শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫৫ অপরাহ্ন

প্রসূতির মৃত্যু: এ বি’র বদলে দেয়া হয় বি পজেটিভ রক্ত

সংবাদদাতার নাম :
  • খবর আপডেট সময় : বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০২২
  • ১৪৬ এই পর্যন্ত দেখেছেন

স্টাফ রিপোর্টার: সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয়ার সময় এক প্রসূতি মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। এমন পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে শিরিন বেগম (৩২) নামে ওই প্রসূতিকে রক্ত দেয়ার প্রয়োজন পড়ে।

তার রক্তের গ্রুপ এ বি পজেটিভ হওয়ায় স্বজনদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এর মধ্যে তার শরীরে বি পজেটিভ রক্ত পুশ করা হয়। ফলে ওই প্রসূতি মায়ের খিঁচুনি ওঠে। তখনো চিকিৎসক এর পরিবর্তে হাসপাতালের তার চিকিৎসা করতে থাকে ওটি বয় ও নার্সরা। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় আনার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যান ওই মা।

গত রবিবার (২১ আগস্ট) ভয়ংকর এ ঘটনা সংঘটিত হয় গাজীপুরের কালীগঞ্জ এলাকার জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এ ঘটনায় হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তারা হলেন- হাসপাতালের পরিচালক বন্যা আক্তার (৩১), মো. আশিকুর রহমান (২৫), সংগিতা তেরেজা কস্তা (৩৩), মেরী গমেজ (৪০), সীমা আক্তার (৩৪) ও শামীমা আক্তার (৩২)। এ সময় ভিকটিমের চিকিৎসা সংক্রান্ত ও হাসপাতাল পরিচালনার মেয়াদ উত্তীর্ণ নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার র‍্যাব-১ এর একটি দলের অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‍্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, গত ২১ আগস্ট সকালে গাজীপুরের কালীগঞ্জের বাসীন্দা ভিকটিম শিরিন বেগমের প্রসব বেদনা উঠলে পূর্বপরিচিত ‘জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক বন্যা আক্তারের মাধ্যমে ওই হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য ভর্তি হয়।

পরবর্তীতে ওটি বয় আশিকের তত্ত্বাবধানে রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা ও আল্টাসনোগ্রাম করে সিজারের জন্য রোগীকে ওটিতে নেয়া হয়। চিকিৎসক মাসুদ গাইনোকলজিস্ট না হয়েও রোগীর সিজার করেন তিনি।

ওটি শেষে রক্তক্ষরণ (ব্লিডিং) হওয়ায় মাসুদের পরামর্শে আশিক ও বন্যা রোগীর পরিবারকে এবি পজেটিভ রক্ত সংগ্রহের কথা বলেন। এর প্রেক্ষিতে প্রথমে ভিকটিমের ভাই ও ননদের ছেলের এবি পজেটিভ গ্রুপের রক্ত হওয়ায় তাদের কাছ থেকে রক্ত নেয়ার ব্যবস্থা হয়।

প্রথমে ভুক্তভোগীর ভাইয়ের শরীর থেকে এক ব্যাগ রক্ত নিয়ে রোগীর শরীরে পুশ করা হয়। আরও এক ব্যাগ রক্ত নিতে ননদের ছেলেকে বেডে শোয়ানো হয়। এরই মধ্যেই হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সরা ভিকটিমের শরীরে বি পজেটিভ গ্রুপের রক্ত পুশ করে বসেন।

ভুক্তভোগীর এ বি পজেটিভ গ্রুপের রক্তের পরিবর্তে বি পজেটিভ রক্ত পুশ করায় রোগীর খিঁচুনি উঠলে বিষেষজ্ঞ ডাক্তারের অনুপস্থিতে আশিকের তত্ত্বাবধানে রোগীর চিকিৎসা চলতে থাকে। একপর্যায়ে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যার দিকে রোগীকে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেয়। ভিকটিমের পরিবার রোগীকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলে অবস্থার আরও অবনতি হলে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন তাকে।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ নিয়মিত কোনো চিকিৎসক ছিলো না। অথচ সেখানে গড়ে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০টি সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারসহ প্রায় ৫০ এর বেশি বিভিন্ন অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করা হতো। মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছিল হাসপাতালটি। ওটির জন্য রোগী ভেদে বিভিন্ন প্যাকেজে ১০-১৫ হাজার টাকা নেয়া হতো।

গ্রেপ্তার হওয়া বন্যা আক্তার ওই হাসপাতালের অন্যতম অংশীদার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার কোন নার্সিং ডিগ্রি নেই। তবে সে স্থানীয় একটি হাসপাতালে সাত বছর নার্সিং ও আড়াই বছর ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছিলেন। বর্তমানে ওই হাসপাতালের মালিক তিনজন।

অন্যদিকে, গ্রেপ্তারকৃত আশিক এসএসসি পাস করে ২০১৬ সালে ম্যাটস থেকে তিন বছরের ডিএমএফ কোর্স পাস করে। হাসপাতালে ২০ হাজার টাকা মাসিক বেতনে ওটি বয় ও সহকারী চিকিৎসক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন তিনি। ঘটনার দিন ডা. মাসুদের সহকারী হিসেবে ওটিতে উপস্থিত ছিলেন আশিক। তবে সেখানকার সেবিকা (নার্স) এবং ভুক্তভোগীর পরিবার তাকে চিকিৎসক হিসেবে জানত। রোগী তদারকি, চিকিৎসকদের সঙ্গে সমন্বয় রাখা, বিভিন্ন ধরণের টেস্ট করা ও ডাক্তারদের পক্ষে কাগজপত্রে ভুয়া স্বাক্ষর করতেন তিনি।

গ্রেপ্তার হওয়া সংগিতা তেরেজা কস্তা এসএসসি পাশ ও ওই হাসপাতালে সিনিয়র নার্স হিসেবে কর্মরত, মেরী গমেজ এসএসসি পাশ ও জুনিয়র নার্স, সীমা আক্তার এসএসসি পাশ ও নার্স, শামীমা আক্তার এসএসসি পাশ ও হাসপাতালের রিসিপশনিস্ট হিসেবে কর্মরত।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৩০ জুন ওই হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। এছাড়া, ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর নবায়ন করেননি তারা।

ইউকেবিডিটিভি/ বিডি / এমএসএম

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102