রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন

নার্সিং কলেজের প্রশ্ন ফাঁস, অধ্যক্ষসহ গ্রেফতার ৬

সংবাদদাতার নাম :
  • খবর আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০২২
  • ১১৪ এই পর্যন্ত দেখেছেন

স্টাফ রিপোর্টার: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নার্সিং কলেজসমূহের বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনায় একটি নার্সিং কলেজের সাবেক অধ্যক্ষসহ প্রশ্নফাঁস চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নার্সিং কলেজের ১ম বর্ষ ফাইনাল বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পূর্বেই আদান প্রদান করার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদল ২০ আগস্ট পরীক্ষা শুরুর পূর্বে একটি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের মোবাইলে প্রশ্নপত্রের ছবি ও সাদা কাগজে হাতে লেখা প্রশ্নপত্রের ছবি উদ্ধার করে। এ বিষয়ে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

তিনি জানান, এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (২১ আগস্ট) রাতে রাজধানীর মহাখালী, ধানমন্ডি ও আজিমপুর এলাকা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূলহোতা ফরিদা খাতুন (৫১), মোছা. মনোয়ারা খাতুন (৫২), মোসা. নার্গিস পারভীন (৪৭), মোছা. কোহিনুর বেগম (৬৫), মো. ইসমাইল হোসেন (৩৮) ও মো. আরিফুল ইসলামকে (৩৭) গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয়, ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রের কপি এবং ৯টি মোবাইল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।

গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সর্বমোট ৯৮টি নার্সিং কলেজের মধ্যে বর্তমানে ৩৮টি কলেজে পরীক্ষা চলমান। প্রশ্নপত্রের গোপনীয়তা বজায় রাখতে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন প্রশ্ন প্রণয়নকারী নিয়োগ দেওয়া হয়। যারা দুই সেট আলাদা প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে থাকেন। পরবর্তীতে এই প্রশ্নপত্রগুলোকে যাচাই-বাচাই করার জন্য একটি মডারেটর টিম নিয়োগ করা হয়। যাদের কাজ প্রশ্নপত্রগুলো থেকে পরীক্ষার জন্য এক সেট পরিপূর্ণ প্রশ্নপত্র তৈরি করে, সেগুলো সিলগালার মাধ্যমে চিকিৎসা অনুষদের ডিনের কাছে জমা দেওয়া। এরপর চিকিৎসা অনুষদের ডিন বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্নপত্র সরবরাহের জন্য চার সদস্যের একটি গোপনীয় টিম নিয়োগ করেন। যারা নির্বাচিত প্রশ্নপত্রটি প্রিন্টিং এবং প্যাকিংয়ে নিযুক্ত থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী প্রশ্নপত্রগুলো প্রিন্ট করে আলাদা আলাদা প্যাকিং করে তার ওপরে কেন্দ্রের নাম লিখে সিলগালা করে দেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই প্রশ্নপত্রগুলো বিভিন্ন কেন্দ্রে বিতরণ করেন।

তিনি আরও জানান, এই চক্রের মূলহোতা ফরিদা খাতুন। তিনি রাজধানী মহাখালীর একটি নার্সিং কলেজের Comprehensive Nursing and Pathphysiology বিষয়ের প্রশিক্ষক। প্রায় ১০ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং ও প্যাকিংয়ের দায়িত্বে থাকেন। চক্রের অপর সদস্য গ্রেফতার নার্গিস ও মনোয়ারা বেগম তার অন্যতম সহযোগী। তারা পরস্পর যোগসাজসে বেশ কিছুদিন যাবৎ শিক্ষকতার আড়ালে ওই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছেন। গ্রেফতার ফরিদা খাতুন গত ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় চিকিৎসা অনুষদের ডিন কর্তৃক নির্বাচিত চার সদস্যদের গোপনীয় টিমের একজন সদস্য ছিলেন। গত ১৩ আগস্ট গ্রেফতারকৃত নার্গিস ও মনোয়ারা বেগম ফরিদা খাতুনের নিকট Comprehensive Nursing and Pathphysiology পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেন। পরবর্তীতে তাদের এই চক্রের আরেক সদস্য প্রশ্নপত্রটি গ্রেফতার ইসমাইলের মাধ্যমে কোহিনূর বেগমের কাছে দেয়। এ সময় ইসমাঈল কিছু কপি নিজের কাছে রেখে দিয়ে অর্থের বিনিময়ে তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে সরবরাহ করে। কোহিনূর বেগম ও আরিফ প্রশ্নপত্রটি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিকট অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরীক্ষার পূর্বেই প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেন।

গ্রেফতার ফরিদা, মনোয়ারা, নার্গিস বিগত প্রায় ১০ বছর যাবত একটি নার্সিং কলেজের প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত। তারা ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নার্সিং কলেজসমূহের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটি, মডারেটর ও ডিন কর্তৃক নির্বাচিত প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং এবং প্যাকিং এ নিযুক্ত গোপন টিমের সদস্য ছিলেন। গ্রেফতার কোহিনুর বেগম ২০০৮ সাল হতে ঢাকার একটি সরকারি নার্সিং কলেজে নার্সিং প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে অবসরে যাওয়ার পর একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজে প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগদান করেন।

গ্রেফতার ইসমাঈল হোসেন রাজধানীর একটি নার্সিং কলেজের সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত এবং গ্রেফতার আরিফ ঢাকার একটি নার্সিং কলেজের Post Basic B.Sc in Nursing এর প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তারা গত ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিত Comprehensive Nursing and Pathphysiology বিষয়ে প্রশ্নপত্রটি ফাঁস চক্রের অন্যতম সদস্য কোহিনূর বেগমের কাছ থেকে সংগ্রহপূর্বক বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের নিকট অর্থের বিনিময়ে সরবরাহ করে। গ্রেফতার আরিফ ২০১৭ সালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অপরাধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গ্রেফতার হয়েছিল। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষা, সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ৪ শতাধিক প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

ইউকেবিডিটিভি/ বিডি / এমএসএম

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102