সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ০৩:১৪ অপরাহ্ন

কুশিয়ারা ডাইক প্রকল্পে

রক্ষা পাবে সিলেট বিভাগের বোরো ফসল ও নদী ভাঙ্গন

এম এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ)
  • খবর আপডেট সময় : শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৩
  • ১৪৩ এই পর্যন্ত দেখেছেন

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় জেলার কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্প নির্মান কাজে ৫৭৩ কোটি টাকার কাজ চলমান। প্রকল্পটি এখন শেষের পথে। এ বিশাল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সিলেট বিভাগের তিনটি জেলার হওরাঞ্চলসহ ভাটি এলাকার বিশাল পরিবর্তন হবে। চলতি বোরো মওসুমে অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে হবিগঞ্জের তিনটি উপজেলা।

এ প্রসঙ্গে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন-কুশিয়ারা ডাইক রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে, ভাটি অঞ্চল রক্ষা পাবে অকাল বন্যার হাত থেকে,সিলেট বিভাগের হাওরাঞ্চলের কৃষি ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে। প্রতি বছর অকাল বন্যায় তলিয়ে যেতো হাওরাঞ্চলের বোরো ফসল। এখন এই বাঁধ নির্মান হওয়ার ফলে রক্ষা পাবে বোরো ফসল সহ কৃষি জমি। প্রতি বছর শত শত ঘর বাড়ি নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়তো এখন আর নদী ভাঙ্গন হবে না। কুশিয়ারার তীরবর্তী মানুষের মধ্যে স্বস্থি নিঃস্বাশ ফিরে আসবে। তিনি আরও বলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট জোনের প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি তদারকি টিম গঠন করে কাজ করা হচ্ছে।

জানা যায়- হবিগঞ্জের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ “কুশিয়ারা ডাইক” প্রতি বছর বর্ষায় ভেঙে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, সিলেটের ওসমানী নগর ও মৌলভীবাজার সদর ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামসহ ভাটি ও হওরাঞ্চলের বাড়িঘর ও কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে যায় পানির নীচে। নদীর উভয় তীরের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী ছিল বর্তমান প্রযুক্তিতে নতুন ভাবে কুশিয়ারা উভয়পাশে বাঁধ নির্মাণের জন্য। সেই দাবির প্রেক্ষিতে ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যায়ে উভয় তীরে প্রতিরক্ষা বাঁধ ও ব্লক দিয়ে ভাঙ্গনরোধ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীর রক্ষায় প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার এলাকায়জুড়ে প্রতিরক্ষা প্রকল্প নির্মানে ৫৭৩ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকের সভায় অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দরপত্র আহ্বানে কাজ পায় ৫টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান, সে গুলো হলো, গোলাম রব্বানী কন্টাকশন, এএইচ ট্রেডিং কোং, আরএফএল, নেশন ট্রেক কমিশন ও আবুল কালাম কোং। তারা ১১টি প্যাকেজে কাজ শুরু করেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় হবিগঞ্জ জেলার বিবিয়ানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রেসমূহের সম্মুখে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীরের প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজ।

এর মধ্যে এ এই্চ ট্রেডিং কোং, আরএফএল ও হাজী আতাউর রহমান ট্রেডিং এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরএফএল এর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, তারা কাজের সংশোধন করে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করেছেন। তিনি বলেন আমাদের কাজ সরকারী নীতি মালা অনুযায়ী হচ্ছে এতে কোন ব্যতিক্রম হয়নি। গোলাম রব্বানী কন্ট্রাকশনের কাজ চলছে, তাদের প্রকল্প সুপার ভাইজার প্রকৌশলী শাহেদ আহমদ বলেন, আমরা কাজের সম্পূর্ন গুনগত মান বজায় রেখে করছি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদস্যরা প্রতিদিন এর তদারকি করছেন।

স্থানীয় সাবেক মেম্বার সুমন মিয়া জানান, নবীগঞ্জের পাহাড়পুর অংশে এ এইচ ট্রেডিং করপোরেশন নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা ব্লক নির্মান করছেন। সেখানে গুণগত মানের সিমেন্ট ব্যবহার করা হলেও সিমেন্টের তুলনায় মরা পাথর, অতিরিক্ত বালি ব্যবহার করতে দেখা যায়। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদস্যারা বিষয়টি সমাধান করেন।

লামা তাজপুর এলাকার রব্বান উল্লাহ, আলী হোসেন রানা ও খালিক মিয়ার বাড়ির সামনেসহ বেশ কিছু স্থানে কুশিয়ারা প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজ নিয়ে বলেন, আমরা নদীর ভাঙ্গন নিয়ে আতংকের মধ্যে থাকতাম। প্রতি বছর বর্ষায় আমাদের বাড়িঘর তলিয়ে যেতো এখন আর আমাদের সেই চিন্তা নেই। নদীর তীর রক্ষা বাঁধ আমাদের পরিবেশ পরিস্থিতি পাল্টে দিবে।

শেরপুর বনগাও এলাকার মেম্বার সুজন মিয়া বলেন- বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্রতিরক্ষা প্রকল্প নির্মাণ সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ॥ প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আমাদের কৃষিক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন আসবে। হাওরাঞ্চলের কৃষকদের আর বোরো ফসল নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। অল্প বৃষ্টি হলেই কুশিয়ারার পানিতে এখন আর ফসল তলিয়ে যাবে না। তাই আমরা এই প্রকল্প নিয়ে সত্যিই আনন্দিত ও গর্বিত।

নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিলাওয়ার হোসেন বলেন- ব্লক নির্মাণে অনিয়ম দুর্র্নীতির বিষয়ে তড়িৎগতি কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কুশিয়ারার তীর রক্ষা প্রকল্পের জন্য আমার ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রাম ও কয়েক হাজার একর ফসলী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পাবে।

হবিগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, কুশিয়ারা নদীর উভয় তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে হাওরাঞ্চলের পরিবেশ পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। শুধু নদী ভাঙ্গনই রোধ হবে না,কৃষিক্ষেত্রে রক্ষা পাবে বোরো ফসল, অকাল বন্যারোধ হবে। সিলেট বিভাগের হাওরাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ উপকৃত হবেন কুশিয়ারা ডাইকের তীর রক্ষা প্রকল্পের জন্য তাই সরকারের এই প্রকল্পকে স্বাগত জানাচ্ছি। বন্যায় ডুবেছে সিলেটসহ বানভাসি মানুষের কষ্ট লাগবে কাজ করবে। পরিবেশ দুষণ রোধ ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে কুশিয়ারা ডাইক সঠিক ভাবে সম্পন্ন হলে জনগনের উপকারে আসবে।।

এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী একে এম শহিদুল ইসলাম বলেন, কুশিয়ারা নদীর উভয় তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ ১১টি প্যাকেজের মধ্যে ৭টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে।৪টি প্রতিষ্ঠানের কাজ চলমান রয়েছে। এ কাজগুলো মূলত নদী ভাঙনরোধে করা হচ্ছে না। পরিবেশগত উন্নয়ন হবে।সিলেট বিভাগের চারটি জেলার মানুষ কুশিয়ারার তীর রক্ষা প্রকল্পের উপকার ভোগ করবেন। জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য হ্রাস ও দুষণ মরুকরণ ও খরা— বর্তমানে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির জন্য বিশাল হুমকি ।তাই কুশিয়ারা ডাইক তীর রক্ষা প্রকল্প এবিষয়ে উন্নত ভুমিকা রাখবে।

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102