শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
মাধবপুরে ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৪ পঞ্চগড়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নবিজুল ইসলাম সমাহিত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে সরকার কাজ করছে- পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ওয়েলস আওয়ামী লীগের উদ্দ্যোগে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উদযাপিত পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের যা করার দরকার তা আমরা করব পার্বত্য উপদেষ্টার সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত পুলিশের মাসিক কল্যাণ সভায় শ্রেষ্ঠ থানা শ্রীমঙ্গল উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর উদ্যোগে পালিত হলো বাংলা নববর্ষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ অন্যান্যদের বিরদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সমাবেশ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ দূতাবাস ব্রাসিলিয়ায় বাংলা নববর্ষ উদযাপিত

বিলুপ্ত প্রায় ঘোড়ার গাড়ি এখনো চলছে নবীগঞ্জের হাওরাঞ্চলে

এম,এ আহমদ আজাদ (হবিগঞ্জ)
  • খবর আপডেট সময় : বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২২
  • ২২৪ এই পর্যন্ত দেখেছেন

এক সময়ে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ি এখন বিলুপ্ত।হবিগঞ্জের হাওরাঞ্চলের ধান কাটার প্রধান বাহন ছিলো গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি। বিভিন্ন বিয়ে সাদীতে এই ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার ছিলো বংশীয় ঐতিহ্য।জমিদার ও সম্রাটরা  এসব ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করতেন।

কিছুদিন পুর্বেও নবীগঞ্জ গ্রামাঞ্চলে গ্রাম থেকে ঘোড়ার গাড়ীতে করে বাজারের সওদা এবং গৃহস্থালি প্রয়োজনীয় পণ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আনা-নেওয়া করা হতো। বিভিন্ন সমস্যার কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এসব ঘোড়ার গাড়ী।

নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আগেকার যুগে বিয়ে থেকে যে কোন বড় অনুষ্ঠানে এসব ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হতো। বিয়ের বর কনেকে নেয়া হতো ঘোড়ার গাড়ি করে। আর বর যাত্রীরা যেতেন হেটে।

গৃহস্থালরি কাছে জিনিস পত্র ও ধান বহনে গরুর গাড়ি বা ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার ছিলো বাধ্যতামুলক। নবীগঞ্জ উপজেলার বড় হাওর, জোয়াল ভাঙ্গা হাওর, ঘুঙ্গিয়া জুড়ির হাওর এলাকায় এখনও রোপা আমন কাটার মওসুমে এসব ঘোড়ার ও গরুগাড়ির ব্যবহার কিছু লোকজন ধরে রেখেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার বিকালে জোয়াল ভাঙ্গা হাওরের কৃষক আব্দুল মতিন ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে ধান বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে ছিলেন। এসময় এ প্রতিনিধির সাথে আলাপ কালে জানান আমি বাপ দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছি। এখনো আমি ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করি। আমি প্রাচীন ঐতিহ্য হিসাবে ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহারকে নিরাপদ মনে করি এখানে কোন জ্বালানি খরচ লাগে না।

লালাপুর গ্রামের বয়স্ক আব্দুল করিম(৮০) বলেন, গ্রামগঞ্জের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ধরে ধীরে ধীরে বয়ে চলা গরু ও ঘোড়ার গাড়ি এখন আর চোখে পড়ে না। যা একসময় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহন হিসেবে প্রচলিত ছিল এবং গ্রাম–বাংলার জনপথে গরু মহিষ ও ঘোড়ার গাড়িই যোগাযোগের একমাত্র বাহন ছিল। এই বাহনগুলো বিভিন্ন জনপদের সরগরম অস্তিত্ব ছিল, ছিল সর্বত্র এই গাড়ি গুলোর কদর।

পণ্য পরিবহন ছাড়াও গ্রামবাংলায় বিবাহের বর-কনে বহনেও বিকল্প কোন বাহন ছিল না এবিষয়ে ইনাতগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান নোমান আহমদ বলেন, পায়ে চলার পথে মানুষ ও পশুর শ্রমে চালিত গরু, মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ও বাণিজ্যের পণ্য পরিবহনে প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহার করত প্রাচীন কাল থেকেই।

বাংলা এবং বাঙালির ঐতিহ্য গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে এখন বিলুপ্তির পথে। বিভিন্ন উৎসব পার্বণে এই বাহনগুলো ছিল অপরিহার্য। বিয়ে এবং অন্য কোন উৎসবে গরুর গাড়ি অথবা ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া বিয়েই অসম্পুর্ণ থেকে যেত।

কাজল মিয়া নামের একজন কৃষক বলেন, আগে অনেকেরই এই গাড়িগুলো ছিল উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন। তখন গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ির ব্যাপক চাহিদা ছিল। সময়ের বিবর্তনে আজ গরুর গাড়ি চালক ‘গাড়িয়াল‘ ভাই না থাকায়, হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা গাড়িয়াল ভাইয়ের কণ্ঠে সেই অমৃত মধুর সুরের গান।

গাড়িয়ালরা গাড়ি চালানোর সময় আনন্দে গাইতো ,এখন আর চাইয়া থাকলেও একটি গরুর ও ঘোড়ার গাড়ি চোখে পড়ে না।

এদিকে হবিগঞ্জের হাওরাঞ্চলে আধুনিকতার দাপটের ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ি। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে গাড়িয়াল পেশাও। যা একদা ছিল বংশ পরম্পরায়।

সময় অতিবাহিত হবার সাথে সাথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক বাহক অনেক বাহনেরই আমুল পরিবর্তন, আধুনিকায়ন সাধিত হয়েছে। আধুনিক এই যুগে হারিয়ে যাচ্ছে গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি। আজ শহরের ছেলেমেয়েরা তো দুরে থাক গ্রামের ছেলে মেয়েরাও ঘোড়ার গাড়ি ও গরুর গাড়ি এই যানবাহনের সাথে খুব একটা পরিচিত না।তেমনি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি প্রকৃতিবান্ধব গরু, ঘোড়ার গাড়ী বহুবিধ কারণে বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে।

নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রকৌশলী কৃষিবিদ এ.কে.এম . মাকসুদুল আলম জানান, সরকার যদি উন্নয়ন সহায়তা বৃদ্ধি করে এবং ভর্তুকি মুল্যে আরও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি প্রদান করে চাষাবাদে কৃষকের খরচ বাচাতে এসব ঘোড়ার গাড়ি অথবা গরুর গাড়ির চালকদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। এসব বিলুপ্তি থেকে বাঁচাতে আগে ঘোড়াকে তারপর ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব।

ঘোড়ার গাড়ি বা গরুর গাড়ি স্বাস্থ্যকর পরিবহন এসবে কোন জ্বলানি লাগে না, পরিবেশ বান্ধব পরিবহন, কখনও পরিবেশ দুষনের সম্বাবনা নেই তাই প্রাচীন ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে আমাদের সবার সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102