নবীগঞ্জ উপজেলার বরাক নদী খনন প্রকল্পের সঞ্চয়ী হিসাব থেকে ৫০ লাখ টাকা ঘায়েব এর ঘঠনার তদন্তে তদন্ত কমিটি প্রায় ৩৮ লাখ টাকা আত্বসাতের প্রমান পেয়েছে । সমিতির সঞ্চয়ী হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করে সমিতির সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তারা আত্বসাৎ করেছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক কে জানিয়েছেন। কোন কাজ না করেই এই পুকুর চুরির ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে সর্বত্র।
জানাযায় নবীগঞ্জ উপজেলার এড়াবরাক খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিঃ এর সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে সমিতির সদস্যদের সঞ্চয় ও খাল খনন প্রকল্পের ৩৭ লক্ষ ৩৩ হাজার ৭৬৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। সমিতির সঞ্চয়ী হিসাব তিনজনের নামে থাকলেও অভিযোগ উঠেছে দুইজনের বিরুদ্ধে।
জাইকার প্রকল্পের কাজ করার জন্য এড়াবরাক খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিঃ গঠন করে সভাপতি এস এম শাহেদ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মছদ্দর আলী ও কোষাধক্ষ্য শফিউল আলম হেলাল আউশ কান্দি রুপালী ব্যাংকে একটি যৌথ একাউন্ট করেন। উক্ত একাউন্ট থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা গায়েবের অভিযোগ উঠে। এনিয়ে সমিতির কার্যকরী সহ সভাপতি আশিক মিয়া, সদস্য মতচ্ছির হোসেন খান, সিরাজ মিয়া ও মুজিবুর রহমান শামসুল হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। জেলা প্রশাসক উক্ত অভিযোগটি সরজমিন তদন্ত করার জন্য নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ার ও নবীগঞ্জ উপজেলা সমবায় অফিসার ইসমাইল জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অভিযোগের সরজমিন তদন্ত করে সমিতির কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তারা প্রতিবেদন দাখিল করেন। এমনকি সমিতির সাবেক সভাপতি তদন্ত প্রতিবেদন তার পক্ষে নিতে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রাননাশের হুমকিও প্রদর্শন করেন।
প্রতিবেদন সুত্রে জানা যায়, সমিতির সাবেক সভাপতি ও সম্পাদক এলসির টাকা শ্রমিকদের মধ্যে বন্টন না করে তারা আত্মসাত করেছেন। এ ছাড়া সাবেক সভাপতি কাজী এসএম শাহেদ মিয়া সদস্যদের শেয়ার ও সঞ্চয়ের টাকা নিজের কাছে মজুদ রেখে মনগড়াভাবে সমিতি পরিচালনা করে গেছেন।
এ ছাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটির ১২ জন সদস্য থাকা স্বত্তেও সাবেক সভাপতি বিনা নোটিশে নিজস্ব লোকদের স্বাক্ষর নিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করেছেন। কোনো সভায় সদস্যদের আহ্বান করেননি বা সভার কার্যক্রম সম্পর্কে তাদের জানাননি। সমিতির সন্চয়কৃত ৭৮ হাজার ২৮৯ টাকা সভাপতি নিজের কাছে রেখে দেন। যা অনিয়মের সামিল এবং সমিতির আইন পরিপন্থি।
তদন্ত প্রতিবেদন সুত্রে আরও জানা যায়, ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প-২ (জাইকা-২) এর অধীনে এড়াবরাক উপ-প্রকল্পে এড়াবরাক খাল পুনঃখনন কাজের জন্য বরাদ্দকৃত ৩১টি এলসিএসের মধ্যে ১৩, ১৪, ১৫ ও ১৬ নং এলসিএসের সভাপতি ও সম্পাদক বাস্তবায়নকৃত কাজের মোট ৩৭ লক্ষ ৩৩ হাজার ৭৬৪ টাকা শ্রমিকদের পরিশোধ করার শর্তে চেকে স্বাক্ষর নিয়ে সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির নিকট জমা দেন। সভাপতি উক্ত টাকা উত্তোলন করে শ্রমিকদের মাঝে বন্টন করেছেন কি না তাদের জানা নেই। এ বিষয়ে উপযুক্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।এড়াবরাক খাল ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
নবীগঞ্জ ইউএনও কার্যালয়ের স্মারক নং ৩২৭, তারিখঃ- ২৩/০৮/২০২২ ও স্মারক নং৩৪৪, তারিখঃ ০৫/০৯/২০২২খ্রি. মূলে নোটিশ প্রদান পূর্বক ও ডিসি অফিস হবিগঞ্জ এর স্মারক নং ৩১১, তারিখ ২২/০২/২০২১ খ্রি মূলে ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প-২ (জাইকা-২) এর অধীনে এড়াবরাক উপ- প্রকল্পে এড়াবরাক খাল পুনঃখনন কাজের জন্য বরাদ্ধকৃত ৩১ টি এলসিএস এর মধ্যে ১৩, ১৪, ১৫, ১৬ নং এলসিএস এর সভাপতি/সম্পাদক গণ লিখিতভাবে জানান বাস্তবায়নকৃত কাজের মোট ৩৭,৩৩,৭৬৪ টাকা শ্রমিকদেরকে পরিশোধ করার শর্তে চেকে স্বাক্ষর দিয়ে সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির নিকট জমা দেই। সভাপতি পরবর্তীতে অন্যদিকে সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী এমএম শাহেদ মিয়া সমিতির শেয়ার ও সঞ্চয়ের টাকা হস্তে মজুদ রেখে মনগড়া মাফিক সমিতি পরিচালনা করে গেছেন।
অর্থ আত্নসাতের ব্যাপারে সাবেক সভাপতি কাজী এমএম শাহেদ মিয়া বলেন আমি কোন টাকা আত্বসাৎ করি নাই, তিনজনের নামে ব্যাংক একাউন্ড আমরা সবাই মিলে টাকা তুলেছি। আমরা সমবায় অফিসারকে ঘুষ দেই নাই বলে তিনি এমন প্রতিবেদন দিয়েছেন। আমি এবিষয়ে মন্ত্রনালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি।
সমিতির সাবেক সহ সভাপতি আশিক মিয়া বলেন, আমাদের সমিতির ৫০লাখ টাকা ব্যাংক হিসাবে থেকে ঘায়েব হয়েছে। আমরা অভিযোগ দিলে তদন্ত কমিটি ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আত্বসাতের প্রমান পেয়েছেন। আমরা সমিতির টাকা ফেরত চাই। পুরো সমিতির কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প নয়ছয় করা হয়েছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা সমবায় অফিসার ইসমাইল হোসেন বলেন, আমি বাদী বিবাদী উভয়ের সাথে কথা বলি ও সব সদস্যদের বক্তব্য গ্রহন করে সরজমিন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করি। আমার তদন্তকালে সমিতির সাবেক সভাপতি এমএস শাহেদ মিয়া আমাকে তার পক্ষে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য প্রান নাশের হুমকি প্রদান করেন। আমরা টাকা আতস্বাতের প্রমান পেয়ে সমিতির কমিটি ভেঙ্গে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ার বলেন, আমরা জাইকা প্রকল্পের ৩৭ লক্ষ ৩৩ হাজার ৭৬৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। আমি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। তিনি পরবর্তী ব্যবস্থা নিবেন।
নিউজ /এমএসএম