় ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনার সময়, ইউক্রেন যুদ্ধের সময় বাজেট যে করতে পারছি এজন্য ধন্যবাদ জানাবেন। বাজেটের প্রস্তুতি ঠিকঠাক করে দিয়েছি। কোনো অনাথ এসে কী বলছে সেই দায়িত্ব তো আমরা নেব না। আইএমএফ লোন তাদেরকেই দেয় যাদের লোন পরিশোধ করার সক্ষমতা থাকে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এত অনাথ হয়নি। দেওয়ার মতো সামর্থ্য আছে বলেই আমরা নিয়েছি, এটা বাস্তব কথা।

নিষেধাজ্ঞা দেওয়া নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই :

নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কথা নাই, বার্তা নেই অমনি স্যাংশন দেওয়ার ভয় দেখানো হলো। যারা আমাদের সপ্তম নৌবহর দিয়ে ভয় দেখিয়েছিল, আমরা তাও জয় করেছি। তারা স্যাংশন দেবে, এই ভয় পেলে চলবে না। আমরা কারও ওপর নির্ভর করি না। আমাদের যতটুকু আছে আমরা তা উৎপাদন করলেই হবে। আমরা কোনো জমি অনাবাদি রাখব না। আমরা উৎপাদন করতে জানি, ফসল ফলাতে জানি। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে খাদ্যপণ্য সংকট তৈরি হলে সেসব দেশেই উৎপাদন করা হবে জানান প্রধানমন্ত্রী। আমাদের দেশের কিছু মানুষই দেশের বদনাম করে, এটাই দুর্ভাগ্য উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, রাজনীতি যখন করি বিরোধিতা করবে, সমালোচনা থাকবে।

বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক আরও উন্নীত হয়েছে :

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক দ্রুততম সময়ে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পাদন, বিগ-বি প্রকল্পের মাধ্যমে আঞ্চলিক যোগাযোগ জোরদারকরণ, অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, জাপান ওভারসিজ কোঅপারেশন ভলান্টিয়ার প্রকল্প পুনরায় চালু করা, বাণিজ্য বৃদ্ধি, বাংলাদেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানি বিনিয়োগ, মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল, ঢাকা-টোকিও সরাসরি বিমান চলাচল বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক কৌশলগত অংশিদারিত্বে আরও উন্নীত হয়েছে।

তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে দ্রুততম সময়ে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পাদন, বিগ-বি প্রকল্পের মাধ্যমে আঞ্চলিক যোগাযোগ জোরদারকরণ, অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, জাপান ওভারসিজ কোঅপারেশন ভলান্টিয়ার প্রকল্প পুনরায় চালু করা, বাণিজ্য বৃদ্ধি, বাংলাদেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানি বিনিয়োগ, মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল, ঢাকা-টোকিও সরাসরি বিমান চলাচল বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, জাপান সরকার বাংলাদেশকে ৩০ বিলিয়ন ইয়েন বাজেট সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে। বৈঠকে আমি ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার জন্য জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই এবং দ্রুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য জাপানের সহযোগিতা চাই।

বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্কের এই সূচনালগ্নে উভয় দেশের মধ্যে কৃষি, মেট্রোরেল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল আপগ্রেডেশন, শিপ রিসাইক্লিং, কাস্টমস ম্যাটারস, ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি, ডিফেন্স কোঅপারেশন, আইসিটি এবং সাইবার সিকিউরিটি কো-অপারেশন ইত্যাদি খাতে মোট ৮টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়াও আমি এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের রূপরেখার ওপর একটি যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করি।

পরে আমার সম্মানে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেই। তিনি আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে শীর্ষ বৈঠক ছাড়াও কিছু দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাইকার প্রেসিডেন্ট, জেটরোর চেয়ারম্যান ও সিইও, জাপান-বাংলাদেশ কমিটি ফর কমার্শিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (জেবিসিসিইসি)-এর চেয়ারম্যান এবং জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লিগ (জেবিপিএফএল)-এর প্রেসিডেন্ট, জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র সহধর্মিণী এবং জেবিক-এর প্রেসিডেন্ট আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৭ এপ্রিল টোকিও’র ওয়েস্টিন হোটেলে জাপানের খ্যাতনামা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সিইও ও ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে আমি মিট অ্যান্ড গ্রিট অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। এরপরে আমি একই হোটেলে আয়োজিত বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে যোগ দেই।

জাপান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বাণিজ্য সম্ভাবনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। আমি বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্জিত অভূতপূর্ব উন্নয়নের বিষয় উল্লেখ করে বাংলাদেশে অধিকতর বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের আহ্বান জানাই। এ সময়ে দুই দেশের ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে মোট ১১টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এরপর আমি জাপানের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ইমার্জিং সায়েন্স অ্যান্ড ইনোভেশন (মিরাইকান মিউজিয়াম) পরিদর্শন করি।

বিকেলে জাপানের খ্যাতনামা স্থপতি তাদাও আনদো আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময়ে স্থপতি তাদাও আনদো আর্কিটেক্ট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মধ্যে ঢাকায় একটি চিলড্রেনস লাইব্রেরি স্থাপনের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্মাক্ষরিত হয়। ওইদিন বিকেলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্যে আমি ৪ জন জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদানের জন্যে আকাসাকা প্যালেসে এক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। ওইদিন বিকেলে আমি এনএইচকে এবং নিক্কেই সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেই। এরপর টোকিওর ওয়েস্টিন হোটেলে আমি জাপান প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেই।

নিউজ/এম.এস.এম

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102