শখের স্মার্টফোন চুরি হলে তা থেকে মানুষের কর্মক্ষেত্র ও ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয় সব তথ্য বেহাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ফলে হেনস্থার মধ্যে পড়তে হতে পারে ব্যবহারকারী। স্মার্টফোন ও ফোনে থাকা সিম দিয়ে হয়তো অপরাধীরা গুরুতর কোনো অপরাধ করতে পারেন। এতে আপনার ওপর তার দায়ভার চলে আসতে পারে অজান্তেই।
তবে স্মার্টফোনটি হারিয়ে, চুরি বা ছিনতাই হলে অনেকেই বুঝতে পারেন না কী করণীয়? অনেকে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন, নানানজনের কাছ থেকে নানা পরামর্শ নেন। কিন্তু, সেসব পরামর্শে কাজ না হলে হাত গুটিয়ে বসে থাকেন। আপনার চুরি-ছিনতাই হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া ফোনটি খুঁজে পেতে প্রথমেই যেটি করতে হবে, সেটি হলো আপনার নিকটস্থ থানায় জিডি করতে হবে।
এছাড়া, মোবাইল ফোন সেবাদাতার কলসেন্টারে ফোন করে সংযোগটি বন্ধ করে দেওয়ার (সিমকার্ড লক) চেষ্টাও করুন। থানায় যোগাযোগ করে আপনার স্মার্টফোনের যাবতীয় তথ্য, সেটের মডেল নম্বর ও সিমের তথ্য দিয়ে কবে, কখন কীভাবে ফোনটি হারিয়ে গেল, তা বিস্তারিত জানিয়ে জিডিটি করুন।
জিডির সময় যে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করতে হবে তা হলো, ফোনটির আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল স্টেশন ইক্যুপমেন্ট আইডেনটিটি) নম্বর বা ফোনের সিরিয়াল নম্বর।
দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে, যার মাধ্যম এই নম্বর দিয়ে ফোনটির অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব।
অনেক সময় পুলিশ আপনার অভিযোগটি গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছেও হস্তান্তর করতে পারে। অনেকেই ফোনের সিরিয়াল নম্বর জানেন না এবং কী করে এটা জানতে হয়, সেটাও জানেন না।
*#০৬# নম্বর ফোনের কি প্যাডে লিখলে পর্দায় ১৫ সংখ্যার একটা নম্বর দেখা যাবে।
মুঠোফোন হারিয়ে গেলে এই ১৫ সংখ্যার নম্বরটা জানা থাকলে, পুলিশের সাহায্যে সহজেই মুঠোফোনটির অবস্থান জানা যাবে। জিডি করার পর একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা ফোনটি উদ্ধারের দায়িত্বে থাকবেন। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে যতটা সম্ভব ফোনটি খুঁজে পেতে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করবেন।
ফোনে যে সিম ব্যবহার করবেন, তা অবশ্যই আপনার নামে নিবন্ধিত থাকলে আইনি সেবা পেতে সহায়তা করবে। আবার সরাসরি র্যাব অফিসে যোগাযোগ করে লিখিত অভিযোগ করতে পারেন এবং হারিয়ে যাওয়া ফোনটি সম্পর্কে অবগত করে আইনি সহায়তা চাইতে পারেন।
পুলিশ বা র্যাব যদি ফোনসেটটি উদ্ধারে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন হয়, তাহলে তা তারা করতে পারে। প্রয়োজনে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তদন্ত চালিয়ে যেতে পারে। এছাড়া নিজেরাও বের করতে পারবেন স্মার্টফোনের লোকেশন।
পুলিশের সহায়তা ছাড়া নিজেদের পক্ষেও হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া স্মার্টফোনের লোকেশন জানা সম্ভব। সেক্ষেত্রে আপনাকে অ্যান্ড্রয়েডের জন্য গুগল সেটিংস থেকে সিকিউরিটিতে যেতে হবে। সেখানে ‘রিমোটলি লোকেট দিস ডিভাইস’ অপশনটি চালু করে রাখতে হবে। এরপর আপনাকে কেবল ফোনের কোনো ব্রাউজার থেকে সংযোগ ঘটাতে হবে।
এটা অন্য কোনো মোবাইল বা কম্পিউটার থেকেও করতে পারবেন। হারানো ফোনটির অবস্থানের তথ্য পাবেন রিয়েল-টাইমে। অন্যান্য অপশনের মাধ্যমে ফোনটি বেজে উঠতে পারে তার অবস্থান জানানোর জন্য। আশপাশে হারিয়ে গেলে এ সুবিধা নিতে পারবেন।
আবার চাইলে লক করে কিংবা সব তথ্য মুছে ফেলারও ব্যবস্থা আছে। কিছু ব্র্যান্ড নিজস্ব সমাধান দেয়। যেমন: স্যামসাং দেয় ‘ফাইন্ড মাই মোবাইল’। আপনার স্যামসাং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে স্মার্টফোনের যাবতীয় তথ্য সিঙ্ক্রোনাইজ করতে পারবেন। এর মাধ্যমে মোবাইলের অবস্থান জানাও সম্ভব।
আইওএস অপারেটিংয়ে ‘সেটিংস’ থেকে আইক্লাউডে যেতে হবে। সেখানে ‘ফাইন্ড মাই ফোন’ চালু করবেন। খেয়াল করবেন আপনার ‘প্রাইভেসি’ সেটিংসে ‘লোকেশন সার্ভিস’ চালু করা আছে। আইফোন হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে সংযোগ ঘটিয়ে নিজের অ্যাপল অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে ফোনের অবস্থান জেনে নিন।
ইউকেবিডিটিভি/ বিডি / এমএসএম